ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সাকাপুত্রের স্বভাব

জহিরুল ইসলাম খোন্দকার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
সাকাপুত্রের স্বভাব

ঢাকা: সত্যিই অবাক ও হতাশ না হয়ে আর পারছি না। ভাবতে অবাক লাগে, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এসে এদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ যখন যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আববদর, আলশামসদের বিচার চায়, তখন কিছু দল ও লোক এবং একটি দেশ সেই বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত করতে আশ্রয় নিয়েছে অপকৌশলের।



এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকায় অপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

অহংকার পতনের মূল, এটা আমরা সবাই জানি। আমি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। ইতোমধ্যে তাদের সম্পর্কে এদেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই জেনে গেছেন। এই দুই নরপিশাচের যেদিন ফাঁসি রায় কার্যকর করা হলো, সেদিন প্রায় সারারাতই আমি ও আমার স্ত্রী জেগে ছিলাম কখন ফাঁসি কার্যকর করা হয় এবং কার্যকরের পরে কি ঘটে দেখার জন্য।

যা হোক, আমার স্ত্রী আমাকে একটি কথা বলেছিলো সেদিন, পরক্ষণেই বুঝতে পারছিলাম কথাটা ঠিক। আমার স্ত্রী বলেছিলো, সাকা-মুজাহিদসহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার পর সরকারের উচিত হবে এদের পরিবারকে এদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়ে অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। কেন জানতে চাইলে সে বললো, এরা এদেশে থাকলে ওদের বাবাদের চেয়েও আরো বড় ভয়ংকর হবে এবং এদেশ ও এদেশের সাধারণ মানুষের আরো অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে।

কথাটি যখন বলছিলো তখন সাকার পরিবার সাকার সঙ্গে শেষ দেখা করে কারাগার থেকে বের হচ্ছে। আমি আমার স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, দেখি ওরা কি বলে। সাংবাদিক ভাইরা যখন জিজ্ঞাস করলেন সাকার ছেলে হুম্মামকে প্রশ্ন করলেন তখন জবাব দিলো, আমার বাবাকে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে আমি জিজ্ঞাস করেছি। তিনি বলেছেন, এটা বাজে কথা, কে বলেছে? আমি তো আমার বাবাকে চিনি, আপনারাও চেনেন, আমার বাবা কি ক্ষমা চাইতে পারে? আপনারাই বলেন? একথা বলে ঠিক তার বাবার (সাকার) অঙ্গভঙ্গিতে মুখটাকে বাঁকা তেড়া করে একটি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।

ভাবতে অবাক লাগে, তার বাবার সঙ্গে শেষ দেখা করে এলেন, সে জানলো কিছুক্ষণ পর হয়তো তার বাবাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে, আর তার অঙ্গ-ভঙ্গি, পোশাক-আশাক দেখে মনে হলো কোথাও বেড়াতে বা শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে (মাথার চুলে জেল মাখানো, স্টাইল করে চুল আঁচড়ানো, পরনে পাকিস্তানি কাবলি সেট)। বলতে বা দেখতে যদি ভুল না করি থাকি, মনে হলো তার সব কথা বলা, আচার-আচরণ, অঙ্গ-ভঙ্গি সব কিছু তার বাবার (সাকার) মতোই।

এদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, যে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং যেগুলো বিচারাধীন তাদের সবার পরিবারের উচিত হবে এ বিচারকাজে সমর্থন দেওয়া, অপরাধের দায় স্বীকার করা, প্রচলিত আইন ও আদালতকে সম্মান করা। আরও উচিত বিচার বিভাগকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে বিচারের রায় মেনে নিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের মতামতের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করা এবং সুন্দর কলঙ্কমুক্ত দেশ ও জাতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করে সাধারণ জীবনযাপন করা।   

এছাড়া সেদিন টকশোতে কয়েকজন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে যেভাবে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন তাতে তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার হওয়া উচিত।

আমি মনে করি যারা এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বানচাল করার অপচেষ্টা করছে এবং এদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে শেল্টার দিচ্ছে তাদের জাতি কোনোদিনও ক্ষমা করবে না। একদিন না একদিন এদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।    

যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারকে একটি দল শেল্টার দিয়ে হয়তো পুনরায় রাজনীতিতে নিয়ে আসবেন, এদের পুনরুজ্জীবিত করে এদেশের মাটি ও মানুষকে কলঙ্কিত করবেন, যেভাবে অতীতে করেছিলেন।

আমাদের মনে রাখা উচিত ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়। আরও মনে রাখতে হবে, উপরের দিকে ঢিল ছুড়লে কিন্তু নিজের গায়েই এসে পড়ে।

আসুন আমরা সবাই মিলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কলঙ্কমুক্ত, স্বাধীন সুন্দর দেশ ও জাতি গড়ার অঙ্গীকার করি।   

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।