ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

নিয়মিত সরকার ছাড়াই চলছে, চলেছে যেসব দেশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
নিয়মিত সরকার ছাড়াই চলছে, চলেছে যেসব দেশ! নিয়মিত সরকার ছাড়াই চলছে, চলেছে যেসব দেশ!

ঢাকা: আধুনিক গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে, জনগণ নেতা নির্বাচন করবে আর নেতারা দেশ শাসন করবে। কিন্তু ২০১৮ সালের শুরুতেই ইউরোপের দেশ আয়ার‌ল্যান্ড সরকারহীন। জার্মানিও দৃশ্যত সংবিধান মোতাবেক ঠিকঠাক সরকার নিয়ে চলছে না। নানা জোড়াতালির পথ ধরে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে মজবুত অর্থনীতির দেশগুলোর একটি বলে বিবেচিত আঙ্গেলা মেরকেলের দেশ।

এছাড়া সরকারহীন অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে বা যেতে হয়েছে, এমনসব দেশের তালিকায় গরিব অনুন্নত দেশের চেয়ে উন্নত ইউরোপীয় দেশই বরং বেশি। তালিকায় স্পেন, বেলজিয়াম ও ইতালির নামও আসবে।

একেক দেশকে একেক রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এসময় সরকারহীন বা নিয়মতান্ত্রিক সরকার ছাড়াই তাদের চলতে হয়েছে।  
 
পাঠক, অবাক হবেন না। যা বলছি তাই সত্য। আর তা যেহেতু সত্য, আধুনিক গণতন্ত্রের প্রতি এই মৌলিক প্রশ্নটা তো ছুড়ে দেয়াই যায়;‘নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতানেত্রী বা সরকার ছাড়া কি আমাদের চলবেই না?’ বিদেশি সংবাদসূত্র অনুসরণ করে তুলে ধরা হলো কয়েকটি দেশের সরকারহীন অচলাবস্থার চিত্র।

‘স্টোরমন্ট নামে’ পরিচিত উত্তর আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভবন

উত্তর আয়ারল্যান্ড
আজ থেকে ১২ মাস আগে ইউরোপের দেশ উত্তর আয়ার‌ল্যান্ডের মানুষ হঠাৎই দেখলেন, তাদের দেশে নিজেদের সরকার বলতে কোনো কিছু আদৌ নেই। জ্বালানি ইস্যুতে ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার মার্টিন ম্যাকগিনেস  পার্লামেন্টের অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে যাবার জের ধরে সরকারই ভেঙে যায়।  

সে সময় ক্ষমতাসীন জাতীয়তাবাদী দল ইউনিয়নিস্ট পার্টির সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছিল এখনও তা মেরামত করা যায়নি।  

দৃশ্যত সরকারহীন অবস্থায় উত্তর আয়াল্যান্ড তাহলে চলছে কিভাবে? চলছে আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে। তবে তা চালাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা নন, এমপিরা নন, বরং সরকারি আমলারা। সরকার না থাকলেও সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্ম তারাই চালাচ্ছেন। আর সরকার যেহেতু নেই সেক্ষেত্রে বাজেট তো আর আমলারা তৈরি, উত্থাপন বা পাস করতে পারবেন না। তাহলে? সেটা অবশ্য চাপিয়ে দেয়া হবে লন্ডন থেকে।  
অবস্থাটি অভিনব আর নজিরবিহীন হলেও আমলারা কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক চালিয়ে নিচ্ছেন। কোনো সেবাখাতে জটিলতা দেখা যায়নি বা কোনো ব্যবস্থা মুুথুবড়েও পড়েনি। সবকিছু চলছে সেই আগেরই মতো ঠিকঠাক।  
রাজনীতি-বিমুখ মানুষজন তাই প্রশ্ন করছেন, এতো এতো নেতানেত্রী আর সরকার টরকার দিয়ে কাজ কি আসলে! আমলারাই তো যথেষ্ট!

জার্মান ফেডারেল পার্লামেন্ট বুন্ডেস্টাগ ভবন

জার্মানি চলছে নিয়মতান্ত্রিক সরকার ছাড়াই
জার্মানির উদাহরণটা এখানে আসতেই পারে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ইনক্লুসিভ ফেডারেল নির্বাচন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেনি সেখানে। একটা সমাধানে পৌঁছার জন্য রোববার সংলাপ শুরু হলেও সরকার মন্ত্রীদের ক্ষমতা গ্রহণ করতে করতে আরো কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। কিন্তু তাতে করে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা। মন্ত্রীদের কোন ক্ষমতা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবেন বা আদৌ পারবেন কিনা, এসব প্রশ্নও সামনে চলে আসছে। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশের সঙ্গে আলোচনায় রফা করার বা সিদ্ধান্ত  
নেবার ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে সমস্যা।  

