ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

নিজে সুস্থ থাকি, দেশটাকে রাখি নিরাপদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২০
নিজে সুস্থ থাকি, দেশটাকে রাখি নিরাপদ প্রতীকী ছবি

গত কয়েকদিন রাস্তাঘাটের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, আমরা করোনামুক্ত হয়ে গেছি। সবার মধ্যে কেমন যেন একটা পাত্তা না দেওয়ার মনোভাব। এমন খামখেয়ালিপনার কারণে আজ মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইতালি, আমেরিকা, ফ্রান্স, স্পেন ও ইরান। অথচ আমেরিকার পাশের দেশ হওয়া সত্ত্বেও কানাডাতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেক কম। কারণ, অনেক আগে থেকেই লকডাউন কার্যকর করেছে দেশটির সরকার।

আমরা অনেক আবেগী জাতি। সবকিছুর মধ্যে বাস্তবতার কথা চিন্তা না করে মানবতার কথা আগে চিন্তা করি।

মানবতা অবশ্যই দেখাতে হবে, তাই বলে পুরো একটি সমাজ বা দেশ যেখানে ঝুঁকির মুখে- তখনও !

১৯৭১ সালে আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করেছি। তখন কি আমরা খাবারের চিন্তা আগে করেছিলাম! তখন তো আমাদের এতো সচ্ছলতা ছিলো না। কতজন লোক না খেয়ে মারা গিয়েছিলেন? বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগতভাবে যথেষ্ট খাদ্যসামগ্রী হতদরিদ্র বা দিনমজুর বা গরিব মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে এবং তা চলমান থাকবে। যদি আমরা পনের দিন ঘরে থাকি তাহলে আমাদের নিজের, পরিবারের ও দেশের মঙ্গল। মনে হয়না খাবার নিয়ে খুব বেশি সংকট হবে। বাংলাদেশে করোনা এখন সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা এখনই যদি সচেতন না হই তাহলে বাংলাদেশকে একটা মৃত্যুপুরি বানিয়ে আমরা এর চরম মূল্য দেবো।

দুইদিন আগে যিনি ‘ভাই পুলিশ, মাইরেন না’ শিরোনামে কলাম লিখেছেন , এখন রাস্তার অবস্থা দেখে কী বলবেন? ঘরে বসে কলম হাতে নিয়ে অনেক কিছু লেখা যায়। কারণ কলমটাও আপনার, কাগজটাও আপনার। কিন্তু বাইরের বাস্তবতা খুবই কঠিন। সাহিত্যের চর্চা দিয়ে পাবলিক কন্ট্রোল করা যায় না। এ কাজ ভিন্ন। এখানে আবেগের চেয়ে বাস্তবতা বেশি।

মিষ্টি কথায় কাজ হলে কেউ কঠিন ভাষা ব্যবহার করতে চায় না। পুলিশ এদেশের মানুষের সাইকোলজি কিছুটা হলেও বুঝে। জাতি হিসেবে আমরা ‘শক্তের ভক্ত, নরমের যম’। তাই ভয় না পেলে আমরা কিচ্ছু মানি না। নিজের ক্ষতি তো বুঝিই না, নিজের লাভটাও না।

কে কাজে বের হয়, আর কে অকাজে বের হয়, সেটুকু বোঝার ক্ষমতা মহান আল্লাহ দিয়েছেন। লকডাউনের পর পার্কে কেউ বাজার করতে যায় না। রাস্তার মোড়ে বন্ধ থাকা দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া উঠতি বয়সী ছেলেরা কেউ বাজারে যাওয়ার জন্য বের হয় না। এটুকু বিচার বিবেচনায় নেওয়ার ক্ষমতা পুলিশের আছে।

আপনার আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্ন  লেখনীর মাধ্যমে জনসচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করছে। মানুষকে ঘর থেকে বের না হতে এবং সামাজিক দূরত্ব রাখার কথা বলছে। এসব শুনতে হবে, মানতে হবে।

হতে পারে আপনারা মানবাধিকারের বিষয়ে অনেক বেশি সোচ্চার। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন, মানুষকে ঘরে রেখে পুলিশের লাভ কী? আর ঘরে না থাকলেও বা পুলিশের ক্ষতিটা কী? করোনার নেই কোনো মেডিসিন। সবাই বলে ঘরে থাকতে। এখন কেবল সেটাই দাওয়াই। আর সেটা করতে পারলে দেশটা বাঁচবে। দেশই যদি না বাঁচে, দেশের মানুষই যদি না বাঁচে, মানবাধিকার দিয়ে কী করবো বলুন?

আমাদের মতো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও এদেশটাকে আমাদের মা-ই মনে করে। এ জন্য মাকেও বাঁচাতে চায়, মায়ের সন্তানদেরও বাঁচাতে চায়।

আপনি আমি ঘরে কোয়ারেন্টিন করছি, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি, ঘরে বসে অফিস করছি। অথচ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী  তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় অবস্থান করছে, দরিদ্রদের মাঝে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে, থাকছে আমাদের নিরাপত্তায় সদা তৎপর। আসুন তাদের আদেশ মানি, নিজে সুস্থ থাকি, পরিবারকে সুস্থ রাখি, দেশটাকে রাখি নিরাপদ।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, কারিকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।