ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

পরিবেশ বিপর্যয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
পরিবেশ বিপর্যয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি

বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল ও দশম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ফলে দেশে বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে সমান তালে বেড়ে চলেছে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার সমস্যাও। বর্তমানে বাংলদেশে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ২২.৪ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম। এ হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে, ২০২৫ সালে দৈনিক প্রায় ৪৭ হাজার ৬৪ টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে। এতে করে মাথাপিছু হার বেড়ে দাঁড়াবে ২২০ কিলোগ্রাম। ফলে এখনই প্রয়োজন সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেওয়া। 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে আবর্জনা সংগ্রহে পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনর্ব্যবহার ও নিষ্কাশনের সমন্বিত ব্যবস্থা। বর্জ্য পদার্থের আধুনিক ও নিরাপদ অপসারণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা বাংলাদেশের অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা।

অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা। এসব অবকাঠামোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে প্রচুর পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য প্রতিদিন এখানে-সেখানে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক ও সেকেলে। বর্জ্য পদার্থকে রাস্তার পাশে এখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়, এবং তা পচে-গলে বাতাসকে মারাত্মক দূষিত করে।  

বর্ষা মৌসুমে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ডাস্টবিন উপচে কঠিন বর্জ্য রাস্তার পাশের ড্রেনে পড়ে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার বিষয়টি জটিল রূপ ধারণ করছে। গাদাগাদি করে বসবাস করা অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে বিপুল পরিমাণ গৃহস্থালী বর্জ্য প্রতিনিয়ত এখানে-সেখানে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া উন্মুক্ত স্থান থেকেও বিপুল পরিমাণ কঠিন ও তরল আবর্জনা প্রতিনিয়ত বর্জ্য ব্যাবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে। রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, মিল-কারখানার তৈলাক্ত পদার্থ, কসাইখানার রক্ত, ছাপাখানার রং, হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত না হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠেছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

বর্তমানে সময়ে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং আধুনিক জীবনযাপনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেটজাত খাবারের কৌটার ব্যবহারে পুরো বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার পরিধি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রোগ  বিস্তারকারী ব্যাকটেরিয়া ও বিষাক্ত ধাতব পদার্থগুলো জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত এরকম উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন বর্জ্য হচ্ছে- পৌর এলাকার বর্জ্য, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার বর্জ্য, পচনশীল ও অপচনশীল আর্বজনা, রান্নাঘরের বর্জ্য, পারমাণবিক আর্বজনা ইত্যাদি।  

এসব বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শিল্প বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, প্রাণীজ বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে বায়ু, পানি ইত্যাদি। এর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। পড়ছে জলবায়ুর ওপর প্রতিকূল প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণীর জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানা জটিল ও অপরিচিত রোগ হয়ে থাকে। বেড়ে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমাদের চারপাশের পরিবেশের এ বিপর্যয়ের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বায়ু দুষণ। এটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে ২২ শতাংশ মানুষ বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা ও ৩০ শতাংশ মানুষ জ্বালানি সংশ্লিষ্ট দূষণের শিকার।  

বিশ্ব পরিবেশের যেমন দ্রুত অবনতি হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে এ অবনতি হয়েছে আরও দ্রুত। বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। পৃথিবীর ৯১ শতাংশ মানুষ এমন জায়গায় বসবাস করে, যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বায়ু সেবন করে। আমাদের দেশ বায়ুদূষণের বড় কারণ সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ রোগ, যেমন- হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া থেকে শুরু করে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, হার্ট অ্যাটাক ও ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বায়ু দূষণ ছাড়াও বর্জ্য অব্যবস্থাপনা মাটির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস করছে। যা ভূমিক্ষয়সহ মাটির গুণগত পরিবর্তন ঘটায় ও এর বন্ধনকে দুর্বল করে। ভূমিক্ষয় ও ভূমি অপসারণ দুটি প্রক্রিয়াই মাটিকে ক্রমশ অনুর্বর করে তোলে। এতে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যও বিনষ্ট হয়।  