বেলজিয়ামের ৫৮৯ দিনের সরকারহীন অচলাবস্থা
বেলজিয়াম ২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট ৫৮৯ দিন কোনো নির্বাচিত সরকার ছাড়াই চলেছে। এতো দীর্ঘ সময় কোনো আধুনিক উন্নত দেশের এভাবে সরকার ছাড়া চলার নজির নেই।  
 স্পেন ২০১৬ সালের প্রথম ১০টি মাস ঠিক এরকম অবস্থায়ই ছিল। তবে সে অচলাবস্থা থেকে দেশটি মুক্তি পায় বিরোধী সমাজবাদীদের বদান্যতায়। তারা পক্ষে ভোট দেয়ায় রক্ষণশীলরা সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়।  

কথা ছিল ২০১৬ সালে সোমালিয়ায় গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে।  কিন্তু তা হয়নি।

সোমালিয়ায় অরাজকতার ১৫ বছর
এতো গেল উন্নত ইউরোপের কথা। ইউরোপের বাইরেও এমন অনেক দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে আছে। আফিকার দেশ সোমালিয়া ১৯৯০ এর দশক এবং ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে মোট ১৫ বছর কোনো সরকার ছাড়াই চলেছে। গোত্রদ্বন্দ্ব, সংঘাত-সহিংসতা, গৃহযুদ্ধ, জলদস্যুতা আর ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে জিম্মি ছিল দেশটি ও এর জনগণ।

রাজনৈতিক টানাপোড়েনে কাহিল জার্মান নেত্রী আঙ্গেলা মেরকেল 

২০১০ সালে ইরাকের রাজনৈতিক শূন্যতা 
ইরাকও ২০১০ সালের বেশিরভাগ সময় এভাবেই পার করেছে। মার্কিন বাহিনী তাদের উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়ার পর নানাবিধ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দেশটি। মাঝখানে আইসিস এসে নৈরাজ্য কায়েম করে বসে। । তবে এখন তারা তা সামলে উঠেছে।

ইতালিতে মারিও মোন্তির টেকনোক্রেটিক সরকার
আবার আসা যাক ইউরোপের কথায়। সাংবিধানিক সংকটজনিত অচলাবস্থা দেখা দিলে ইউরোপের কিছু কিছু উন্নত দেশে তা মোকাবেলায় ‘টেকনোক্রেটিক গভর্নমেন্ট’ গঠন করে সংকট সামাল দেয়ার ব্যবস্থা আছে। যেমনটি হয়েছিল ২০১১ ও ২০১৩ সালে ইতালিতে, মারিও মোন্তির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে।
প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লোসকোনির সরকারের পতনের পর উদ্ভূত অচলাবস্থা সমাধানের পথ খুজে বের করার দায়িত্ব বর্তেছিল রাজনীতিবিদদের বদলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাঁধে। তারা সুন্দর ফরমুলাও বের করেন। মারিও মোন্তির সরকারই তার প্রমাণ।  

আর কতোকাল হাবুডুবু খাবে আয়ারল্যান্ড?
ফিরে আসা যাক উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রশ্নে। দেশটির জন্য শিক্ষনীয় কি আছে? যতো যাই হোক, সমাজকাঠামো তো আর ভেঙে পড়বে না! এটাই সবচে বড় সুখবর। তবে তার দু:খের কথা এই যে, সে অনেকাংশেই পরিচালিত হবে সীমান্তের ওপার থেকে।  

সময়টা খুব জটিল। কেননা ব্রেক্সিট নিয়ে দরকষাকষির এই সময়ে আয়ারল্যান্ডকে পার করতে হবে কঠিন সময়। টেরিজা মের সংখ্যালঘু সরকারের আপারহ্যান্ডকেও মেনে চলে চলতে হবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। আর আমলাদের হাতে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার কুফলও সামলাতে হবে। কেননা তারা জবাবদিহিতা ছাড়াই সব কিছু চালাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেবার পথে পা বাড়াবে বা বাড়াতে শুরু করেছে তারা। এসব দেশটিকে ভোগাবে।
তবে এই রাজনৈতিক শূন্যতা উত্তর আয়ারল্যান্ড ঠিকই কাটিয়ে উঠবে। তবে তা যেন বেলজিয়ামের মতো ৫৮৯ দিনের মতো দীর্ঘ না হয়। কেউ কেউ আশাবাদী আবার কেউ কেউ বলছেন সংকট আরো দীর্ঘ হবে যদি ওয়েস্ট মিনস্টার সরাসরি কেন্দ্রের শাসন চাপিয়ে দেয়। কী হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ আপাতত খোলা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।