ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রিন্স মূসাঃ রহস্যের এক অমর জীবন

প্রবীর নিয়োগী, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
প্রিন্স মূসাঃ রহস্যের এক অমর জীবন

যুগে যুগে বিভিন্ন সমাজে অতি মহৎ গুণাবলী নিয়ে কিছু মানুষের মর্তে আগমন ঘটে। শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও তারা সত্য-পথ আঁকড়ে ধরে থাকেন।

আকাশের মত ঔদার্য্য আর সমুদ্রসম জ্ঞানভাণ্ডার নিয়ে তাদের এ ধরায় আগমন। তাদের কেউ মালা পরাবে, কেউবা তাদের ঈর্ষা করে নিন্দা ছড়াবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে এসব মহৎ জীবন নির্বিকার থাকেন। এহেন শান্তির দূত, নির্মোহ পুরুষোত্তম বঙ্গসন্তান সত্যিই বিরল।

আণবিক বোমার কলঙ্ক নিয়ে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের বিভীষিকাময় এ বছরের শেষে বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিরাট সম্ভাবনাময় এক সন্তানের আগমন ঘটে। আজকের বিশ্বনন্দিত প্রিন্স মূসা বিন শমসের হলেন সেই বিরল বঙ্গসন্তান। নন্দিত এ রহস্যের বরপুত্র বহু গুণবাচক আখ্যায় বিশ্বময় সমধিক পরিচিত ও সমাদৃত। ৮০ দশকে প্রিন্স মূসা বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে বিশ্বের সর্ব কনিষ্ঠ ধনকূবের আখ্যায় ভূষিত হলে তার মাতৃভূমি- বাংলাদেশের মর্যাদা এক লহমায় আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে।

কালের চক্রে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৯৫মত জন্ম-বার্ষিকীতে দৈনিক ইত্তেফাকে তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা নিয়ে এক তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধুর মানসপুত্র মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ‘অবিনাশী এক পরশ পাথর’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে এ লেখাটি। ১৯৩৯ সনে ছোট বেলায় শেখ মুজিব যে ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তৎকালীন জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্যদের চমকে দিয়েছিলেন তার জীর্ণশীর্ণ স্কুলের সাহয্যের জন্য ঠিক তেমনি অভূতপূর্ব এক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বালক মূসা বিন শমশের। বঙ্গবন্ধুর বাল্যের অসীম সাহসিকতা আর বিশ্বনন্দিত ধনকূবের ড. মূসা বিন শমশেরের স্কুল জীবনের অসীম সাহসিকতাপূর্ণ বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে অপূর্ব মিল।

২০১৫ বই-মেলায় প্রকাশিত ড. কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুদিত জীবনী গ্রন্থ ‘প্রিন্স মূসা: আধুনিক সভ্যতার মূর্ত প্রতিক ও রহস্যের বরপুত্র’ সংকলনে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম হলো ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো। ’ এ পর্বে কিশোর মূসার বিদ্যালয় জীবনের চিন্তা চেতনা ও অসীম সাহসের এক অবিশ্বাস্য ঘটনার ছবি ফুটে উঠেছে। প্রাসঙ্গিকভাবেই ড. কনিকা বলেন, ‘সাফল্যের বরমাল্য পরতেই শিশু মূসার পৃথিবীতে আগমন। কিশোর বেলায় অন্য বালকেরা যখন স্বভাব-সুলভ চপলতা আর দুষ্টুমিতে মশগুল, তখন বালক মূসা গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতো। পড়া-লেখায় ছিলো মেধাবী। শিক্ষক ও শ্রদ্ধাভাজনরা তার বাকপটুত্বে মুগ্ধ হত। আর সবাই বুঝে নিতেন এ বালক একদিন পৃথিবীকে জয় করবে। বাঙ্গালী জাতির সুনাম ছড়িয়ে দেবে জগৎময়। বাস্তবে এমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল কিশোর মূসা। তিনি আরো বলেন, অনিবার্য কারনেই মূসার স্কুলে ভর্তি বয়সের তুলনায় বেশ বিলম্বিত হয়। তখনকার বয়সে ফরিদপুর শহরে সে এক অতি সাধারণ স্কুলে পড়ালেখা করতো।   এই মূসাই একদা তদানিন্তন সমগ্র পাকিস্তানের জুনিয়র গ্রুপের শ্রেষ্ঠ ইংরেজী বিতার্কিক হয়। তার ছাত্রাবস্থায় স্কুলের পাকাভবন ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীদের বসার ভালো বেঞ্চও ছিল না। বালক মূসা মনে মনে কষ্ট পেলেও কাউকে কিছু বলতো না। ১৯৬০ সনের শেষের দিকের এক চমকপ্রদক ঘটনা। তৎকালীন প্রাদেশিক গভর্নর জেনারেল আজম খান পূর্বনির্ধারিত সফরে ফরিদপুর শহরে যাচ্ছেন। বালক মূসা তার বিদ্যালয়ের পাশের যে রাস্তা দিয়ে গভর্নর অতিক্রম করছিলেন ঠিক সেই  গভর্নর সাহেবের পথ আগলে দাঁড়ালেন এবং তার সামরিক বাহিনীর গাড়ির বহর রোধ করে একটি ফুলের মালা হাতে নিয়ে সমস্ত প্রোটোকল ভেদ করে গভর্নরকে বাধ্য করলেন তাঁর চলার পথে কিছুটা সময় দিতে। মূসা বললেন Your Excellency, I need to talk to you. Please allow me.  তাৎক্ষনিকভাবে গভর্নর সাহেব অকতোভয় মূসার অনুরোধে সাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তাঁর হাত ধরে স্কুলে প্রবেশ করলেন। সে এক ঐতিহাসিক বিজয় যেন!

