ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনায় উদাসীনতা: দিতে হবে চরম মূল্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
করোনায় উদাসীনতা: দিতে হবে চরম মূল্য

কয়েকদিন আগের কথা বলছি, সকালের ঘুম ভাঙল মাইকিং শুনে ‘শুভ নববর্ষ’ আর করোনায় একজনের আক্রান্তের খবর দিয়ে। পাশের গ্রামে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যতদূর মনে হলো, মাইকিংয়ের তথ্যটুকু আশপাশের কোনো মানুষের মধ্যে ভাবান্তর নিয়ে এলো না। এখনও এই গ্রামে কেউ আক্রান্ত হয়নি তাই কারো চিন্তাও নেই। 

এখন আসি সার্বিক পরিস্থিতির বর্ণনায়। সম্প্রতি লকডাউনের মধ্যে নরসিংদী জেলার এক চরাঞ্চলে এক মহিলা মারা গিয়েছেন, এ খবর চারদিকে রাষ্ট্র হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েকজন উৎসুক জনতা করোনায় মৃত্যু হয়েছে ভেবে দেখতে যান।

আর ফলাফল মৃত মহিলার পাড়ার লোকজন উৎসুক এই দলকে বেঁধে জোরপূর্বক কোয়ারেন্টিনে রেখে দেয়। অন্যদিকে উৎসুক দলের পাড়ার মানুষ ক্ষেপে বসে আছেন তাদের ফেরার অপেক্ষায়। অদূর ভবিষ্যতে ছোট খাটো সংঘর্ষের ইঙ্গিত।

গ্রামে ছোট ছোট মুদির দোকানগুলোতে চলছে চোর পুলিশ খেলা। পুলিশ আসার সময়টা দোকানদাররা নোট করে রেখেই দোকানের ঝাঁপ ওঠানামা করেন। পুলিশ আসছে শোনামাত্রই দোকান বন্ধ করে দেন সটান দৌড়। খুবই দুঃখজননক যে সম্প্রতি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় এক বৃদ্ধ দোকানী পুলিশের ভয়ে দোকান খোলা রেখেই দৌড় দেওয়ায় হার্ট এটাকে মারা গেছেন। আর কিছু মুরুব্বিদের কথা না বললেই নয় যারা সন্ধ্যা নামার পরই গ্রামের ছোট চায়ের দোকানটিতে ৫ মিনিটের জন্য হলেও যাবেন। চা খাবেন। বাকিদের খোঁজ খবর নিবেন। এই অল্প সময়ে করোনা ধরবে কোথ্থেকে! 

করোনার আগ পর্যন্ত মসজিদে জামায়াতের জন্য সেখানে ৬/৭ জনের বেশি কাউকে পাওয়া যেতো না। কিন্তু করোনার পর থেকে মসজিদ ভরা মুসল্লি। ইসলামী ফাউন্ডেশন ও সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সংখ্যাটা অল্প কমেছে এই যা। তাও দূরত্ব না মেনে জামায়াত চলছে ঠিকই। গ্রামে যারা সচেতন হয়েছেন তাদের সংখ্যা নেহাতই কমই। আর যারা অসচেতন তাদের সংখ্যাই বেশি। তাদের এসব বিষয়ে সচেতন করা এখন বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনা সংক্রমনের অনেক বড় ঝুঁকির জায়গা হলো বাজার। সম্প্রতি অবস্থার কথা বিবেচনা করে বড় বাজারগুলো সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দিলেও গ্রামের ভেতরে কিছু কিছু জায়গা ঠিক করে বাজার বসানো হবে বলে বাজারের দোকানীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। যার মানে ডেকে এনে রোগকে জনে জনে বিক্রি করা।  

করোনায় কিছু জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান বাদে সব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পরেও সাধারণ মানুষ ঘরে থাকা বাদ দিয়ে পাড়ায় বাড়ি বাড়ি আড্ডার পসরা সাজাচ্ছে নিয়মিত। শিক্ষার্থীরাও পাশাপাশি বসে আড্ডা না দিলেও চুপ করে মোবাইল গেমস্ খেলে যাচ্ছে, যাদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক থাকে না।  

এই খামখেয়ালীপনায় ইতোমধ্যে কড়ায় গণ্ডায় আক্রান্তের সংখ্যা গুণতে হচ্ছে নরসিংদীবাসীকে। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের পর করোনার থাবা এখন নরসিংদীর দিকে। গত ১৩ এপ্রিল একই দিনে ১৬ জন আক্রান্ত এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মোট আক্রান্তের সংখ্যা দেড় শতাধিক। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে।  

এমন পরিস্থিতিতেও মানুষের উদাসীনতা ও উৎসুক প্রবণ মন মানসিকতা কতটা ভয়াবহ অবস্থার দিকে নিচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। সামাজিক সংক্রমণের পথে করোনা। কৌতূহল ও উদাসীনতা দূর করতে না পারলে চারদিকের সকল প্রতিরোধ ও পদক্ষেপ বিফলে যাবে। প্রতিদিন গুণতে হবে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা।  

লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।