বিশ্বের অপরাপর আন্তর্জাতিক ভাষার মতো বাংলা ভাষাও কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রয়োগ ও ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। কম্পিউটারে অনেক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাংলাভাষার প্রভূত জ্ঞানও সংযোজিত হয়েছে, যা এরই মাঝে হাতে মুঠোয়-ধরা মোবাইল ফোনের পর্দায় এসে হাজির হয়েছে।
কম্পিউটার ভাষার পাঠ্যরূপের চেহারা আমূল বদলে দিয়েছে। আগে হাতের লেখা বা ছাপার পাঠ্যভাষ্যকে সাইবারের পর্দায় প্রতিস্থাপিত করেছে। এখন পাঠ্যবস্তুর মূলত দুই ধরনের রূপ স্বীকৃতি পেয়েছে। একটি রূপ, আমাদের চিরচেনা কাগজে লেখা বা ছাপার বইপত্র, যার চলতি নাম ‘হার্ড কপি’ বা ‘ছাপানো প্রতিলিপি’। অপরটি ‘সফট কপি’ বা ‘নমনীয় প্রতিলিপি’, যা পিসি’র হার্ড ডিস্ক মেমোরিতে রেখে দেওয়া যায়। কিংবা ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ডিভিডি বা পেণ ড্রাইভে তুলে রাখা যায়।
‘হার্ড কপি’র চেয়ে ‘সফট কপি’র সুবিধা হলো কম্পিউটার-নির্দেশের সাহায্যে পাঠ্যবস্তুর নানা রকম অদল-বদল ও পরিবর্তন করা সম্ভব। পরিবর্তন করতে পারার নমনীয়তার জন্যই সম্ভবত নামকরণে ‘সফট’ বা নমনীয় শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘হার্ড কপি’তে যে সুযোগ নেই। একবার ছাপা হয়ে গেলে তা আর পরিবর্তন করা যায় না। অথচ নানা ধরনের পরিবর্তন করা ‘সফট কপি’তে সম্ভব।
প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ায় ভাষা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপুল পালাবদল হয়েছে। শুধু ছাপানো কপিই নয়, আজকাল অনেক বইপত্র ও ম্যাগাজিনের ‘সফট কপি’ বাজারে এসেছে। কোনও কোনও ছাপা-বইয়ের সঙ্গে বইটির একটি সিডি পেছনের মলাটের জ্যাকেটে পুরে দেওয়া থাকে। সিডি বা ডিভিডি’র তথ্যসঞ্চয় ক্ষমতা অসাধারণ ও ব্যাপক। মোটা মোটা একাধিক বই আজকাল সিডি বা ডিভিডি বা পেন ড্রাইভে নিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
মাত্র কয়েক গ্রাম ওজন ও কয়েক ইঞ্চি ব্যাসের একটি চাকতির মতো সিডি বা ডিভিডি’তে ভাষা, জ্ঞান ও শিক্ষামূলক অনেক কিছুই বিপণন ও প্রয়োগ হচ্ছে। এই ধরনের ডিজিটাল মাধ্যমের তথ্যসঞ্চয় ক্ষমতাও দিনদিন বাড়ছে। এমনও ধারণা করা হচ্ছে যে, অদূর ভবিষ্যতে লাইব্রেরির জন্য আর বিশাল হলঘরে বড় বড় র্যাক লাগবে না। একটি ছোট্ট ঘর বা একটি কম্পিউটারই যথেষ্ট হবে। হলঘরের দরকার হতে পারে কেবল পাঠকদের বসে বসে ডিজিটাল স্ক্রিনে পড়াশোনা করার জন্যে!
আগে কম্পিউটারে তথ্য প্রবেশের একমাত্র উপায় ছিল কি-বোর্ডের সাহায্যে টাইপ করে যাওয়া। এখন ক্ষুদ্র ক্যামেরা বা স্ক্যানার দিয়ে ছবি তোলা এবং মাইক্রোফোনের সাহায্যে ধ্বনি গ্রহণের সুযোগ হওয়ায় কম্পিউটার ‘বহুমাধ্যম’ বা ‘মাল্টিমিডিয়া’ ডিভাইসে পরিণত হয়েছে। তদুপরি বইয়ে লেখাগুলোকে ‘অপটিক্যাল ক্যারেকটার রেকগনিশন’ (ওসিআর) সফটওয়্যারের সাহায্যে কম্পিউটারে তুলে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে।
আরও বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সূচনা করেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে অজস্র সূত্র ও গ্রন্থি দিয়ে তৈরি বিশাল তথ্যজাল ভাষা, শিক্ষা ও জ্ঞানের জগৎকে অবারিত করেছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে সাইবার স্পেস নামে কাল্পনিক একটি ভুবন। কোটি কোটি মানুষ এ জগতে ভাষা, বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, শিল্প, বাণিজ্যসহ জ্ঞানের সকল মাধ্যমের বিপুল তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। বিভিন্ন তথ্যসূত্র বা ওয়েবসাইট থেকে একই সঙ্গে সংখ্যাহীন মানুষের তথ্য সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জ্ঞানের সিংহদরোজা খুলে গেছে মানব সম্প্রদায়ের সামনে।
ইন্টারনেট শুধু ইংরেজিতেই তথ্য জ্ঞাপন করছে না। বাংলা ভাষায়ও নানামুখী তথ্য জানাচ্ছে। বাংলায় পছন্দের লেখকের বইপত্র পড়া যাচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য নেওয়া যাচ্ছে। উইকিপিডিয়া নামের আরেকটি সাইট বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে সঙ্গে বাংলায়ও তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। ফলে সাইবার জগতে ভাষা একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে।
অতএব বাংলাভাষার চর্চা ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিবান্ধব হয়েছে। প্রযুক্তি ও আধুনিক কৌশল ব্যবহার করেও এখন ভাষা ও শিক্ষা অর্জন সম্ভব হচ্ছে। দূরশিক্ষণ আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী হয়েছে। ব্যক্তিগত শিক্ষণের ক্ষেত্রটিও প্রসারিত হয়েছে। যা বাকী আছে, তা হলো জোর কদমে প্রযুক্তিকে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহার করে কাজে লাগানো। একবিংশ শতাব্দী জ্ঞানালোকিত সমাজ বিনির্মাণের জন্য এটাই মোক্ষম পথ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮
এমপি/জেএম