ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

নিউ হরাইজনের চোখ দিয়ে দেখা প্লুটো

সামিয়া কালাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
নিউ হরাইজনের চোখ দিয়ে দেখা প্লুটো

সৌর জগৎ কিংবা সোলার সিস্টেমের চিত্র ছোটবেলায় কম বেশি আমাদের সবাইকে আঁকতে হয়েছে। সবগুলো গ্রহের কক্ষপথ কাঁটা-কম্পাস দিয়ে আঁকা হয়ে গেলে যে ছোট্ট বিন্দু টির মাধ্যমে শেষ গ্রহটি চিহ্নিত করা হতো সেটি হল প্লুটো।

১৯৩০ সালে ক্লাইভ টম্ব আমেরিকান ন্যাশনাল অবজারভেটরির মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন সৌর জগতের এই ছোট্ট শীতল গ্রহটি। এরপর থেকেই গ্রহটির অবস্থান হয় ভূগোল বইয়ে। মানুষের কল্পনা আর যৎসামান্য তথ্য কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে প্লুটো কে জানার চেষ্টা।

এবার সবচেয়ে দূরের সেই গ্রহের কাছাকাছি চলে গেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের পাঠানো বিশেষ নভোযান “নিউ হরাইজন” এরই মধ্যে পুল্টোর কক্ষপথে ঢুকে পাঠিয়েছে বিস্ময়কর সব তথ্য ও ছবি। গত ১৪ জুলাই পুল্টোর কাছাকাছি হয় নিউ হরাইজন। ফলে দিনটি হয়ে উঠেছে মহাকাশের রহস্য উন্মোচনের নতুন মাইলফলক।     

বিজ্ঞানী অ্যালেন স্ট্যারনের (Alen Staron) এর টিম গত ২৬ বছর ধরে গবেষণা করে চলেছেন কিভাবে এই অজানা গ্রহটির কাছাকাছি পৌঁছানো যায়। তারেই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালে উড্ডয়ন করা হয় নভোযান “নিউ হরাইজন”। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর এই যান আবিষ্কারের কিছু তথ্যও অবাক করার মতো! 
নিউ হরাইজন একটি সনাতন পিয়ানোর ওজনের সমান। প্রতি সেকেন্ডে ৯ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে। গত সাড়ে নয় বছর ধরে মহাকাশে থাকা এই যানটির চালিকা শক্তি ‘প্লাটনিয়াম পাওয়ার জেনারেটর’। পৃথিবীতে তৈরি হওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন যান এটি। যা এরই মধ্যে অতিক্রম করে গেছে নেপচুন ও বৃহস্পতির কক্ষপথ। যেয়েই কাজ শেষ করছে না। মূহূর্তে মূহূর্তে পাঠাচ্ছে বিস্ময়কর নতুন নতুন তথ্যচিত্র আর সম্মৃদ্ধ করেছে পৃথিবীর তথ্য ভাণ্ডার।

নেপচুন ছাড়িয়ে নিউ হরাইজনের পরের লক্ষ্যই ছিলো প্লুটোর কক্ষপথ। অ্যালেট স্ট্যারনের টিম প্রতি মুহূর্তে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রতিটা ইঞ্চির গতিবেগ। নিউ হরাইজন প্লুটোর কক্ষপথে প্রবেশ করার মুহূর্তে গ্রহটি যে অবস্থানে থাকবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন এর চেয়ে নিকটতম অবস্থানে প্লুটোটে দেখার জন্য সময় লেগে যাবে অসংখ্য বছর। সুতরাং এটা “এক জীবনের” একমাত্র সুযোগই বলা চলে।

অন্যান্য মিশনে নভোযান যেমন মঙ্গল গ্রহে কিংবা চাঁদে অবতরণ করেছে, এই মিশনে সেরকম হবে না। কেননা, ৩.৬ বিলিয়ন পথ পারি দিয়ে যাওয়া এবং প্লুটোর মহাকর্ষের প্রভাবে থাকতে যতটা জ্বালানির প্রয়োজন হবে তা যানটিতে বহন করা অসম্ভব। ফলে ওটি প্লুটোর পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়ার সময়টুকুর মধ্যেই ছবি তোলার কাজটি করতে হবে।

নিউ হরাইজন এতো দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে যে এক (১.১ মিলি মিটার) আধাদানা চালের মত কোন পার্টিকেল যদি এতে আঘাত হানে তাতেও ওটি বিধ্বস্ত হতে পারে।   প্লুটোর চারদিকে আছে ‘শ্যারন’সহ ৫ টি চাঁদ বা উপগ্রহ, যেগুলো বিক্ষিপ্তভাবে প্লুটোর চারদিকে ছুটাছুটি করে। অতি সুক্ষ্ম হিসাবের মাধ্যমে নিউ হরাইজনের যাত্রাপথ নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে তাল মিলিয়েই এগুচ্ছে নভোযানটি!

গত ১৪ ই জুলাই ২০১৫ আন্তর্জাতিক সময় ৩:১৫ মিনিটে নিউ হরাইজন প্লুটোর কাছাকাছি হতে শুরু করে। প্লুটোর যে পাশ টি সূর্যের বিপরিতে আঁধার হয়ে রয়েছে সে পাশটির ছবি নিতে কিছুটা সময় মিশন কন্ট্রোল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যানটির যোগাযোগ। কিন্তু সফলভাবে চলতে থাকে প্লুটোর স্ক্যানিং, ফটোগ্রাফিং এবং ডাটা কালেকশান। পরে কাঙ্খিত বেতার সঙ্কেত পৌঁছায় গবেষণাগারে।

এখন নিউ হরাইজন’র তোলা প্লুটোর ছবি-সহ নানা তথ্য ধীরে ধীরে এসে পৌঁছতে শুরু করেছে পৃথিবীতে। বেতার যোগাযোগেও (যার বেগ সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার) প্লুটো থেকে পৃথিবীতে সঙ্কেত পৌঁছতে লাগে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা এবং তথ্যের পরিমাণও বিপুল। আশা করা যাচ্ছে বিশ্লেষণের পরে প্লুটোর সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা রঙিন ছবিরও দেখা মিলবে। মিলবে প্লুটোর সূর্যের উল্টো দিকে থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশের ছবিও। প্লুটোর চাঁদ শ্যারনের উপরে পড়া আলোর প্রতিফলনকে ব্যবহার করে এর  মধ্যেই সে ছবি তুলেছে যানটি।  

গত ১৪ জুলাই রচিত হল নতুন এক ইতিহাস। এরপর খুলে যাবে মহাকাশের আরও অনেক অজানার দুয়ার। মানুষ কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এর পরের মিশনে নিশ্চয়ই থাকবে নতুন কোন সৌর জগৎ আবিষ্কারের উদ্যোগ।

সামিয়া কালাম, golubna@yahoo.com

বাংলাদেশ সময় ১০৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।