বালক মূসা তার নিজ স্কুল ও ফরিদপুরের আরো তিনটি স্কুলের জন্য গভর্নর সাহেবের কাছ থেকে বিশেষ অনুদানের মঞ্জুরী আদায় করলেন। গভর্নর আযম খান তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে পরে কথা প্রসঙ্গে এই বিস্ময়কর বালকের ঘটনা জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে এলে ঢাকার স্টেট গেস্ট হাউজে দাওয়াত দিয়ে তাকে আপ্যায়ন করেন। জীবনে বড় হবার সেই আশীবার্দ লক্ষ কোটি তরুণ কিশোর-কিশোরীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে যায়। স্টেট গেস্ট হাউজে সে সময়কার পশ্চাৎপদ বাঙ্গালীদের প্রবেশাধিকারের সুযোগ ছিল না। অথচ কিশোর মূসা প্রেসিডেন্টের মেহমান হয়ে স্টেট গেস্ট হাউজে গিয়েছিলেন। সারা দেশে তখন এ নিয়ে হাজারো গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল।

দুঃসাহসী মূসা বিন শমশেরকে নিয়ে পরবর্তী ঘটনা আরো চাঞ্চল্যকর। সালটা মনে নেই,তবে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর তখন মোনায়েম খাঁন। পাকিস্তান শিক্ষা সপ্তাহের সমাপনী দিনে গর্ভনর হাউজে ছিল রাষ্ট্রীয় নৈশ ভোজ। মূসা ছিল সেই অনুষ্ঠানে অতিথি। ঐ দিনই বিকালে গর্ভনর মোনায়েম খাঁনের কাছ থেকে স্বর্ণ পদক ও বিজয়ের মালা গ্রহন করেছিলেন মূসা। গর্ভনর হাউজে সন্ধা ৭.৩০ ঘটিকায় গর্ভনর রাষ্ট্রীয় অতিথিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন। ঠিক প্রথম সারিতে তৎকালীন মন্ত্রী দেওয়ান আব্দুল বাসেত, শিক্ষা মন্ত্রী আমজাদ হোসেন ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি ড. এম.ও গণির সঙ্গে অতি আদরের সাথে বসে ছিলেন মূসা। গর্ভনর লিখিত বক্তব্য পেশ করছিলেন। ঔ সময়টা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলনের এক উত্তপ্ত সময়। হঠাৎ করেই তিনি স্ক্রিপ্টের বাইরে দেশের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা অভিভাবকদের ডেকে এনে তাদের ছেলে মেয়েদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলবে।

