ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ব্যবসায়িক দুর্যোগে কর্মী ছাঁটাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২০
ব্যবসায়িক দুর্যোগে কর্মী ছাঁটাই

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ব্যবসা-বাণিজ্যের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্বসহ বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা চরম নিবর্তনে পতিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফাণ্ড (আইএমএফ), মরগান স্ট্যান্‌লি, গোল্ডম্যান স্যাক্সসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী মন্দার ঘোষণা দিয়েছে।

এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রণোদনা, ভর্তুকি এবং সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। আমাদের সরকারও ইতিমধ্যে রপ্তানিমূলক কোম্পানিগুলোর জন্য ৫০০০ কোটি টাকার জরুরি প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে এই সাহায্য আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এত কিছুর পরেও অনেক ব্যবসায়ী তাদের ক্যাশ-ফ্লো ম্যানেজ করার লক্ষ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবছেন।  

ব্যবসার অপারেটিং খরচ কমানোর আরও অনেক রকম উপায় থাকলেও, কর্মী ছাঁটাই ব্যাপারটাই অনেক সময়ে সবার আগে চলে আসে। অথচ এ বিষয়টিই সবচেয়ে শেষে চিন্তা করা উচিৎ। ইংরেজিতে একে ‘নি-জার্ক রিয়্যাকশন’ বলে। যখন আর কোনো রকম উপায় থাকে না, শুধু তখনই কর্মী ছাঁটাই করার কথা ভাবা শুরু করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে, আপনার কর্মচারীদের পেছনে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন, তাদেরকে দক্ষ ও আপনার কাজের জন্য উপযোগী করে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। এই কর্মচারীদের যদি এখন বরখাস্ত করে দেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে যখন আপনার দক্ষ কর্মীর দরকার হবে, তখন তাদের আর পাবেন না। তারা হয় অন্য কোম্পানিতে কাজ নিয়ে নেবে, নয়তো অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়বে। বিপদের সময়ে কর্মচারী বরখাস্তের কারণে আপনার কোম্পানির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হবে। ভবিষ্যতে আপনি যখন নতুন করে কর্মচারী নিয়োগ দিতে চাইবেন, তখন অনেকেই অনাগ্রহী হবে আপনার কোম্পানিতে কাজ করতে আপনার অসংবেদনশীলতার কারণে। ক্লায়েন্টরাও কিছুটা কুণ্ঠাবোধ করবে আপনার পণ্য বা সেবা গ্রহণ করতে, কারণ অভিজ্ঞ কর্মচারী আপনার কাছে থাকবে না।

তাই কর্মচারীদের যে করেই হোক ধরে রাখতে হবে। মানবিক কারণে না হলেও, ব্যবসায়িক স্বার্থে। অপারেটিং খরচ কমিয়ে ক্যাশ-ফ্লো অব্যাহত রাখতে আপনার কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলুন। তাদেরকে সার্বিক পরিস্থিতির কথা বুঝিয়ে বলুন। দুর্যোগ অতিক্রম করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বলে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করুন। আপস করার চেষ্টা করুন, যাতে তারা আপাতত কয়েক মাস আংশিক (হতে পারে ৫০%-৭৫%) বেতন নেয়; বাকিটা তাদেরকে ভবিষ্যতে পুষিয়ে দেওয়ার কথা বলুন। খুব সমস্যা হলে ছুটিতে থেকে ঘণ্টাভিত্তিক কাজ করতে বলুন। অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার কথাও ভাবতে পারেন। আপনার যে বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী আছে, অন্য কোম্পানির হয়তো সেই ধরনের কর্মীর এখনই প্রয়োজন রয়েছে। আপনার কর্মচারীকে সেই কোম্পানিতে ‘ধার’ হিসেবে দিতে পারেন কিছুদিনের জন্য। এভাবে কোলাবরেশনের মাধ্যমে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির কর্মচারীর বেতন সাময়িকভাবে বহন করতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন বা চেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ও তাদের সাহায্য নিন।

বিশ্ব করোনাদুর্যোগ থেকে উত্তরণ পাবেই অদূর ভবিষ্যতে। তখন দেখা যাবে অনেক দেশ তাদের অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য নানান প্রকল্প নিচ্ছে। আপনার কোম্পানি যদি এই দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে দক্ষ জনবল নিয়ে তৈরি থাকে, তখন আপনি সেই প্রকল্পগুলোর জন্য প্রস্তাব দিতে পারবেন। আপনার সহিষ্ণুতা আপনার ব্যবসায়ের জন্য তখন আশির্বাদ হয়ে দেখা দেবে।

অপারেটিং খরচ কমানো ও ক্যাশ-ফ্লো ঠিক রাখার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। সেই উপায়গুলোর সবগুলো প্রয়োগ না করে কর্মী ছাঁটাই একেবারেই অবাঞ্ছনীয়। যে মানুষগুলো আপনার ব্যবসায়ের উন্নতির লক্ষ্যে এতদিন শ্রম দিয়েছে, তাদের সেই প্রচেষ্টা ও উদ্যমকে ছোট করে দেখাটা শুধু অনৈতিকই নয়, অসৌজন্যমূলকও বটে। আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে কোম্পানির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কর্মচারীদের নিয়েই এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে আমাদের সবাইকে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।