ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ফিরে দেখা-২০১৪

দক্ষিণ এশিয়ার ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো

শাহাদাৎ তৈয়ব/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫
দক্ষিণ এশিয়ার ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো

২০১৪ সাল বিদায় নিলো। নতুন বছরের আগমন হলো।

বিদায় নেয়া বছরটিতে অনেক কিছু ঘটে গেলো দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পর‌্যায়ে। বিশেষত এশিয়ার রাজনীতি, বাণিজ্য-অর্থনীতি, ধর্মীয় ইস্যুসহ বেশকিছু ঘটনা ছিলো খুব বেশি আলোচিত। এসবের মধ্যে ছিলো ভয়ঙ্কর কিছু অভিজ্ঞতাও। সারাবিশ্বে যা ব্যাপক আলোচনার বিষয় ছিলো। সেরকম কিছু ইস্যুই এখানে তুলে ধরা হলো।

রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা। সারাবিশ্বে যাদেরকে ‘রাষ্ট্রহীন’, ‘ভূমিহীন’ ‘প্রান্তিক’, ‘হতদরিদ্র’, ‘ভিক্টিম’ বিশেষণ দিয়েই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। মিয়ানমারের এই সংখ্যালঘু মোসলমানরা এমন এক জনগোষ্ঠী যাদের রয়েছে ভয়াবহ পরিচয়ের সংকট। তারা যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার স্বীকার তার চেয়েও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামোতে তাদের পরিচয়ের সংকট অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।      

নিজ দেশে থেকে তাদের রীতিমতো নিজেদের দাবি দাওয়া ও অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলাও একপ্রকার নিষিদ্ধ। একইভাবে তাদের বিয়েশাদি ও শিক্ষার অধিকারসহ সামাজিকভাবে বিভিন্ন মর‌্যাদাপূর্ণ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কথা রীতিমতো ভাবাই যায় না।   

সাম্প্রতিক সময়ে গত ২০১৪ ছিলো তাদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ একটি বছর। বেশ কয়েকটি দাঙ্গা ও সহিংসতার শিকার হয় এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এসব দাঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও প্রতিবাদও হয়েছে অনেক। এছাড়া গেল বছরটিতে মিয়ানমারে হয়ে যাওয়া আদমশুমারিতে নাগরিক হিসেবে বিবেচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদেরকে রোহিঙ্গা হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়নি।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস এমএইচ১৭
গেল বছরে দুনিয়াব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস এমএইচ১৭ এর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা। ২০১৪ এর মার্চের ৮ তারিখে বিমানটি কুয়ালা কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং এর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই এর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে হারিয়ে যায়। এ সময় বিমানটিতে ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন কেবিন ক্রু ছিল। টানা প্রায় চারমাস ধরে আটলান্টিক-প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে অনুসন্ধান চালিয়েও বিমানটির কোনো হদিস করা যায়নি।

বিমানটির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে রীতিমতো রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। হয়েছে বহু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। সন্ত্রাসী তৎপরতা থেকে শুরু করে কোনো অজানা গ্রহের এলিয়েনরা নিয়ে গেছে বিমানটি— এরকম বহু কথাও বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়। শেষপর‌্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বিমানটির। পাওয়া যায়নি কোনো ধ্বংসাবশেষও। ২৩৯ জন যাত্রীর অজানা রহস্যময় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অকূল শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেলো বিমানটি।   

ইউক্রেন সীমান্তে বিধ্বস্ত মালয়েশিয়ার অপর বিমান
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস এমএইচ১৭ এর মর্মান্তিক ঘটনার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আরেকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হলো মালয়েশিয়ার একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমান। ১৭ জুলাই বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত ২৯৫ জন আরোহী নিয়ে পূর্ব ইউক্রেনে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। এতে বিমানটির ২৯৫ জন যাত্রীর সবাই নির্মমভাবে নিহত হয়।   

রহস্যময় প্রধান বাণিজ্য নির্বাহীরা

দাতুক আহমেদ জওহারি ইয়াহইয়া
গেল বছরটিতের অর্থনীতির দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রভাশালী যেকজন সিইও’র নাম আলোচিত হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সিইও দাতুক আহমেদ জওহারি ইয়াহইয়া।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ১৭ এবং বোয়িং ৭৭৭ বিমান এর মতো এমন দুটি বিমান দুর্ঘটনার পরও আহমেদ জওহারি স্বপদে বহাল রয়েছেন। ভয়াবহ ধকল সামলিয়ে জওহারি তার দক্ষতা ও নেতৃ্ত্বের গুনেই মালয়েশিয়ার লিডিং এই বিমান কোম্পানিটিকে আবারো দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।   