অবিভাবকরা যদি কথা না শুনে, তবে তাদেরকেও ধরে এনে বেত মারবে। গর্ভনরের এ অভাবিত আদেশের ফলে হলে নীরবতা বিরাজ করছিল। হঠাৎ সবার অজান্তে মূসা বীরদর্পে সমস্ত নিরবতা ভেঙ্গে প্রথম সারি থেকে লাফিয়ে উঠে দাড়িয়ে চিৎকার দিয়ে বললেন, Objection Mr. Governor. You owe an unconditional apology to this distinguished audience for your barbaric remarks. তার এ অভাবিত প্রতিবাদে সমস্ত দরবার যেন স্তদ্ধ হয়ে পড়লো। সুচতুর গর্ভনর কোন প্রতিক্রয়া না দেখিয়ে মুহুর্তেই বলে ফেললেন, ok my son, I am sorry। অন্যদিকে কোন বিলম্ব না করেই গর্ভনরের মিলিটারী সচিব বিগ্রেডিয়ার মাসহুরুল হক মূসার প্রতি রুষ্টভাবে তাকালেন। নির্ভীক মূসা তাকে লক্ষ্য করে বললেন,  Hey would be general. don’t stare at me better you look at your boss. 
 ১৯৫৪ সালের, নবগঠিত আওয়ামী লীগ মন্ত্রীসভার তরুণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জে সরকারী সফরে যান। পথিমধ্যে ফরিদপুর শহরে প্রিন্স মূসার জ্ঞানতাপস পিতা স্বর্গীয় এম.শমশের আলীকে সালাম জানাতে মন্ত্রী সাহেব ফরিদপুরে যাত্রাবিরতি করেন। সে সময়ের বিশিষ্ট দুই সাংবাদিক এ.বি.এম. মূসা ও গোলাম রসুল মল্লিক তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। বুদ্ধিদীপ্ত এক চঞ্চল বালক উৎসুকভাবে অতিথিদের আসেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্ধানী চোখ নিয়ে মন্ত্রী মহোদয় তার দিকে মাঝে মাঝে অবাক দৃষ্টিতে চোখ ফেলছিলেন। তিনি সাংবাদিক মূসাকে বললেন, ছেলেটি অতিশয় মিষ্টি, তার সুকোমল চেহারায় যেন আসমানের চাঁদ ফুটে উঠেছে। তিনি স্মিত হাস্যে ছেলেটির জন্মদাতাকে বললেন, আপনার এই দারুন ছেলেটি Prodigy: জন্ম থেকেই প্রতিভাবান। চাচাজান, ওর প্রতি বিশেষ নজর রাখবেন। উত্তরে গর্বিত পিতা গল্পাকারে বললেন, “ফরিদপুর আঙ্গিনার জগৎবন্ধুর যোগ্য শিষ্য পন্ডিত মহানামব্রত আমার এক অকৃতিম ভক্তবন্ধু। আমার এ ছেলের প্রথম জন্মদিনে আশিস জানাতে এসেছিলেন। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করে বলেন, আপনার এই সন্তান কালে ঐশ্বর্য্য ও শৌর্য্যময় সব ভগবতমার্গেই বিচরণ করবে।
 
ইতিমধ্যে ইতিহাসের অনেক পানি গড়িয়েছে। তখন প্রবল আন্দোলনের মুখে পূর্ব পাকিস্তানে নানা রাজনৈতিক বিবর্তন ঘটে। ‘৬২, ‘৬৬, ‘৬৯ এবং সর্বশেষ ‘৭০-এর রক্তঝরা ছাত্র-রাজনৈতিক আন্দোলন ঘটেছিল। এসব আন্দোলনে মূসা সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। এমনকি ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলোতে মূসার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। কারণ ১৯৭১ সালের ২১ শে এপ্রিল পাক বাহিনি ফরিদপুর দখলে নেয়। পরের দিন, ২২শে এপ্রিল মূসা কয়েকজন কর্মীসহ পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হন। পরিণতিতে তাঁকে অশেষ নির্যাতন ও দুঃখ-কষ্ট বরণ করতে হয়। সৌভাগ্যক্রমে, ১৯৭১, ৯ই ডিসেম্বর পাক-বাহিনীর কসাইখানা থেকে তিনি অর্ধমৃত অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন এবং সরাসরি ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করেন।

