পরে পুলিশ ‘ব্রিথালাইজার’ এ তার নিঃশ্বাস পরীক্ষা করে। পরীক্ষায় দেখা যায়, তার রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ শূন্য দশমিক দুই শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার চেয়ে দুই দশমিক পাঁচ গুণ বেশি।
কিন্তু সব অভিযোগ অস্বীকার করে মদ পান করেননি বলেই দাবি করছিল লোকটি। তবে তাকে বিশ্বাস করছিলেন না চিকিৎসকেরা।
পরে, নিউ ইয়র্কের রিচমন্ড ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা ওই ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তির ওপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। তাদের পরীক্ষায় প্রমাণ হয়, লোকটি আসলে সত্যি কথাই বলছিলেন। তিনি কোনো ধরনের মদ পান করেননি।
পরীক্ষায় তার পাকস্থলীতে ‘ইস্ট’ পাওয়া যায়। তিনি শর্করা জাতীয় খাবার খেলেই তা পেটে গিয়ে ইস্টের মাধ্যমে মদে পরিণত হয়! সাধারণত গাঁজন প্রক্রিয়ায় শর্করা থেকে মদ জাতীয় পানীয় তৈরি হয়। ওই লোকটির পেটে থাকা ইস্ট গাঁজন প্রক্রিয়ায় শর্করা থেকে মদ তৈরি করছে। এজন্যই মদ পান না করার পরেও তার রক্তে মদ পাওয়া গেছে।
বিএমজে ওপেন গ্যাস্ট্রোনোমির এক গবেষণা প্রতিবেদনে লোকটির পরিচয় গোপন রেখে বলা হয়, তার অটো-ব্রুয়ারি সিনড্রোম (এবিএস) নামে বিরল এক রোগ আছে। একে ‘ফারমেন্টেশন সিনড্রোম’ও বলা যায়।
গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান ফাহাদ মালিক বলেন, মদ্যপ ব্যক্তিদের শরীরের গন্ধ, নিঃশ্বাস, তন্দ্রাচ্ছন্নতা ও চলাফেরার এলোমেলো ভঙ্গি- এর সবই লক্ষ্য করা যায় এবিএস রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও।
তাদের দেখে যে কেউ মনে করবে তারা নেশাগ্রস্ত। তবে, ‘অ্যান্টিফাংগাল’ ওষুধের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা করা সম্ভব। একইসঙ্গে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে বা কমাতে হবে।
এরকম বেশ কয়েকজন ব্যক্তি পাওয়া গেছে যাদের এবিএস রোগ আছে। পরীক্ষায় তাদের বৃহদান্ত্রে বিয়ার, ওয়াইন ও রুটি তৈরির ইস্টসহ অন্য ছত্রাক থাকার প্রমাণ মিলেছে।
প্রথম যে ব্যক্তিকে নিয়ে কথা হচ্ছিল, তিনি এ রোগ নিয়ে জন্মাননি। তিন বছর আগে বুড়ো আঙুলে আঘাত পেয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেন। গবেষকরা বলছেন, ওই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরই তার বৃহদান্ত্রে ইস্টসহ অন্য ছত্রাক জন্মায়।
রোগ ধরা পড়ার পর তিনি রিচমন্ড ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলেন প্রায় দেড় বছর। এরপর তিনি অনেকটাই সুস্থ হন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করেন।
ফাহাদ মালিক বলেন, একসময় এই রোগটিকে ‘মিথ’ মনে করা হতো। এনিয়ে খুব বেশি গবেষণাও হয়নি।
গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখকরা বলছেন, রক্তে মদের প্রমাণ মিললেও কোনো ব্যক্তি যদি মদ খাওয়ার ব্যাপারটি বারবার অস্বীকার করে, তাহলে চিকিৎসকদের উচিত ওই ব্যক্তির এবিএস রোগ আছে কি-না তা পরীক্ষা করা।
যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে এনিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
এফএম/এসএ