ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনাময় পৃথিবীতে স্লোভেনিয়া ও প্রবাসে বন্দি জীবনের আকুতি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২০
করোনাময় পৃথিবীতে স্লোভেনিয়া ও প্রবাসে বন্দি জীবনের আকুতি!

মে মাস!
ইউরোপে বলতে গেলে বসন্ত এসেই গেছে। কয়েক দিন আগেও রাস্তার ধারে নির্জীব আর প্রাণহীনভাবে যে গাছগুলো দাঁড়িয়েছিল এপ্রিল বা মে মাস আসতে না আসতে একেবারে অবিশ্বাস্যভাবে গাছগুলো ভরে উঠেছে সবুজ কচি পাতায়। শাখায় শাখায় হেসে উঠেছে ফুল। 

কেউ বিশ্বাস করবে না কয়েক দিন আগেই প্রকৃতির প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ছিলো দুষ্কর; এপ্রিল আসতে না আসতেই প্রকৃতি যেন একেবারে নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। চারিদিকে পাখিদের কলতান, মৌমাছিগুলো যেন ছুটে চলেছে আপন গতিতে ফুল থেকে পুষ্পরস সংগ্রহ করতে।

রোদেলা ভোরের বাতাস সত্যি মৃদুমন্দ, এক চিলতে বসন্তের রোদ যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ হীরের টুকরো থেকেও দামি।  

ইউরোপে বসন্ত সত্যি অসাধারণ, ব্যাকরণের কোনও উপমা দিয়ে তার সৌন্দর্য্য বলে বোঝানো যাবে না।

তবে দেরিতে হলেও প্রকৃতির এ চির যৌবনা বসন্তের মতো মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে একটু একটু করে জনজীবনে বসন্তের রং লাগতে আরম্ভ করেছে।  

কয়েক দিন আগেও যেখানে সব কিছু ছিলো কুয়াশার চাদরে মোড়া, হঠাৎ করেই যেন কুয়াশার ঘন আবরণ একটু একটু করে বিদীর্ণ করে সূর্যের আলো ফুটতে আরম্ভ করেছে। করোনা যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্লোভেনিয়া ধীরে ধীরে যেনো তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পাচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য ২১২টি দেশের মতো স্লোভেনিয়াও প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের নিষ্ঠুর থাবা থেকে রেহাই পায়নি। তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি তেমন একটা জটিল আকার ধারণ করতে পারেনি। বিশেষ করে সংক্রমণের হার এবং একই সাথে মৃত্যুর হার এখানে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটা নিম্নগামী। আমরা সবাই জানি যে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থানে থাকা দেশটির নাম ইতালি অথচ ইতালির পাশের দেশ হওয়া সত্ত্বেও স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ সে অর্থে ছিলো না বললেই চলে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ইতালির সীমান্তবর্তী স্লোভেনিয়া অংশ অর্থাৎ পশ্চিম স্লোভেনিয়াতে সমগ্র স্লোভেনিয়ার মধ্যে নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো সবচেয়ে কম। স্লোভেনিয়ার সরকারের গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপ, দেশটির প্রশাসনের তৎপরতা ও দেশটির সাধারণ মানুষের সচেতনার কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির একটি রাষ্ট্র যেভাবে গোটা করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছে, তা ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশংসার সৃষ্টি করেছে এবং একই সাথে করোনা মোকাবিলায় দেশটিকে সমগ্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে স্লোভেনিয়া তেমনভাবে আমাদের দেশের মানুষের কাছে পরিচিত না হওয়ায় আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোতে স্লোভেনিয়া নিয়ে সে অর্থে তেমন আলোচনা হয় না বললেই চলে।

গত কয়েক দিন ধরে স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে হাঁটছে বলে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। গত ০৯ মে স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে স্লোভেনিয়াতে নতুন করে আরও চারজন এ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। পাশাপাশি গেল চব্বিশ ঘণ্টার ব্যাবধানে স্লোভেনিয়াতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে এ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে। এ নিয়ে স্লোভেনিয়াতে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১,৪৫৮ জনে এবং এখন পর্যন্ত এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা একশোতে পা দিলো। এছাড়া সর্বমোট সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ২৫৯ জন। মাঝখানে ০২ মে এবং ০৩ মে একটানা ৪৮ ঘণ্টা স্লোভেনিয়াতে এ সংক্রমণের হার একেবারে শূন্যতে গিয়ে পৌঁছেছিলো অর্থাৎ এ ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে কেউই দেশটিতে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হননি।

