ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘সাকসেস স্টোরি অব বাংলানিউজ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
‘সাকসেস স্টোরি অব বাংলানিউজ’ সপ্তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে বাংলানিউজ পরিবার। ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

আজ থেকে সাত বছর আগে অনলাইন নিউজ পেপার সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল খুবই কম। এ ধরনের একটি মিডিয়া মানুষের মনকে নাড়িয়ে দিতে পারে, সেটিও ছিল চিন্তার বাইরে। তারপর বাংলাদেশ বলে কথা। যেখানে অধিকাংশ মানুষই এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত নয়।

কিন্তু ভরসার জায়গা একটি ছিল আমার। সেটি হল এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন।

দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবন তার, দেশ-বিদেশে ঘোরার ব্যাপক অভিজ্ঞতা। এর আগে তিনি বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কমও শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি অনলাইন মিডিয়ার জনক বাংলাদেশে। অনেক সময় দেন, ভাবেন, নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটান। কেউ নতুন কোন আইডিয়া দিলে সেটিও লুফে নেন।  

ভরসার আরো জায়গা ছিল। সেটি হল দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পৃষ্ঠপোষকতা। স্বাধীনতা পরবতীর্ যে কয়জন ব্যবসায়ী শ্রম-নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, ধৈর্য, সাহস ও ঝুঁকি নিয়ে ‘ব্যবসাসফল’ হয়েছেন, তিনি তাদের একজন।

মিডিয়া এমন এক জগৎ যেটির সাফল্য নির্ভর করে লজিস্টিক সাপোর্ট অর্থাৎ সংবাদকর্মীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, গাড়িসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার উপর।

সব মিলিয়ে দুটি জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ এখানে। মানবিক শক্তি অর্থাৎ মানুষের সৃজনশীল চিন্তা আর অর্থের যোগান। সাত বছরের মাথায় বাংলানিউজ আজ মানুষের হাতে থাকা মোবাইলের স্ক্রিনে। প্রতিদিন কোটি মানুষেরও বেশি এটি অনুসরণ করে।

ছোট্ট একটি ব্যক্তিগত উদাহরণও দিতে চাই। একটি সংবাদ দেখবার জন্য বাসার কম্পিউটার অন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার স্কুলপড়ুয়া ছেলে কম্পিউটার বাদ দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে সেই নিউজটি আমাকে দেখিয়ে দিলেন মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে।

দ্রুততার সঙ্গে সংবাদ পড়া ও ছবি দেখাই কেবল মূল কথা নয়। তার চেয়েও দ্রুততার সঙ্গে সঠিক সংবাদ পাঠকের সামনে তুলে ধরার যে নিরন্তর চেষ্টা, সেটিই হল এ ধরনের অনলাইন মিডিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গত মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৃষ্টি ও পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর সারা বিশ্ব জানতে পেরেছে টিভি নিউজ চ্যানেলে। কিন্তু কেউ এই সংবাদ থেকে বঞ্চিত হলেই তার সামনে ছিল আরেক নিউজ মিডিয়া, সেটি হল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। নিউজ আর ছবি দুটিই একসঙ্গে দেখতে পেয়েছে পাঠক। সংবাদ পরিবেশনেও ছিল অনেক বৈচিত্র্য। হতাহতের খবর, ধ্বংসের সচিত্র রূপ সবই ভেসে উঠেছে মোবাইল স্ক্রিনে। সম্প্রতি আরও যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। যে কেউ একজন নিউজটি দেখলেই শেয়ার করে দিচ্ছেন তার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কাছে। ফলে আপনি কি আমেরিকায় না কি বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে আছেন - সেটি কোন কঠিন ব্যাপার হয়ে থাকলো না।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে অসংখ্যবার আমার লেখা ছাপা হয়েছে। এসব লেখার প্রতিক্রিয়াও পেয়েছি নানাজন থেকে বেশ দ্রুতই। প্রিন্ট মিডিয়া, টিভি, রেডিওতে আমার কর্মজীবন ২৭ বছরের। এই দীর্ঘ সময়ে তিনটি মিডিয়ারই তিন ধরনের স্বাদ পেয়েছি। অভিজ্ঞতারও রকমফের আছে। তবে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে লিখে আনন্দ একটু অন্যরকম। এর মূল কারণ হলো পাঠকের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। আর এটি হল একেবারেই দৃশ্যমান। রাস্তায় দেখা কিংবা গাড়িতে একসঙ্গে যাচ্ছি, বন্ধু কিংবা সহকর্মী কেউ একজন বাংলানিউজে পরিবেশিত নিউজটি খুলেই দেখিয়ে দিলেন, সাথে তার প্রতিক্রিয়াও জানালেন, আলোচনা-সমালোচনাও করলেন। পাঠকের প্রতিক্রিয়ারও কিছু জবাব লেখক হিসেবে সাথে সাথে দেয়া যায়।

যারা অভিনয় শিল্পী, তাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, টিভি-সিনেমা আর মঞ্চ নাটক,কোন মাধ্যমে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কিংবা অভিনয় করে মজা পান? তারা একবাক্যে বলেন মঞ্চের কথা, কারণ সেখানে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় সরাসরি।

মঞ্চে দর্শক উপস্থিত থাকে খুব বেশি হলে এক হাজার কিংবা দুই হাজার। টিভিতে সেই নাটক দেখে কয়েক লাখ দর্শক, সিনেমাতেও প্রায় একই অবস্থা। লাখ লাখ দর্শকের মাধ্যমের চেয়ে হাজারখানেক দর্শক মাতিয়ে রাখে ওই অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে ! কিন্তু অনলাইন নিউজপোর্টালে লেখার পর  পাঠক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় লাখ লাখ। লেখক হিসেবে মঞ্চ নাটকের নায়ক-নায়িকার মতো যেমন স্বাদ আছে এখানে, তেমনি অসংখ্য-অগণিত পাঠকের কাছে নিজের সৃষ্টিশীল কর্ম তুলে ধরা যায়।

নিজের একটি ছোট্ট লেখার উদাহরণ দিতে চাই। চারদিন আগে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় ‘চার মহিউদ্দিন একসাথে, দুই ওসি নিলেন বখশিস’ শিরোনামের লেখা যখন এক লাখ পাঠক পড়ে ও শেয়ার করে, তখন ভাবি, ‘সাকসেসফুল স্টোরি অব বাংলানিউজ’।

রফিকুল বাহার: আবাসিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম রিজিওনাল অফিস, একুশে টেলিভিশন লিমিটেড।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।