ক্যাজ হিরে
ক্যাজ হিরে হলেন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রভাবশালী বহুজাতিক কোম্পানি ‘সনি’র সিইও। গত ২০১৪ ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক এক সময়। ভয়াবহ সাইবার এ্যাটাকের শিকার হন তিনি। সবমিলিয়ে গেল কয়েক বছরে তিনি কয়েক বিলিয়ন ডলার লোকসান দেন। রীতিমতো প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কোনো না কোনোভাবে সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় ছিলেন ক্যাজ হিরে। তারপরও টিকে গেলেন।  

তবে শেষপর্যন্ত ক্যাজ হিরে আরো মারাত্মক শিরোনাম হয়ে ওঠেন। তিনিই কিনা এতসব ইমেইল হ্যাক করার আসল গুরু। এ ঘটনার পর উত্তর কোরিয়ার বংশোদ্ভূত এই বাণিজ্য তারকা মারাত্মক সন্দেহের মুখোমুখি হয়েও এখনো তার পদেই বহাল তবিয়তে আছেন। তবে ক্যাজ হিরে এবং তার হলিউডের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সনি পিকচার্সের মধ্যে বেশ ভালো উত্তেজনা চলছে।     

হিরে শেষতক চীনের জ্যাক ম্যাকে ডিঙ্গায়ে যেতে পারেননি। জ্যাক ম্যাকে বলা হয় চীনের ই-কমার্সের পথিকৃৎ। আরো একধাপ এগিয়ে তাকে আলিবাবাও বলা হয়। এই ধনকুবেরের জীবনে গত বছরটি ছিলো সবচেয়ে আনন্দময় এক সফলতম বছর। কারণ ২০১৪ ছিলো ছিলো তার চীনের অন্যতম বড় পুঁজিপতি হওয়ার সময়।  

দা আম্ব্রেলা ম্যান
গেল বছরে এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন ধরনের আলোচনার বিশয় ছিল হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের অকুপাই মুভমেন্ট। পিপার স্প্রে আর টিয়ার গ্যাসও দমাতে পারেনি তরুণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে।  

শুধু প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন নয়,  নতুন ধারণা নিয়ে শিল্প মাধ্যমেও এক নতুন বিপ্লব নিয়ে এসেছে গণতন্ত্রের ডাক দেয়া এই শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু এ আন্দোলনের মূল প্রতীক দা আম্ব্রেলা ম্যানকে ঘিরে আলোচনা ছিলো বেশ সরব। পপ কালচারের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত নানা শিল্পকর্মের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাইশ বছর বয়সি শিল্পি মিল্ক টিসাংয়ের এই ‘দা আম্ব্রেলা ম্যান’। কাঠ দিয়ে তৈরি এই ভাস্কর্য।

২০১৭ সালে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে  চীনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে নতুন এই গণতন্ত্রপন্থীরা। তাদের অভিযোগ হলো, হংকংয়ের বর্তমান প্রধান নির্বাহী সি ওয়াই লিয়ুংয়ে চীনের কাছে নতজানু নীতি অনুসরণ করছে। আর তাদের পুরো আন্দোলনের এই মনোভাবই ফুটে উঠেছে দা আম্ব্রেলা ম্যানে—মানে হংকংয়ের রাজপথ ভরে যাওয়া ছাতায় ছাতায়।

থাইল্যান্ডের জরুরি অবস্থা
গেল বছরের শুরুর দিকে এশিয়ার রাজনীতিতে আরেক মারাত্মক ঘটনা ছিলো থাইল্যাণ্ডে জরুরি অবস্থা জারি। ৬০ দিনের জন্য এ জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা রাজধানী অচলের আন্দোলনের মধ্যে এ জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত দেশটির সরকার।

ইংলাক বিরোধীরা দেশটিতে প্রায় এক থেকে দেড় বছরের আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছিল কিন্তু শেষ পর‌্যন্ত বিরোধী দলগুলো জরুরি অবস্থা জারির ফলে সিনাওয়াত্রার কাছে হেরে যায়।

পাকিস্তানে জঘন্যতম শিশু হত্যা
২০১৪ সালের শেষ দিকে এসে ১৬ ডিসেম্বর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে পাকিস্তানে। তালেবানদের হামলায় দেশটির একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১৩২ জন শিশু-কিশোরসহ ১৪৮ জনকে হত্যা করে।

ইন্দোনেশিয়ায় বিমান দুর্ঘটনা
সবশেষে গেল বছরটি শেষ হলো এশিয়ায় আবারো বিমান দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। ১৬২ আরোহীর সবাই নিহত হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে বিমানটি। এরপর সকাল ৭টা ২৪ মিনিটের পর থেকে সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেললে এ ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।