স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশায় স্লোভেনিয়ার শিশুরাস্লোভেনিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইয়ানেজ ইনশার গত সোমবার এক রেডিও বার্তায় জানিয়েছেন, দেশটিতে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে যদি সাধারণ মানুষজন খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে সচেষ্ট না হয়, দ্বিতীয় ধাপে গত শতাব্দীর প্যানডেমিক স্প্যানিশ ফ্লুর মতো আবারও করোনা হানা দিতে পারে স্লোভেনিয়াতে। গত মার্চ মাসের ১৯ তারিখ থেকে স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসের মহামারি বিস্তৃতি প্রতিহত করতে জারি করা জরুরি অবস্থা অনেকটা শিথিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কয়েকটি ধাপে। এখন আর স্লোভেনিয়ার অভ্যন্তরে এক মিউনিসিপ্যালিটি থেকে অন্য মিউনিসিপ্যালিটিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনও ধরণের নিষেধাজ্ঞা নেই। বার, রেস্টুরেন্ট, কফিশপগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং আজ এগারো মে সোমবার থেকে স্লোভেনিয়ার অভ্যন্তরে বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন সেবা পুনরায় চালু করে দেওয়া হবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সবাইকে নিশ্চিত করেছেন।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কবে থেকে খুলে দেওয়া হবে সে ব্যাপারে অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই সপ্তাহের মধ্যে স্কুল, কলেজ, কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করা কতিপয় শিক্ষার্থীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং তাদেরকে কোভিড-১৯ টেস্টের আওতায় আনা হবে। যদি সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায় তাহলে এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হতে পারে। কিছু কিছু শিক্ষা-প্ৰতিষ্ঠান অবশ্য ইতোমধ্যে শিক্ষাবর্ষ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে এবং অনলাইন ভিত্তিতে তারা ফাইনাল পরীক্ষার আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে। এছাড়াও পরিস্থিতি এ রকম স্থিতিশীল থাকলে মে মাসের শেষের দিকে যথাসময়ে স্টেট মাতুরা এক্সাম অনুষ্ঠিত হবে। স্টেট মাতুরা এক্সামকে আমাদের দেশের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এছাড়াও ৪০০ বর্গমিটারের কম ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট সকল আর্ট গ্যালারি, মিউজিয়াম, লাইব্রেরিসহ সকল ধরণের দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে পাবলিক প্লেসগুলোতে এখনো সবাইকে ১.৫ মিটারের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসায় জনগণের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। এখন অনেক সময় রাস্তায় হাঁটলে বোঝা যায় না কয়েক দিন আগেও করোনার ভয়ে সকলে ছিলো ভীত আর সন্ত্রস্ত। খেলার মাঠগুলোতে চোখ বাড়ালে দিব্যি দেখতে পারবেন যে বসন্তের মিষ্টি রোদে বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। বাচ্চারাও আপন মনে ছুটে বেড়াচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের মতো-

‘হা রে রে রে রে রে, আমায় ছেড়ে দে রে দে রে-
যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে।
ঘন শ্রাবণধারা যেমন বাঁধনহারা
বাদল-বাতাস যেমন ডাকাত আকাশ লুটে ফেরে.. ‘

সব কিছু আগের অবস্থানে ফিরে আসছে এবং নিঃসন্দেহে এটি আমাদের সকলের জন্য আশার বাণী হলেও আমার জীবনে খুব বেশি একটি স্বস্তি নেই। আমার জীবন্ত চৈত্রের সেই দুপুরের মতোই আজও যেনো এক বিরাণভূমি। বাংলাদেশে থাকতে মনে করতাম ইউরোপ কিংবা আমেরিকা অথবা অস্ট্রেলিয়াতে পা রাখা মানেই জীবনে সার্থকতা অর্জন করা। কিন্তু ইউরোপে আসার পর মনে হয় এ যেনো এক মেকি স্বপ্ন ছাড়া আর কোনও কিছুই নয়।

কোনও কিছু না হারালে তার মর্ম কোনও দিন বোঝা যায় না। আজকের এ দিনে মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। রমজান বা ঈদের অনুভূতিও একদম শুকিয়ে গেছে। এবারের রমজান অন্যবারের তুলনায় আলাদা। কিশোর বয়সের স্মৃতি বিজড়িত মালিবাগ কিংবা মৌচাক অথবা পল্টনের সেই রাস্তাগুলো আমার ডাকছে। ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে যাই পুরান ঢাকার সেই বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর, নান্নার বিরিয়ানি, শমসের আলীর ভুনা খিচুড়ি কিংবা প্রায় সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের সেই ইফতারির স্বাদ নিতে।

বসন্তের আগমনে ফুলে ফুলে সেজেছে স্লোভেনিয়া।  লেখকের ছবিআজ সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলাম আমাদের ডরমেটরি যে হাই স্কুলের অধীনে তারা তাদের এ বছরের শিক্ষাকার্য সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্লোভেনিয়াতে জরুরি অবস্থা জারি করার পর থেকেই আমাদের ডরমিটরি অনেকটা ফাঁকা, স্লোভেনিয়ার যে সকল শিক্ষার্থী আমাদের সাথে থাকতো সকলে তাদের বাসায় ফিরে গিয়েছে। আজ এ ঘোষণার পর অনেকে আবার এসেছে ডরমিটরিতে তাদের স্পেস সম্পূর্ণ ফাঁকা করতে। তাদের সাথে পরিবারের অন্যান্য অনেকে এসে, অনেকের  হয়তো বা আর কোনও দিন পদচিহ্ন পড়বে না এখানে। কেউ আবার শিগগিরই অন্য কোথাও চলে যাবে। শূন্য ডরমিটরিতে একা বসে আছি সেই চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চোখ রেখে। স্লোভেনিয়াতে বাহিরের দেশের ইমিগ্র্যান্ট বলতে অন্যান্য প্রাক্তন যুগোশ্লাভ দেশের যারা নাগরিক এদেশে বসবাস করেন যেমন- বসনিয়ান, মেসিডোনিয়ান, সার্বিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান। তাদের অনেকে নিজ দেশে ফিরে গিয়েছেন কিন্তু আমি কেবল একলা বসে কাঁদছি।

