সিরাজগঞ্জ: “পালকি” গ্রাম বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী বাহন। রাজ-বাদশাহর আমলে রানি কিংবা রাজকন্যাদের বাহন ছিল পালকি।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই পালকি। এখন শিশু-কিশোরদের ছড়া-কবিতার বই ছাড়া পালকির কথা কোথাও শোনা যায় না।
দীর্ঘদিন পর হারিয়ে যেতে বসা পালকিতে চড়ে বিয়ে করলেন সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী চর ব্রাহ্মনগাঁতী গ্রামের যুবক সবুজ ইসলাম। বাবা শফিকুল ইসলামের স্বপ্ন পূরণে চার বেহারার পালকিতে চড়েই বিয়ে করতে গেলেন তিনি। বিষয়টি এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবার্টী ইউনিয়নের চর মিরাখোর গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের মেয়ে জলি খাতুনকে বিয়ে করেছেন সবুজ ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে বর পালকিতে চড়ে এসেছেন। এতে এলাকাবাসীও অবাক হয়েছে। ছেলে-বুড়োরা পালকি দেখতে ভিড় করেন। পালকিতে বরযাত্রা দেখতে এ সময় বিয়েবাড়ি ও আশপাশের সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভিড় করেন উৎসুক জনতা। ডিজিটাল যুগে পালকিতে চড়ে বিয়ে দেখে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
বর সবুজ ইসলাম বলেন, বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই পালকিতে চড়ে বিয়ে করেছি। পালকি আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ছিল এক সময়। যদিও সেটি এখন আর চোখে পড়ে না। প্রাইভেটকারসহ ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করেছি অনেক। কিন্তু পালকিতে চড়ে অনেক মজা পেয়েছি। বিশেষ করে চার বেহারা ছন্দে ছন্দে পালকি বয়ে চলেছেন-এটা বেশ ভালো লেগেছে।
বরের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দাদির স্বপ্ন ছিল তার নাতি অর্থাৎ আমি যেন পালকিতে চড়ে বিয়ে করি। কিন্তু আমার বিয়ের সময় বন্যা হওয়ার কারণে সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। দাদি মারা গেলেও তার কথা সব সময় মনে হতো আমার। তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই, আমার বড় ছেলেকে পালকিতে চড়িয়ে বিয়ে করাব। অনেক খুঁজে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর এলাকা থেকে ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় পালকি এনেছি। প্রথমে আমি ও আমরা স্ত্রী নিজ এলাকায় পালকিতে চড়ে ঘুরেছি। তারপর আমার ছেলেকে বর সাজিয়ে বিয়ে করাতে গেছি।
বেহারাদের সর্দার পরেশ দাস বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর পালকির জন্য তেমন ডাক পড়ে না। তবে মাঝে মধ্যে ডাক পেলে খুব ভালো লাগে। সারা বছর কৃষিসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও পালকির জন্য ডাক পড়লেই সঙ্গীরা ছুটে আসে। প্রতিটি বরযাত্রায় দুই হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
এসআই