তারপর অনেক কথা। বাংলাদেশ তখন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত। নতুন রাষ্ট্রের প্রথম পর্বেই স্বীয় উদ্যোগ, উদ্দীপনা ও বুদ্ধিমত্তাবলে তরুণ মূসা এক বিরাট সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যবসায়ীতে পরিগণিত হন । স্বাধীনতা পরবর্তী কালে মূসা বঙ্গবন্ধুর আরো অনেক অনেক গুণ বেশি বিশ্বস্ত ও স্নেহভাজন হয়ে উঠেন। এটা ঘটে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধরু ১৯৭২ সালে ১০ই জানুয়ারিতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই। এ সময়ে দূরদর্শী মূসা নিজে সুতা ও বস্ত্র ব্যবসায়ে ব্যস্ত থাকতেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নং রোডের বাসায় ঘনিষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রীদের নিয়ে বিশেষ শলা-পরামর্শে বসতেন। ৭৪ সালের শেষের দিকে বা ৭৫ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয়পাত্র তরুন ব্যবসায়ী মূসাকে ৫০০ বেল সূতা বরাদ্দ দিতে টিসিবির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি অচিরেই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ মহলে ছড়িয়ে পড়লো। কয়েকদিন আগে মাওলানা ভাসানী সাহেব বঙ্গবন্ধুর কাছে ফোন করে মাত্র ৬০ বেল সুতার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এটা ছিল এমনই একটা সময় যখন এক বেল সুতা যেন সোনার হরিণ। তখন উচ্চ মহলের অনেকের মনে একটাই প্রশ্ন উঠেছিল, বঙ্গবন্ধুর মত সৎ ও দৃঢ় চিত্তের  রাষ্ট্রপ্রধান দূর্ভিক্ষ কবলিত অবস্থায়  মূসার মত একজন সফল কোটিপতি ব্যবসায়ীর জন্য এতটা কেন করলেন। মানুষ যেখানে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে ঠিক তখনই তিনি কেন  এটা করলেন ! কিন্তু কেউ সাহস পাননি বঙ্গবন্ধুকে এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন করতে। বিভিন্ন সময় আমি ও স্বর্গীয় তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও আমাদের প্রিয় ছোট ভাই আব্দুর রাজ্জাক নিজেদের মধ্যেই এই আলোচনাটা সীমাবদ্ধ রাখতাম। কোন দিনও কারো কাছ থেকে উত্তর পাইনি।
 
পরবর্তী ঘটনা যেন অলৌকিক ভাবে তার ক্ষতিত ঘটনার সায় মিলে যায়। মনে পড়ে ঠিক সেই দিন, ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সীর (এনা) প্রধান সম্পাদক গোলাম রসুল মল্লিক আমাকে নিয়ে টিসিবির চেয়ারম্যান লেঃ (অবঃ) মতিউর রহমানের কক্ষে ঢুকলেন। দেখি, চেয়ারম্যানের সামনে টিসিবির পরিচালক (এসএনডি) তৎকালিন সিএসপি জনাব নাসির উদ্দিন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (এসএনডি) মেজর (অবঃ) রহমত উল্লাহ, আর জনপ্রিয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও এস.এম কবির বসা ছিলেন মূসার প্রতিনিধি হিসাবে। রুমে ঢুকে রসুল সাহেব তার দরাজ কন্ঠে বলে উঠলেন, টিসিবি এখন উঠতি ভাগ্যবানদের তীর্থস্থান। তার কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলেন। হাত দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে বলে চেয়ারম্যান সাহেব একটা গুরুত্বপূর্ন ফোনে কান দিলেন। ফোন শেষে চেয়ারম্যান সাহেব তার পরিচালককে লক্ষ্য করে বললেন ‘ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়’। স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রতির নির্দেশ, তাঁর বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী মূসাকে ৫০০ বেল সূতার একটি বরাদ্দ দিতে হবে।   তিনি আরো বলেন, ৭২ ঘন্টার মধ্যে বরাদ্দটি হস্তান্তর করতে হবে। পাশে বসা অন্য দুই অতিথি স্মিত হাস্যে পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন। পরক্ষনেই তিনি উপস্থিত পরিচালককে বললেন, ৫০০ বেল সুতা বরাদ্দের ফাইলটি আমার কাছে পাঠিয়ে দিন, আমি সই করে দেব।   ঠোঁটকাটা রসুল ভাই মূসার উদ্দেশ্যে বললেনঃ ভাগ্যবান তরুণ ব্যবসায়ী মূসা একজন অব্যর্থ তীরন্দাজ। সাহসী সাংবাদিক সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে বললেন, বরাদ্দটা কি বঙ্গ-বন্ধুর স্্েরহের নির্দশন না অন্য কোন রহস্য !!!। সঙ্গে সঙ্গেই রসুল ভাই নিজেই উক্তি করলেন, এটা সবারই জানা।

