ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জাপানে নিরাবেগের ঈদ

ড. এস এম আবে কাউছার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
জাপানে নিরাবেগের ঈদ

২৪ সেপ্টেম্বর জাপানে কোরবানির ঈদ উদযাপন করলাম। সাধারণত বংলাদেশের একদিন আগে এখানে ঈদ হয়ে থাকে।

কোরবানির ঈদ ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের মতো এখানে নেই ঈদের সকালের ব্যস্ততা, নেই গরু-ছাগলের গোসল করানো নিয়ে ছোটাছুটি। নেই স্বজন-পড়শীর দেখা। নেই গরু-ছাগলের মাংস কাটাকুটির দৃশ্য। এমনকি নেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া, রুটি-মাংস খাওয়ার দাওয়াত দেওয়ার দৃশ্যও।

সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেই যে যার মত করে চলে যাই ঈদের জামাতে। এখানে ঈদগাহের দেখা পাওয়া ভার। খানিকটা পথ পেরিয়ে ট্রেনে ও পায়ে হেঁটে যেতে হয় মসজিদে। যাওয়ার সময় নেই সেই চিরচেনা ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, … ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ ধ্বনি। নামাজের খুতবা হয় জাপানিজ ভাষায়। খুব একটা বুঝি না, চুপচাপ বসে থাকতে হয়। তবে ঈদের জামাতে দেখা হয় স্বদেশি-ভিনদেশি অনেক মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে, যাদের আন্তরিকতার কোনো কমতি থাকে না।

নানান বর্ণের নানান ভাষার মানুষের এ মিলনমেলায়- বর্ণহীন একটাই পরিচয় যে সবাই মুসলমান, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছে। নামাজ শেষে কোলাকুলি আর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব হয়। এসময় ছবি তুলে অনেকে আনন্দে মেতে ওঠার চেষ্টা করেন।

জাপানে ঈদের দিন কোনো ছুটি নেই বলে ঈদের জামাত শেষ হলেই আবার স্ব-স্ব কর্মস্থলে ছোটার পালা শুরু হয়। এখানে বন্ধের দিন না হলে কাজকে ফাঁকি দেওয়ার এতটুকুন ফুসরত থাকে না।    

জামাত শেষে ল্যাবে ফিরে দেখি পিএইচডিতে অধ্যয়নরত এক জাপানি শিক্ষার্থী আমাদের ঈদ উদযাপনে এক জমকালো পার্টির আয়োজন করেছে। বাহ্ কি সারপ্রাইজ। পরে সে আমাদের পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত কোর্তা দেখে ছবি ওঠাতে উদগ্রিব হলো। তারপর সন্ধ্যায় আরেক আড্ডা।

আসলে ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ ঈদ ভাব ধরে রাখতে চেষ্টা করি সারাদিনভর। ছোটবেলা থেকেই ঈদ মানে ছিল নতুন জামা-কাপড় পরা, মুরুব্বিদের সালাম করে সালামি নেওয়া। আর যতটুকু সম্ভব ঘুরে বেড়ানো, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধব-পরিচিতদের বাড়িতে যাওয়া। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনুপাতিক হারে আনন্দগুলোও ছোট হয়ে আসছে। আপনজন ছাড়া ঈদ অনেকটাই পানসে। ঈদের এ রঙ্গীন দিনটি প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো খুবই আনন্দের। প্রবাসে এটা খুব মিস করি।

যত্র-তত্র গরু-ছাগল জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কিছু বাংলাদেশি, ভারতীয়, ইন্দোনেশিয়ান ও পাকিস্তানি মুসলিম এ দেশের নিয়ম-রীতি মেনেই পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।

ল্যাব থেকে রাতে বাসায় ফিরেই ঈদের যৎসামান্য আয়োজনে মুখ ডুবাই। লাচ্ছা সেমাইয়ের পর গরুর মাংস দিয়ে খাবার খেয়ে কোরবানি ঈদের স্বাদ-আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করি। এরমধ্যেই প্রিয়জনদের মুখগুলো ভেবে ভেবে কাটিয়ে দিই আরেকটি ঈদের দিন।

লেখক:
পোস্ট ডক্টরাল গবেষক, ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান  
অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, বিজ্ঞান অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল-akawsarabe@yahoo.com /or kawsar@cu.ac.bd

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।