ফরিদপুর থেকে ফিরে: ‘সারাদিনই লোকজন থাকে। ফাঁকে ফাঁকে যাই।
কথাগুলো ফরিদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি আবজাল হোসেন খান পলাশের।
নিশ্চয়ই ভাবছেন, তার রুমে বহু লোক থাকতে তিনি রাত ১২টায় আবার কোথায়, কার সঙ্গে দেখা করতে যান। স্ত্রী-সন্তান নাকি অন্য কেউ! স্ত্রী অবশ্য নয়। কারণ, তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাঝে-মধ্যে তাদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা যান। এখন বিষয়টি আরও খটকার! তাহলে এই অন্যকেউ টা কে! মনে নানান চিন্তা আসতে পারে, তবে সেই ‘অন্যকেউ’র নাম শুনলে অবাকই হতে হবে। থাক বেশিক্ষণ অন্ধকারে রাখবো না, তিনি আসলে দেখা করতে যান তার বৃক্ষরাজির সঙ্গে।
বৃক্ষের প্রেমে পড়ে ফরিদপুরে ‘কি পাইলাম? মোড়ে’র পাশে তিনি নিজ বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও সবজির চাষ করছেন। দেখলে মনে হবে, তার বাড়ির ছাদ যেনো একটি আম বাগান। নিজেই ছাদে লাগানো এসব গাছের যতœ নেন।
রাত ১২টা বাজলে তিনি ছাদে যান। সেখানে রোপণ করা গাছের দেখভাল করেন। সব ঠিকঠাক রয়েছে কিনা দেখে তারপর রুমে আসেন। তার অবর্তমানে দলীয় এক শুভাকাঙ্ক্ষী গাছগুলোর দেখভাল করেন।
তার ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আম, ছবেদা, মালটা, মরিচ, কফি, লেবু, টমেটো গাছ রয়েছে। ছোট একটি গাছে এবছর ৫০টি মালটা হয়েছে। তবে তার আম গাছের প্রতি প্রেম একটু বেশি। রয়েছে মেক্সিকান আম গাছ। প্রতিটি আমের ওজন সাতশো গ্রামের উপরে। রয়েছে থাইল্যান্ডের জাম্বুরা আম গাছ। এর প্রতিটি আমে এক কেজি ৩শ গ্রামের উপরে ওজন হয়। আমেরিকান প্রজাতির আমগাছের নাম বলাকস্টোন। রয়েছে ব্যানানা ম্যাংগো। যা দেখতে সাগর কলার মতো। পাকিস্তানি চোষা আম গাছও রয়েছে।
কি কারণে গাছের প্রতি এতো প্রেম জানতে চাইলে পলাশ বলেন, ছোটবেলায় বাবা সবজি চাষের জন্য ভিটা তৈরির (বীজতলা তৈরি) সময় মই দিতেন। মই দেওয়ার জন্য আমাকে মইয়ের উপর বসাতেন। সেই থেকে গাছের প্রতি একটা অন্যরকম দুর্বলতা রয়েছে। তাছাড়া বাজারের সব খাবারেই কমবেশি ভেজাল থাকে। প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না। অতিথিরা আমার বাড়ি কোনোকিছু নিয়ে এলে আমি না পারলে সেই ফল খাই না ফরমালিনের ভয়ে।
তিনি ঢাকার বৃক্ষমেলা ও ময়মনসিংহ থেকে চারা সংগ্রহ করেন। তবে বেশির ভাগ গাছ ঢাকা বৃক্ষমেলা থেকে সংগ্রহ করা।
বাজারের কোনো কীটনাশক গাছে প্রয়োগ করেন না। গোবর দিয়ে নিজের তৈরি জৈব্য সার প্রয়োগ করেন। নিজের সন্তানদের প্রতি যতোটা যতœবান, গাছের প্রতিও তিনি ততোটা যতœবান। সবাইকে তিনি বেশি বেশি গাছ লাগাতে ও গাছের প্রতি যতœবান হওয়ার অনুরোধ জানান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সরদার শফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ির ছাদে ফলজ গাছ লাগানো বা সবজির চাষ করা খুবই ইতিবাচক দিক। আমরাও এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এতে জায়গার অপচয় রোধ হবে, উৎপাদন বাড়বে, পরিবারের চাহিদা পুরণ ও পুষ্টির সমস্যার সমাধান হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এসএস