এভাবে চলে গেল ৪০টি বছর। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে না পারলেও বঙ্গবন্ধরু আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থিতিশীল এক নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছেন ড. মূসা বিন শমশের। তিনিই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণকারী বিস্ময়কর এক স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল পথ-প্রদর্শক। তাঁর ঋণের বোঝা বইতে হবে এই জাতিকে অনন্তকাল। এটা দেশের সব মহল গ্রাহ্য যে, উন্নয়নের প্রধান খাত জনশক্তি রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স। আর ড. মূসা বিন শমশের হলেন এই জনশক্তি রপ্তানির পথিকৃৎ ,শ্রেষ্ঠ রূপকার ও প্রবাদপুরুষ। এককথায় বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের স্থপতি। রেমিট্যান্স -প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ ও দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ। প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। আর যাঁর ক্ষুরধার মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিজস্ব প্রচুর অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে তিনি ড. মূসা বিন শমশের। তার হাত ধরেই দেশে প্রবল মুদ্রা প্রবাহ শুরু হয়। তাঁর দীর্ঘমেয়াদী বলিষ্ঠ উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে দেশে আজ বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ। বিশ্ববরেণ্য ধনকূবের মূসা বিন শমসের রাজকীয় জৌলুসপূর্ণ জীবনধারার সুবাদে আজ পৃথিবী জুড়ে প্রিন্স মুসা নামে সমাদৃত।
 
এমনি করে তিনি ১৯৭৪,৭৫ ও ৭৬ সালের মধ্যভাগ থেকেই আরবের এক রাজধানী থেকে ধুমকেতুসম উত্থান লাভ করলেন। তিনি হয়ে উঠলেন বিশ্বনন্দিত ধনবান, জ্ঞানবান, পূণ্যবান, রূপবান। অভাবিত এ মর্যাদা নিয়ে তিনি বিশ্বের সব শক্তিধর নেতা ও রাজন্য দরবারে ‘প্রিন্স মূসা’ বলে সমাদ্রিত হলেন। এই বিরল সম্মানের অধিকারী তিনি। কেনই বা হবেন না, বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন ও সামরিক বাহিনী পুনবির্ন্যাস করে এবং বিশ্ব দরবারে তাদের মাথা উঁচু করে দাড়াতে তাঁর সহযোগিতায় অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছে ঐ সব দেশকে। রক্ষনশীল মুসলিম দেশ সৌদি আরবের সাথে মস্কো, চীন এবং অন্যান্য কমিউনিষ্ট দেশের সম্পর্ক উন্নয়ণে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। দুই ইয়েমেনঃ উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেনের একত্রীকরণ, ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রীয়ার স্বাধীনতা লাভ এমনকি নাৎসীসম যুগোস্লাভিয়ার আগ্রাসনের মুখে বসনীয়া ও হার্জেগোভিনার সেই ভয়ংকর যুদ্ধ জয়ের ক্ষেত্রে কৌশল বিনির্মাণের নেপথ্যে ছিলেন স্বয়ং ড. মূসা বিন শমশের। শুধুই কি তাই, বিশ্বের আরও বহু অবাক করা ঘটনার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরর্বতীকালে সেই ইথিওপিয়া ও রুয়ান্ডার ভয়াবহ দূর্ভিক্ষে যখন লক্ষ লক্ষ লোক প্রাণ হারাচ্ছিল ঠিক তখন এই মূসা বিন শমশের দেবদূতের মত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সহায়তা নিয়ে এই দুটি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির পাশে দাড়িয়ে ছিলেন ত্রাণ-কর্তার বেশে। ১৭৫৭ সনে বৃটিশদের ভারত দখলের পর থেকে ১৯৯২ সন পর্যন্ত বৃটিশ ভারত পরবর্তিতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি, কোন নেতা বা কোন সরকার যা করতে পারেনি সেই অসাধ্য সাধন করে প্রিন্স মূসা একাই বিশ্ববাসীকে তাঁক লাগিয়ে দিলেন। আর সেটা হলো, বৃটেনে ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতীয়, বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত বৃটেনের নাগরিকরা সেখানে যুগ যুগ ধরে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছিলেন। এমনকি তাদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদাও দেওয়া হতো না। আজ সেই বাঙ্গালী ও ভারতীয়রা বৃটিশ নাগরিকদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়ে বৃটিশ সরকারের বিভিন্ন পদে আসীন। শুধু তাই নয়, আজ বাঙ্গালীরা বৃটেনের জাতীয় নির্বাচনে পর্যন্ত অংশ নিচ্ছেন এবং বৃটিশ সংসদে সম্মানীত সদস্য পদে আসীন রয়েছেন।