গৃহস্থালি আবজর্না, শিল্প ও কৃষিখামারের বর্জ্য এবং মানুষ ও পশুর মলমূত্র থেকে প্রতিনিয়ত ঘটছে পানিদূষণ। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত এসিড, বালাইনাশক, তেল ও বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস করতে পারে। ফসফেট, রাসায়নিক সার, সাবানজাতীয় দ্রব্য ও বিষ্ঠা, জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদকে মাত্রাতিরিক্ত পুষ্টি যোগানোর মাধ্যমে পানি দূষিত করে। অধিক পুষ্টির ফলে জলজ শ্যাওলার অত্যধিক বৃদ্ধি ও পরবর্তী সময়ে মৃত্যু ঘটে, ব্যাকটেরিয়া এসব মৃত শ্যাওলার পচন ঘটাতে অত্যধিক পরিমাণে পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে। এতে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শিল্প ও পৌর বর্জ্য বাংলাদেশের নদী ও জলাশয়গুলোকেও দূষিত করছে।  

ইদানিংকালে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে পশুবিজ্ঞানিদের চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পশুসম্পদ বর্জ্য।  একটি গরু দৈনিক প্রায় ১২-১৫ কেজি, ছাগল ও ভেড়া ১.৫-২ কেজি, লেয়ার ১০০-১৫০ গ্রাম, ব্রয়লার ১০০-২০০ গ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন করে থাকে। পশুসম্পদ বর্জ্যের উৎসগুলো হচ্ছে গবাদিপশু উৎপাদিত গোবর, খামারের বর্জ্য খাদ্য, বর্জ্য পানি, গোবরের অপরিকল্পিত সংরক্ষণ ও মৃত পশুর সমাধি থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধ ইত্যাদি। গবাদি পশুর উৎপাদিত গোবর যদি খামারে ফেলে রাখা হয় তবে এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ও গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে এই পশুসম্পদ বর্জ্য।

ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো হচ্ছে- মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন ইত্যাদি। পশুসম্পদ বর্জ্য ঠিক মতো ব্যবস্থাপনার অভাবে যেসব সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে সেগুলো হলো- ভূ-গর্ভস্থ জল দূষণ, বায়ু দূষণ, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। পশুসম্পদ বর্জ্য থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধ মানুষ ও পশুপাখির বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- অস্থি সমস্যা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি। ক্ষতিকর গ্যাসগুলোর মাত্রারিক্ত সেবন মানুষ ও পশুপাখির মত্যৃর কারণ হতে পারে। এছাড়া এতে সৃষ্টি হয় এসিড বৃষ্টি।  

বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ও নাইট্রেট পরিবেশে পানি দূষণের অন্যতম কারণ। খাবার পানিতে উচ্চতর ঘনত্বের নাইট্রেটের উপস্থিতি মানুষ ও পশুপাখির স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। অতিরিক্ত নাইট্রেটযুক্ত খাদ্য ও পানি গ্রহণের ফলে শরীরে রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। নাইট্রেট যুক্ত পানি খামার থেকে পুকুরে প্রবেশ করলে তা মাছ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পশুসম্পদ থেকে উৎপাদিত গোবর। প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ গোবর কৃষিজমিতে প্রয়োগ করার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ভূ-গর্ভস্থ পানিতে প্রবেশ করছে, যা পানি দূষণ ও জনগণের স্বাস্থ্যের হুমকি তৈরি করছে।  
পশুসম্পদ বর্জ্য থেকে উৎপাদিত মিথেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ শতাংশ দায়ী। একটি গবাদি পশু বছরে প্রায় ৭০-১২০ কেজি মিথেন নির্গমন করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ২৩ গুণ বেশি দায়ী।  

বর্তমানে উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বর্জ্যের পূর্ণ ব্যবহার। পশুসম্পদ বর্জ্য থেকেই আবার পশুপাখির খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পর পশুসম্পদ বর্জ্য থেকে উৎপাদিত পশুখাদ্যে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। যেমন- গবাদিপশুর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পোল্ট্রি লিটার খাবার সহজেই গ্রহণ করতে পারে। পোল্ট্রি বর্জ্য থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত আমিষ গ্রহণ গাভীর দুধ উৎপাদনে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, এবং তা একইসঙ্গে নতুন খাদ্যে আমিষের চাহিদা কমায়, ফলে খরচ হ্রাস পায়। পশুসম্পদ বর্জ্যে সঠিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে কম্পোস্টিং। উৎপাদিত কম্পোস্ট কৃষিজমিতে প্রয়োগে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে রাসায়নিক সারের খরচ কমে। উর্বরতা বৃদ্ধিতেও এটি ভূমিকা রাখে।  

