ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনা: সিনেমার কাহিনী যখন বাস্তবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
করোনা: সিনেমার কাহিনী যখন বাস্তবে

সময় পেলে সিনেমা দেখি। মন মেজাজ ফুরফুরে থাকে। সাউথ ইন্ডিয়ান কিংবা হলিউডের অ্যাকশন, থ্রিলার, গোয়েন্দা কাহিনী নির্ভর ছবিগুলো সময় পেলেই দেখি।

আমার পরিচিত একজন প্যানডেমিক (Pandemic) টিভি সিরিজটি দেখার জন্য পরামর্শ দিল। বিষয় কী? জানতে চাইলে আমাকে প্রথমে দেখার জন্য বলা হলো।

ইউটিউবে ২ পর্বের সিরিজটা আছে। ২০০৭ সালের টিভি সিরিজ। দেখা শুরু করলাম। ঘটনা সামান্য একটু ব্যাখ্যা করি।

"এমইস স্মিথ নামের একজন তরুণ আরেকজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। স্মিথ প্লেনে ওঠেন এবং প্রচন্ড হাঁচি-কাশির পর প্লেনের মধ্যেই মারা যান। প্লেনের অন্যান্য যাত্রীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয় (যদিও এরইমধ্যে কেউ কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন)। কিন্তু একজন যাত্রী কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে সেই যাত্রী যেখানে হাঁচি-কাশি দিয়েছেন, যাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন, যাদের স্পর্শ করেছেন কিংবা যাদের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করেছেন, সবাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাদের কাছ থেকেও অন্য মানুষের মধ্যে একইভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। সুপার শপ থেকে মানুষ বিভিন্ন দরকারি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মজুদ করে রাখে। অনেক আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়"।  

প্যানডেমিক (Pandemic) সিরিজটি শেষ করার পর আরেকজন বন্ধু কনটেজন (Contagion) মুভিটি দেখতে বলল। তারও একই কথা, আগে দেখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বলা হচ্ছে, এই মুভির কাহিনীর সাথে বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রায় সব কিছুই নাকি মিলে যাচ্ছে। কনেটেজনও দেখলাম। ২০১১ সালের মুভি। এই মুভির কাহিনীও আগেরটার মতোই।

"বাদুড়ের ফেলে দেওয়া আধা খাওয়া কলা খেয়ে শুকর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। সেই শুকর স্পর্শ করার জন্য হোটেলের শেফ আক্রান্ত হন এবং তার কাছ থেকে জ্যামিতিক হারে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি যেখানে হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন, যা স্পর্শ করছেন, যাকে স্পর্শ করছেন, সেখান থেকেই ভাইরাসটির বিস্তার ঘটছে। কোন ভ্যাকসিন নাই। চীন আমেরিকার রেষারেষিও দেখা যায়। ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করে। একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়"।  

ছবিটি দেখার পরে মনে হতে পারে, ওই দুটি মুভির কাহিনী নিয়েই বাস্তবে কেউ কি বর্তমানে সারাবিশ্ব নিয়ে খেলছে। এটা ভাবার কারণ হচ্ছে, অচেনা মারাত্মক একটি ভাইরাস, যার বিস্তার বাতাস কিংবা স্পর্শের মাধ্যমেই ঘটছে।

মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাস আসলেই কি কোনো প্রাণী থেকে সংক্রমণ ঘটেছে নাকি মানুষের তৈরি কোনো জীবাণু অস্ত্র, যা ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে জীবাণু অস্ত্রের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

অবস্থা এখন এতই বেগতিক, করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি কিভাবে ঘটছে, সেটা নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। প্রথমদিকে বাদুড়, সাপের কথা বলা হলেও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এখন সবাই ব্যস্ত রোগ পরীক্ষা নির্ণয় এবং ভ্যাকসিন তৈরি করা নিয়ে। সেটাই বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যাক, এটাই সকল মানুষের প্রত্যাশা। বেঁচে যাক সকল মানুষ।

কিন্তু প্রাকৃতিক কারণ ব্যতীত করোনা ভাইরাস যদি সত্যিই কোনো জীবাণু অস্ত্র হয় এবং ইচ্ছা করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে লাভের খাতায় কারো না কারো নাম যোগ হবেই। আর সিনেমার কাহিনী কিভাবে বাস্তবের সাথে মিলে যায়, সেটাও ভাবা যেতে পারে।

রিয়াজুল হক

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।