ইতিহাস সাক্ষী, ২০০ বছর গোলামীর জিঞ্জিরে ছিল ভারতবসী। দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিদের সেই দেশের মাটিতে মর্যাদার উচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মহামানব ড. মূসা বিন শমশের। এটা অত্যুক্তি হবে না যে, সমগ্র এশিয়ার অহংকার ও গর্ব এ বিরল বঙ্গসন্তান। । ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ইত্তেফাকের এক প্রতিবিদনে ড. মূসা বিন শমশেরের অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, লেবার পার্টির নেতা টনি ব্লেয়ারকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি পড়ে বাংলাদেশীদের উপর। তখন থেকেই নির্বাচনে বাংলাদেশী প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা শুরু হতে থাকে। উল্লেখ্য, এশিয়ান এই ধনকূবের ড. মূসা বিন শমশের ও লেবার পার্টির নেতৃত্বের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ব্যাপারটা বরাবরই রহস্য ঘেরা। পশ্চিমা সাংবাদিক মহল এবং বিশ্বের অন্যান্য মিডিয়া দীর্ঘদিন থেকে ব্যর্থ পরিশ্রম করে আসছে এ রহস্য উদঘাটনে।

১৯৭৬ সাল থেকে প্রায় ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ধনকুবেরের ইংল্যান্ডে বিশাল অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্ট স্বার্থ বলবত ছিল। তাঁর সেখানে ছিল বিশ্বের অন্যতম এক আধুনিক অস্ত্র কারখানা। কনজারভেটিভ পার্টির সাথে তাঁর বলতে গেলে সুসম্পর্কই ছিল। ৮২ সালের পর থেকে সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ইরাকে অস্ত্র বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে ড. মূসার উপর গোয়েন্দাগিরি, ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদশী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরনের ফলে কনজারভেটিভদের সাথে তাঁর টানাপোড়েন শুরু হয়। তাঁর একমাত্র চাওয়া ছিল বাংলাদেশী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদেরকে পশ্চিমা বিশ্বে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদাকর অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করা।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি বৃটেনের মাটিতে দেখে আসছিলেন এদের প্রতি অবহেলা। তাদের নাগরিক মর্যাদা বৃদ্ধিই ছিল প্রিন্স মূসা বিন শমশেরের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। সর্বোপরি ৯১ সালে বিশ্ব বিখ্যাত বিসিসিআই ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষনা নিয়ে সরকারে সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন ড. মূসা বিন শমশের। কারণ সেই ব্যাংকে গচ্ছিত এই ধনকুবের কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড হারান। কনজারভেটিভের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার ও আর্থিক সহযোগিতা দান বন্ধ করে ড. মূসা বিন শমশের টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং ১৯৯৪ সাল থেকে লেবার পার্টকে আর্থায়ন করতে শুরু করেন। মূসা বিন শমশের ৯৭ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে পরবর্তীতে আরো ২টি জাতীয় নির্বাচনে সর্বমোট প্রায় ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেন। ফলে মার্গারেট থ্যাচার, জন মেজর প্রমুখ প্রতাপশালী কনজারভেটিভদের হটিয়ে লেবার পার্টি এই ক্ষমতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসাতে সক্ষম হয়।