পড়াশুনায় একদম মন নেই, চারটি সাবজেক্টের পরীক্ষা বাকি এখনও। মিড টার্মে ফেল এসেছে, অনলাইনে ক্লাস আসলে যথার্থ নয়। ইউনিভার্সিটি খোলা থাকলে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থাকলে যেভাবে ক্লাসগুলো হতো অনলাইনে তার সিকিভাগও হয়ে ওঠে না। এক অমাবস্যা এসে পুরো জীবনটাকে অন্ধকারে ঘিরে দিয়েছে।

কতো দিন মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাই না তার হিসেব নেই। দেশে থাকতে বাবার যে কোনও কড়া কথা বিষের মতোই মনে হতো, অথচ এখন বাবা নেই পাশে। কেউ আর আমাকে শেষ রাতে ডেকে দেয় না সেহরি খাওয়ার জন্য, আমার জন্য ইফতারির টেবিলও সাজায় না কেউ। ছোটো বোনের সাথেও ঝগড়া করা হয় না অনেক দিন্, পাশের বাসার ছোটো দুই ভাই লাবিব আর সিয়ামকে একবার দেখার জন্য আর তাদের দুইজনে আধো আধো কথা শোনার জন্য প্রাণটা ভীষণ ছটফট করছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সাময়িক সময়ের জন্য আমাকে বেকার করে দিয়েছে, কোনও কাজও নেই এ মুহূর্তে। অনিশ্চিত এক প্যারাডক্সের সম্মুখে আজ আমার জীবন দাঁড়িয়ে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াতে সে রকম প্রবাসী বাংলাদেশি নেই। সব মিলিয়ে এখানে ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো বাংলাদেশির বসবাস যাদের সবাই থাকেন রাজধানী লুবলিয়ানাতে। তবে অল্প সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন যাদের বসবাস দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মারিবোরে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ইউরোপের এ সকল দেশে যারা প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন তাদের মতো সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকে কেউই সে রকম শক্তিশালী অবস্থানে নেই। নেই কোনও সুসংগঠিত বাংলাদেশি কমিউনিটি। আমি থাকি ভিপাভাতে যেটি অনেকটা গ্রামীণ একটি এলাকা। এখানে আমি একা বাংলাদেশি, আমার বাসা থেকে ইতালির বর্ডার খুব কাছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক দিন্ সেখানে যাওয়া হয় না। মায়ের হাতের রান্না করা সাদা পোলাও, আলু দিয়ে গরুর মাংসের ঝোল আর চিকেন রোস্টের কথা মনে পড়ছে ভীষণ।  

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এবারের ঈদ আনন্দ আরও ফিকে। ঘরে যা মশলা ছিলো সব শেষ হয়ে গেছে, ইউরোপিয়ানদের মতো আধাসিদ্ধ মশলাবিহীন খাবার গিলে দিন কাটছে আমার। যা এক কথায় বিষাদের। বর্ডার খোলা থাকলে ইতালিতে গিয়েই সকল প্রয়োজনীয় সদাপাতি করে নিয়ে আসতাম। কিন্তু কবে নাগাদ সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং দুই দেশের সীমান্ত সংযোগ পুনরায় প্রতিস্থাপিত হবে কেউই বলতে পারে না নিশ্চিতভাবে। এবারের ঈদে কেউ আমাকে নতুন কাপড়ও দিবে না।

অঘোষিত এক কারাগারে জীবনটা বন্দি হয়ে আছে। দেশে যেতে ইচ্ছে করছে ভীষণভাবে, করোনা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ফ্লাইটও ছেড়ে যাবে না বাংলাদেশ কিংবা স্লোভেনিয়ার কোনও জায়গা থেকেই।  

মহামারি করোনা ভাইরাস আমার জীবনটাকে সত্যি এক বন্দিদশায় ঠেলে দিয়েছে। একাকী জীবনের ক্ষত যেনও আরও গভীর হয়ে গেছে। কবে এ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবো সেটা বলতে পারবো না সঠিকভাবে। তবে সামগ্রিক অবস্থা সম্পূর্ণভাবে সত্যি যেদিন সবার নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং যেদিন সকল ফ্লাইট চলাচল পুনরায় আবার চালু করা হবে, সেদিন সবার আগে আমি ছুটে যাবো আমার প্রিয় বাংলাদেশের দিকে। মা, বাবা, ছোটো বোন আর নানীকে জড়িয়ে ধরবো আবার। পাশের বাসার ছোটো ভাই লাবিব আর সিয়ামের গাল দুটি টিপে দিবো আবার। যাদের সাথে জীবনে অন্যায় করেছি সকলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো। জানি না সেদিন কতো দূরে আর! 


লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।