ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এই ছবি শহরের?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এই ছবি শহরের? এই ছবি শহরের?

পৃথিবীর কোনও দেশের শহরগুলো নিয়মিত এমন ছবি দেখাতে পারবে না। আকস্মিক নয়, লাগাতার এমন চিত্র আমরা দেখছি দেশের রাজধানী ঢাকায়। দ্বিতীয় বড় শহর চট্টগ্রামে। এবং অন্যান্য শহরে।

শুধু ছবিই দেখছি না, অংশ নিচ্ছি ছবির সঙ্গে। যাপিত জীবনে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র, হাট, বাজারে যাচ্ছি জলভেঙে।

নৌকায়। ডুবন্ত গাড়িতে। বর্ষায় বাংলাদেশের শহরগুলো নান্দনিক চিত্রের বদলে উপহার দিচ্ছে নরক যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা।

বিখ্যাত পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা নিয়ে গভীর গবেষণার পর বলেছিলেন, ‘নগর-সভ্যতা ধ্বংস করে তিনটি বিপদ। আগুন, পানি আর গৃহবিবাদ। ’

পণ্ডিতের কথা বাসী হলে ফলতে শুরু করেছে। গৃহবিবাদ আমাদের রাজনীতিতে ঘাপটি মেরে আছে। আর জলের সমস্যা ধ্বংসের দিকে ঠেলছে। নদ-নদী, খাল-বিলের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে বহু জায়গার পানিতে। নগরে-শহরে জলাবদ্ধতা এক স্থায়ী রোগের মতো দাঁড়িয়েছে। জলবন্দি মানুষ স্বাভাবিক জীবনের ছন্দটুকুও ফিরে পাচ্ছে না। জমাট জলে পথ-ঘাট স্তব্ধ হচ্ছে। তীব্র হচ্ছে যানজট।

নাগরিক সেবা সংস্থাগুলোর একটি খেয়াল-খুশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে ঘোরতর বর্ষাকালে। বৃষ্টির বিপদের সঙ্গে বাড়ছে পথের বিড়ম্বণা। সামাজিক সংকট এভাবেই ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে, সে খেয়াল যেন কারোই নেই। মানুষ ক্ষুব্ধ, বিরক্ত হয়ে মনে মনে তেতিয়ে রয়েছে। এই ছবি শহরের?যারা শহরে কাজে বেড়িয়েছেন, তারা তো বটেই, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে অবিশ্বাস্য ছবি প্রকাশ পাচ্ছে। নগরের জীবনে কল্পনা করা যায় না, এমন ছবি দেখছে সারা বিশ্ব। রাস্তায় নৌকা চলছে। আধা-ডুবন্ত হয়ে গাড়ি যাচ্ছে। ডুবু ডুবু রিকশায় মানুষ জলমগ্ন হয়ে বাড়ি বা গন্তব্যে ফিরছে। এই কি শহরের হাল হতে পারে!

পণ্ডিত রাহুলের প্রাচীন প্রজ্ঞান থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় কি এখনো আসে নি? জল, আগুন আর গৃহদাহ থেকে সতর্ক হওয়ার সময় কি এখনো হয় নি? সমাজ ব্যবস্থা প্রায়-ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে নাগরিকগণ স্বাভাবিক জীবন-যাপনের নিশ্চয়তার জন্য ফুঁসে ওঠলে, কে দায়িত্ব নেবে?

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর থেকে নাগরিক জীবনের শৃঙ্খলা ফিরানোর কার্যকরী উদ্যোগ নিয়ে যানজট, জলজটসহ আকস্মিক প্রাকৃতিক বিড়ম্বনা রোধ করা হোক। এক্ষেত্রে বিলম্ব হলে জাতির গতি রুদ্ধ হবে। উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা স্তিমিত হবে। এবং মানুষ অবশ্যই সংক্ষুব্ধ হবে। অতএব, আর বিলম্ব নয়। সামনেই বর্ষাকাল আসছে। বিপদ আরও বাড়ার আশংকাও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই কাজে ঝাঁপিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

[ছবি ফেসবুক থেকে]

বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, জুন ১৩,২০১৭
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।