একথা সর্বজন বিদিত সত্য যে, লেবার পার্টির এই ক্ষমাতায় যাওয়ায় পেছনে যিনি সবচেয়ে বেশি আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করেছেন তিনি আর কেউ নন দীর্ঘদিন বৃটেনে বসবাসকারী বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র ব্যবসায়ী ড. মূসা বিন শমশের। যাকে সারা দুনিয়ায় অস্ত্র ব্যবসায়ী পথিকৃৎ বলা হয়। ভারত থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকাল পত্রিকায় ২৯ এপ্রিল সংখ্যায়ও এ ব্যাপারে বিস্তারিত ছাপা হয়েছে।  

আরও একটি অবিশ্বাস্য অর্জন আছে এই বিরল বঙ্গসন্তানের। বাংলাদেশ ঠিক নিজ মার্তৃভূমির মত  জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির অন্যতম প্রবাদ পুরুষ তিনি। এ কারণে ২০০৩ সালে নেপালের মহামান্য রাজার নির্দেশে ড. প্রিন্স মূসা বিন শমশেরকে সে দেশের জাতীয় সম্মাননা দেওয়া হয়। এমনি করে বিশ্বের বহুদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন একই সাথে গোটা মানব সভ্যতার।   

আমাদের জাতি স্বভাবতভাবে স্মৃতিভ্রষ্ট। কিন্তু প্রিন্স মূসার বেলায় এটি ব্যাতিক্রম। ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ সময়ের ৪০ বছর ব্যবধানেও বাংলাদেশের সুধী ও সাহিত্যিক মহল বঙ্গবন্ধু ও মূসার ঐতিহাসিক সব কাহিনি আদৌও ভুলেনি। র্দীঘকালের অভ্যাসবসে আমি ২০১৫ সনের কলকাতার বই মেলায় ঘুরতে যাই। হঠাৎ অদূরে দেখতে পাই একটি বইয়ের স্টলে জ্ঞান-পাগল লোকদের দারুন ভিড়। জানতে পারলাম বাংলাদেশের প্রিন্স মূসার চমকপ্রদ জীবনী নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি স্টলটির একটি মেয়ে কর্মীর মাধ্যমে বইটি সংগ্রহ করলাম। ভারতীয় লেখিকা ড. কণিকা বন্দোপাধ্যায়ের লেখা। বইটির নাম “প্রিন্স মূসাঃ আধুনিক সভ্যতার মূর্ত প্রতীক ও রহস্যের বরপুত্র। বাংলাদেশের অন্যতম বিরল বঙ্গ-সন্তান মূসা বিন শমশেরের বিস্ময়কর জীবনীর নানা দিক নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অধ্যায়ে বইটি ভরপুর। বইটি পড়ে প্রিন্স মূসার ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ থেকে ৯ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের অজানা অনেক কথা জানতে পেরে তাকে মনে মনে অশেষ সাধুবাদ জানালাম।  
 
আমার সাংবাদিকতা জীবনের ৬০টি বসন্ত অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? ইংরেজী পত্রিকার সাংবাদিক ও সম্পাদক হওয়া সত্যেও আমিতো সদাই আমার লেখা-লেখি, সংবাদ ও সৃজনশীল কর্মকান্ডে অতৃপ্ত। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার এই লেখাটাহয়তো সবার ভাল লাগবে এবং মুগ্ধ হবেন। তবে তারাই যারা প্রকৃত মানুষ ও সৃজনশীল পাঠক- দেশ ও মানব সভ্যতাকে ভালবাসেন যারা এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক আমরা অনেকেই অথর্ব, হিংসুক, পরশ্রীকাতর, ইতিহাসের ধার ধারি না, ভাল মন্দ বুঝতে চাইনা। বুঝতে চেষ্টাও করি না- আধুনিক এই মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজকের বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসমালা। হাজার হাজার বছরে বহু সভ্যতার আবির্ভাব হয়েছে। আবার কালের গর্ভে সে সব সভ্যতা বিলিন হয়ে গেছে। কিন্তু সাক্ষী হিসাবে রয়ে গেছে তাদের ইতিহাস। অনেক মহাপুরুষ অনেক অসাধ্য সাধন করে সমাজ এবং সমকালীন সভ্যতাকে সম্বৃদ্ধ করেছেন। তৎকালীন সময়ও আমাদের মত এই অকাল কুষমান্ডদের কমতি ছিলনা। তারাও ঐ সব মহামানবকে মুল্যায়ন তো দূরের কথা হয়তো কোন খোঁজও রাখেনি ঐ সব মহামানবদের কীর্তির কথা। তাতে কি আসে যায়,বিভিন্ন সভ্যতার মহামানবদের কীর্তিগাথা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ইতিহাস আর সম্বৃদ্ধ করছে আমাদের বর্তমান ভান্ডার।

