দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় অথবা দ্রুতগামী চাকায় পিষ্ট হয়ে কোনো বন্যপ্রাণীর সকরুণ মৃত্যু হলে সত্যি অর্থেই যাদের ভাবনার কথা তারা কখনোই তা ভাবেন না। আর এগুলো নিয়ে তাদের তেমন একটা মাথাব্যথাও নেই।
এভাবেই যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর ধরে বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা লাউয়াছড়ায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। তাদের সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাটুকু আমরা কেউ-ই তাদের দিতে পারছি না।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে একটি মায়াহরিণ মারা যায় দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায়। পরে বন্য মায়াহরিণটিকে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে গা ঢাকা দেয় অপরাধীরা। যেন তারা চাইছিল এমনই হোক। তাতে নিজেরদের ভূরিভোজ আয়েশে সুসম্পন্ন হবে। হায়রে ঘৃণ্য মানসিকতা!
স্থানীয় বন্যপ্রাণী বিভাগ কর্তৃপক্ষ দু’দিন হন্যে হয়ে খুঁজেও তাদের আর বের করতে পারেনি। পার প্রাইভেটকারে ওঠানোর আনুমানিক বিশ মিনিট আগে সিএনজি অটোরিকশার এক জনৈক যাত্রী ছবিটি তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।
বিপন্ন বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে লাউয়াছড়ায় যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জোর দাবি জানিয়ে আসছে। এই বিভাগ বহুদিন ধরে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানোসহ সভা-সমাবেশে তা উত্থাপন করছে।
কিন্তু কোথায় কী? কাজের অগ্রগতি কিছুই হয়নি! এই ব্যর্থতায় ঝরে পড়ছে বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি গ্রহণ না করার ফলেই সবশেষ মায়াহরিণটাকে অকালে মরে যেতে হলো!
তাহলে এভাবেই প্রতিনিয়ত কী মরতে হবে লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণীদের? দ্রুততার সঙ্গে ঊর্ধ্বতন বিভাগের কী কিছুই করার নেই এ ব্যাপারে? বন্যপ্রাণী হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য অবলোকন করতে করতে প্রকৃতিপ্রেমীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এমন দৃশ্যে আমাদের হৃদয়ের গভীরে ক্ষোভ আর বেদনার রক্তক্ষরণ হচ্ছে একটু একটু করে।
আশার কথা হলো, কর্তৃপক্ষের নানামুখী পর্যবেক্ষণের ফলে লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণীদের প্রজনন বেড়েছে। তারমধ্যে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন প্রাণী উল্লুক, মায়াহরিণ, বন্যশুকর প্রভৃতি অন্যতম।
তাই রাতের আঁধারে লাউয়াছড়ার পথটি সচল থাকলে আরো বন্যপ্রাণী মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষায় শিগগিরই সড়কটি রাতে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
যে কোনো দেশের জন্যই তার নিজস্ব বন্যপ্রাণীগুলো জাতীয় একটি সম্পদ। এদের নির্ভয়তা, সুস্থতা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। আমরা সেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মহামূল্যবান বন্যপ্রাণীদের ব্যাপারে আন্তরিকতা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো দেখতে পাচ্ছি না।
মানুষের মতো বন্যপ্রাণীরও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাটুকু আমরা চাই। মৃত্যুর এমন ভয়াবহতা কখনোই কাম্য হতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
বিবিবি/এএ