এর বাইরে বায়োগ্যাস উৎপাদন পশুসম্পদ বর্জ্য সদ্ব্যবহারের অন্যতম উপায়। গ্রামীণ পরিবেশে জ্বালানি ও শক্তির সহজতম উৎস হচ্ছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এর মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস পায় এবং উৎপাদিত জৈব সার জমির উর্বরতা বাড়ায়। সর্বোপরি পশুসম্পদ বর্জ্যের সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশে পশুসম্পদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পশুসম্পদ বর্জ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই মানুষ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করছে। ফলে একদিকে যেমন এটি পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে কৃষকরা সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত অর্থনৈতিক লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  

পশুসম্পদ বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা কেবলমাত্র পশুবিজ্ঞানীদের দ্বারাই সম্ভব। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পশুসম্পদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পশুবিজ্ঞানীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের উৎপাদিত পদ্ধতিতে পশুসম্পদ বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। এ খাতে পশুবিজ্ঞানীদের দেওয়া গবেষণা অনুদান পশুসম্পদ বর্জ্যের আধুনিক ও নিরাপদ অপসারণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে ও দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামকে পরিছন্ন, বাসযোগ্য, পরিবেশবান্ধব নগরীতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করবে।

পশু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশে, বিশেষত শহরাঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি ঢাকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সোশ্যাল বিজনেস এন্টারপ্রাইজ ওয়েস্ট কনসার্ন, বাসাবাড়ি পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। ইউনিসেফ সিটি কর্পোরেশন ও শহরাঞ্চলে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছে। এতদসত্তে¡ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মনোন্নয়নে, বিশেষত শিল্পকারখানার বর্জ্য ও হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসব উদ্যোগ নিতান্তই অপ্রতুল। এ কারণে আবর্জনা এখন বোঝা হয়ে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে বিপন্ন করে চলেছে। বর্জ্য মোকাবিলা এখন পরিবেশ রক্ষায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নবায়নযোগ্য জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে আগ্রহ তৈরি করা উচিত।

দেশের অধিকাংশ পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেকেলে। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো ময়লা-আবর্জনায় উপচানো থাকে। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশ নোংরা হয়ে থাকে। পৌরকর্তৃপক্ষ সেখান থেকে ময়লা সরিয়ে শহরের আশপাশের খাল বা খানাখন্দে ফেলে রাখে। সেখান থেকে নতুন করে আরও বিশদ আকারে জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়।  

বর্জ্য নিয়ে দুটো কথা চালু আছে। প্রথমটি হলো- আজকের বর্জ্য আগামীকালের সম্পদ। আর দ্বিতীয়টি হলো- আবর্জনাই নগদ অর্থ। তারই প্রমাণ পাওয়া যায় উন্নত দেশগুলোতে। উদাহরণস্বরূপ, সুইডেন ও নরওয়েতে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারযোগ্য অন্য বস্তুতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে, এবং এ ব্যবসাটি সেখানে অত্যন্ত লাভজনক। একে ঘিরে তারা অন্য দেশ থেকেও বর্জ্য আমদানি করছে।

বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সময়ের দাবি। মানুষসৃষ্ট বর্জ্য জলবায়ুর ওপর যে আঘাত এনেছে তা নিয়ে সারা পৃথিবী উদ্বিগ্ন। জলবায়ুর ওপর বর্জ্যের প্রভাব কমাতে জাতিসংঘ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তাদের কর্মসূচিগুলো হলো- সব দেশে জলবায়ু সম্পর্কিত বিপদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন ক্ষমতা জোরদার, জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাকে জাতীয় নীতি, কৌশল এবং পরিকল্পনায় একীভূতকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, অভিযোজন, প্রভাব হ্রাস এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, মানবিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নতকরণ ও প্রারম্ভিক সতর্কতা ইত্যাদি।  

সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত বাংলাদেশেরও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। বর্জ্য বা অপদ্রব্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকর্তৃক বর্জ্য সংরক্ষণ, নিরপেক্ষায়ন, নিষ্ক্রীয়করণ অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন নতুন জিনিস বানানো উচিত। এতে যেমন পরিবেশ লাভবান হবে, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের মানুষ।  

এহসানুর রহমান, শারমিন ইসলামলেখক 
ড. সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানুর রহমান, পশুবিজ্ঞান বিভাগ, পশুপালন অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
শারমিন ইসলাম ইভা, ইন্টার্ন শিক্ষার্থী, পশুপালন অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়




বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।