অপ্রিয় সত্য হলো, সব সভ্যতায়- সব যুগেই আমাদের মত অপদার্থদের কমতি ছিলনা । তাই আমি এপার বাংলা ও ওপার বাংলায় আমার সমস্ত কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকেও সমস্ত সত্যের আধাঁরে যা রচনা করলাম সেটা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ওবিস্ময়কর সৃষ্টি। আমার আজকের লেখার বিষয় মহানায়ক প্রবাদপ্রতিম এক বঙ্গসন্তানের রূপকথাসম উত্থান এবং বিরল অবদান সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে সমগ্র বিশ্বের সব প্রজন্মকে।

ড. মূসা বিন শমশের বাংলার সেই সূর্যসন্তান যিনি উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে দেখা দিয়েছিলেন এই জাতির ভাগ্যাকাশে, চিরতরে বদলে দিয়েছিলেন বাঙ্গালি জাতির ভবিষ্যৎ। আর তাইতো এই মহান স্বপ্নদ্রষ্টার কাছে জাতি আজ চিরঋণী। ড. মূসা বিন শমশের এক অবিসংবাদিত কিংবদন্তি, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি ও অর্থনৈতিক মুক্তির জনক। স্থিতিশীল এক নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছেন ড. মূসা বিন শমশের। তিনিই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণকারী বিস্ময়কর এক স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল পথ-প্রদর্শক।

একথা অনস্বীকার্য- এটাই চিরন্তন যে, বিশ্বের সমস্ত নিপীড়িত মানুষের ত্রানকর্তা ও মুক্তির দূত, অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানব নেলসন ম্যান্ডেলা এবং বৃটিশ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লৌহ মানবী মার্গারেট থেচার পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের সাথে তাল মিলিয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠে বলেছিলেন, আধুনিক বিশ্ব সভ্যতার মূর্ত প্রতীক হিসাবে প্রিন্স মূসা সম্বৃদ্ধ করেছেন বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা। তিনি বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ষ্টাইলিশ আইকন, ফ্যাশন রাজ্যের অপ্রতিদ্বন্দী সম্রাট হিসাবে আলাকিত করেছেন বিশ্বের মানব সভ্যতা ও অভিজাত সম্প্রদায়কে। তাইতো রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন শির উঁচু করে তাবত দুনিয়াকে বলে গেছেন, প্রিন্স মূসা দ্য প্রিন্স অফ প্রিন্সেস।

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা লন্ডন টেলিগ্রাফের সাড়া জাগানো সংখ্যার একক প্রচ্ছদে বলা হয়েছে প্রিন্স মূসা বিশ্বের ভয়ংকর ধনী, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মহামানব এবং Man with the golden guns. আরও অনেক বিশেষনে বিশেষিত মহামানব হিসাবেই অমর হয়ে থাকবেন তিনি- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার ইতিহাসের পাতায়, অনন্তকাল। আর ঐ সব অপদার্থের দল বিলিন হয়ে যাবে কালের গর্ভের।   আর অবিসংবাদিত কিংবদন্তি ও বিরল বঙ্গসন্তান ড: মূসা হবেন অমর, ইতিহাস।

লেখক: (প্রবীণ সাংবাদিক ও সম্পাদক)
ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন ছাত্র (১৯৪০-৪৫)
ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক

তথ্য সহায়তা- ভারতীয় পত্রিকা থেকে।                                                                                                                অ্যাডভারটোরিয়াল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।