ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বিজ্ঞান প্রসারের উজ্জ্বল নক্ষত্র

রফিকুল ইসলাম, মহাশূণ্যে ভ্রমণের সুযোগ পওয়া প্রথম বাঙালি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
বিজ্ঞান প্রসারের উজ্জ্বল নক্ষত্র

২০০৯ সালের মাঝামাঝি। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র আমি।

বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির কম্পিউটার রূমে রাতদিন মহাকাশ, মঙ্গলের মাটি, নতুন নভোযানের খবর, নতুন জীব, বিভিন্ন পরিবেশে জীবের বৃদ্ধি ইত্যাদি তথ্য জানার চেষ্টায় রত।

নিজের কম্পিউটার ছিল না, লাইব্রেরির কম্পিউটারে ঘণ্টায় ১০ টাকা দিতে হতো। ২০০৭ সালে মহাশূন্য ভ্রমণের সুযোগ পওয়ার পর থেকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌছে গেছে। চেষ্টা করছিলাম কোন বিজ্ঞান সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার।

একদিন সাহস করে বিজ্ঞান নিয়ে একটা ফিচার একটি পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম। লেখাটা প্রকাশিত হল। একটি মেইল এল বিজ্ঞান বক্তৃতা সম্পর্কিত। তাতে ডিসকাশন প্রজেক্ট নামে একটি বিজ্ঞান সংগঠনের ঠিকানা। আসিফ নামে একজন ব্যক্তি বক্তৃতা দেবেন।

বিপুল উৎসাহে নিজের মহাশূন্য পরিচিতি হাইলাইট করে বিজ্ঞানে আগ্রহের বিষয়টি লিখে পাঠালাম। পরে উত্তর হিসেবে যোগাযোগের জন্য একটা নম্বর দেওয়া হল- যা ছিল বিজ্ঞান বক্তা আসিফের।

দিন-তারিখ ঠিক হল। খুব সম্ভবত দুপুরের দিকে আমাকে সোবহানবাগ মসজিদের পাশে থাকতে বলা হল। আমি যথারীতি পৌছে গেলাম। দাঁড়িয়ে আছি- হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। ধরতে ধরতে ফোনটা কেটে গেল। একজন এসে বললেন-রফিকুল? বললাম, হ্যাঁ। লোকটার কাঁধে একটা ব্যাগ, ঢিলেঢালা শার্ট, সাধারণ ঢিলেঢালা প্যান্ট ও সাধারণ জুতা। কাপড়চোপড় তেমন উজ্জ্বল নয়, অনেকটা ময়লাটে। বললেন রিকশায় উঠুন।

তারপাশে বসে আছি, ভাবছি- আজ আসিফ স্যারের সঙ্গে দেখা হবে। কতবড় বিখ্যাত মানুষ, আমাকে নিতে লোক পাঠিয়েছেন। ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে ধানমন্ডির এক বাসায় উঠলাম। আমাকে যে কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো সেটিতে কোন খাট নেই। দুটো কম্পিউটার। দুই দিকে বিশাল তাক। শুধু বই আর বই, মেঝেতেও বই। আমার চোখ তো ছানাবড়া।

কিছুক্ষণ পর সেই মানুষটিই এলেন। আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। বললেন-আপনি মহাশূন্যে যেতে পারেননি- আমরাও অনেক দু:খ পেয়েছি।

এরপর তিনি আমার বিজ্ঞান ভাবনা জানতে চাইলেন। আমি আমার স্বপ্নগুলো তাকে বললাম। বলছি কিন্তু শান্তি পাচ্ছি না, কারণ আমি তো আসিফ স্যারকে দেখব। ওনাকে এত কথা বলে কি লাভ!

এ সময় তিনি বলতে শুরু করলেন- কয়েকজন বন্ধুদের ডেকে কথা বলেছিলাম, বিনিময়ে টাকা (টাকার পরিমাণ আমার মনে পড়ছে না)নিয়েছিলাম। এরপর দুজন চারজন করে বাড়তে লোক থাকলো। নিয়মিত চলতে থাকলো আমার বক্তৃতা। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বক্তৃতা দিয়েছি। হাতে আঁকা ছবি- পোস্টার নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বক্তৃতা দিতে গেছি। আমি অবাক হয়ে দেখেছি, দেশের মানুষ খেতে পায় না, তবুও টাকা দিয়ে আমার বক্তৃতা শোনে। আজ এতো বছর ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আমি আমার টিম নিয়ে চষে বেড়িয়েছি।

আমি মুগ্ধ হয়ে তার বক্তৃতা শুনছি। এই মানুষটির সঙ্গে আমি রিকশায় এসেছি। বিজ্ঞান বক্তা আসিফ যে এতো সহজ সরল মানুষ  তা যেনো আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।

আমি তার সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনি আশাও দিলেন না, হতাশও করলেন না। একমাস পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলে জানালেন।

এর পর ৬ বছর আসিফ ভাইয়ের সাথে আছি। তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরছেন, তাদের কাছে বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করছেন সহজবোধ্য করে। পাশাপাশি রচনা করেছেন বিজ্ঞান বিষয়ক অসংখ্য বই। বিজ্ঞান  প্রসারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পরিচালিত হালিমা শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার পাচ্ছেন সাংবাদিক ও বিজ্ঞান বক্তা আসিফ। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান কর্মী আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীনের মা হালিমা শরফুদ্দীনের নামে বাংলা একাডেমি  প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞান বক্তা আসিফের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।