ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বেসরকারি শিক্ষকদের সঙ্কট: প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
বেসরকারি শিক্ষকদের সঙ্কট: প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সশ্রদ্ধ সালাম নিবেন। 
আপনি ২৭ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। হয়তো বন্ধই থাকবে। করোনার ক্রমবর্ধমান গতি দেখে তাই মনে হচ্ছে। তাছাড়া আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোনো প্রভাব ফেলে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে আপনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে?

সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা না হয় নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা সরকারি কোনো সুবিধা গ্রহণ করেনি বা পায়নি, তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে? তারা ছয় মাস সংসার চালাবেন কীভাবে? 

কিন্ডার গার্টেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেশের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি বা প্রাইভেট।

হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত। শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর তাদের বেতন নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা বেতন দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। ফলে ইচ্ছে থাকলেও প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। তাহলে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাবেন কীভাবে?

ধার দেনা করে, খেয়ে না খেয়ে, বাড়িভাড়া বকেয়া রেখে না হয় কায়ক্লেশে সংসারটা চালালো। কিন্তু প্রতিষ্ঠান খোলার পর কি তাদের সমস্যা লাঘব হবে? বকেয়া বেতন কি তারা এক সাথে পাবেন? যদি না পান, তাহলে তারা তাদের বাড়িভাড়া ও পূর্বঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে?

ধরে নিলাম, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো। অক্টোবরের ১ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলো। তখন কয়জন শিক্ষার্থী এক সাথে ছয় মাসের বেতন দিতে পারবে? সরকারি চাকরিজীবী ও উচ্চ বিত্তের সন্তানরা হয়তো বেতনটা পরিশোধ করতে পারবে। যারা প্রবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, দরিদ্র, হকার, শ্রমিক, ড্রাইভার- তারা? তাদের কি এক সাথে ছয় মাসের বেতন দেয়ার সামর্থ্য তখন থাকবে?

দীর্ঘ সময় ধরে করোনা ভাইরাসের নির্মম থাবার পর বিশ্বের মতো বাংলাদেশের চিত্রও বদলাবে। ঋণে জর্জরিত থাকবে বেশিরভাগ মানুষ। দেশে থাকবে অর্থনৈতিক সংকট। লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষ ছুটবে দিগ্বিদিক। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস উঠবে মানুষের। দেশজুড়ে থাকবে এক অস্থির পরিস্থিতি। এই অবস্থায় কয়জন শিক্ষার্থী একদিনও ক্লাস না করে ছয় মাসের বেতন দিয়ে দেবে? 

মান্যবর প্রধানমন্ত্রী,
আপনি মানবতার মা। এই দেশের জন্যে আপনি ও আপনার পরিবারের যে ত্যাগের নজির রয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দেশের মানুষকে ভালো রাখতে দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের সবচে বেশি পরিশ্রমী মানুষ এখন আপনি। করোনা মোকাবেলায় আপনার উদ্যোগ, শ্রম ও তৎপরতা বিশ্বপ্রশংসিত। এই সংকটকালে নানা খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করে ইতোমধ্যেই আপনি সংকটাপন্ন মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। একজন উদার, মানবিক, জনদরদি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এই সংকটকালে দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে প্রণোদনা দেওয়ার সবিনয় অনুরোধ করছি। অন্তত শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতনটা নিশ্চিত করুন।

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আর, এই শিক্ষার একমাত্র কারিগর হলেন শিক্ষক। শিক্ষকদের বাঁচিয়ে না রাখলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় পড়বে। দেশ এগোবে অন্ধকার বলয়ের দিকে। তাই, উপর্যুক্ত বিষয়গুলো আপনার সদয় বিবেচনায় রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ঢাকা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।