ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কলকাতার শ্রমিক থেকে চট্টগ্রাম সিটির সফল মেয়র মহিউদ্দিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
কলকাতার শ্রমিক থেকে চট্টগ্রাম সিটির সফল মেয়র মহিউদ্দিন সদ্য প্রয়াত বীর চট্টলার জনমানুষের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর চট্টল বীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চলে যান কলকাতায়। অর্থ নেই থাকার জায়গা নেই, বেকার জীবন।

থাকতেন ছোট্ট একটি কুটিরে। একজন থাকার মতো একটি খাটে ঘুমাতেন দু’জন ঠাসাঠাসি করে।

 

তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের মদুনাঘাটের মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকার। অনাহার অর্ধাহার- এভাবেই দিনাতিপাত। কখনও রাস্তার কাঁচাবাজারে আলু বিক্রি করেছেন। কখনও টং দোকানে চা বিক্রি করেছেন।

আরও পড়ুন>>
** 
চট্টল বীরের জীবনাবসান

তারপর জুটল একটি চাকরি। অস্থায়ী সেই চাকরি কলকাতা সিটি করপোরেশনে। সেই চাকরি ছিল ময়লা আবর্জনাবাহী গাড়ি গণনার কাজ। অর্থাৎ প্রতিদিন কত গাড়ি আবর্জনা ফেলে আসত সেটি গুনে রাখার সাধারণ একটি চাকরি।  

এ অস্থায়ী চাকরি করার সময় কি জেদ চেপেছিল তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হবেন একদিন!

তৃতীয় দফায় মেয়র হওয়ার পর প্রশ্ন করেছিলাম কলকাতার সেই দুঃসহ স্মৃতি কি মনে পড়ে? তার সহাস্য জবাব ‘আপনি (লেখক) এ খবর জানলেন কোত্থেকে? মনে পড়বে না কেন? প্রত্যেক মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ থাকে। আমি এর বাইরে নই। কষ্ট পরিশ্রম সাধনা করে মানুষকে এগোতে হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো মানুষের কল্যাণ করা। আমি তার একনিষ্ট অনুসারী। ’

এর পরের প্রশ্নে চট্টল বীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হবো কিনা এ নিয়ে স্বপ্ন দেখিনি, কল্পনাও করিনি। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। চার বছরের মাথায় দেশের স্থপতিকে যেখানে হত্যা করা হয়, সেখানে আমাদের টিকে থাকার সংগ্রামই অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে মনে মনে একটা জিদ ছিল একদিন দেশে ফিরবো, রাজনীতিও করবো। ’

মহিউদ্দিন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সাংঘাতিক জেদি ও অসম সাহসী। দুষ্টেরও শিরোমণি। বাবার চাকরির সূত্রে পড়তেন নোয়াখালী জিলা স্কুলে। সেই সময় মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে চাল এনে বিক্রি করে আইসক্রিম খেতেন, বাযোস্কোপ দেখতেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব অকপটে স্বীকার করেন।  

১৯৭৫ সালে নির্বাসনে থাকার সময় কলকাতার পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে মারপিটও করেছিলেন। তার সাহস দেখে তখন পাড়ার ছেলেরা পিছু হটে যায়। পাড়ার অন্য লোকেরা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।  

দুষ্টুমি জেদ আর সাহসী কেবল নয় মানবিকতার অসাধারণ গুণও তার ভেতর ছিল। কলকাতার রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া শিশুকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে মাদার তেরেসা পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এসবের নীরব সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকার।  

তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘চট্টগ্রামের জনগণ তাদের অভিভাবককে হারিয়েছে। ’

৭৩ বছর বয়সে মহিউদ্দিন যখন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান -তখন রেখে গেছেন অনেক সুখ স্মৃতি কঠিন সংগ্রাম।  

প্রতিবেশী দেশের অন্যতম মেগাসিটি কলকাতার অস্থায়ী শ্রমিক থেকে এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহরের মেয়রের চেয়ারে বসার সক্ষমতা দেখিয়ে গেছেন তিনি। তাও তিন মেয়াদে টানা ১৬ বছরের মেয়র।

আরও পড়ুন>>
** 
মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে সাজেদা চৌধুরী  শোক
** মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শোক
** প্রতিশোধ নিতে চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা
** মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া
** চট্টল বীরের মৃত্যুতে মেয়র নাছিরের শোক 

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।