ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দায়বদ্ধতা কি শুধু গণমাধ্যমের?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
দায়বদ্ধতা কি শুধু গণমাধ্যমের?

‘কোভিড-১৯’ যা করোনা ভাইরাস নামে বিশ্বে অধিক পরিচিত। সম্প্রতি এটি গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। কারণ এই ভাইরাসের তাণ্ডবে প্রায় থমকে গেছে বিশ্ব। এ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন কৌশলে কাজ করে চলেছে। চীন, ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ইতোমধ্যে এ মহামারি রোধে সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। 

উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি সরকার, সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যম ও ব্যক্তি পর্যায়ের পদক্ষেপের কারণে করোনা মোকাবিলা ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক এ মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রেখে জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধানে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসিতও হয়েছে।  

গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। নানা দুর্যোগে-সঙ্কটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে সেগুলো মোকাবেলা করেছে। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ। ’ 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আমাদের দেশে করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় গণমাধ্যম ও সরকার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে প্রতীয়মান। মার্চের প্রথমদিকে (৮ মার্চ) এদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া করোনা বিষয়ে জনজনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশিপাশি করোনা সংক্রান্ত তথ্যাবলীর সর্বশেষ সংবাদ প্রচার করে পাঠক মনের উৎসুক্য মিটিয়েছে। করোনার কারণে নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার সাথে সমাধানকারী বা সেবাদানকারী কর্তাদেরও মিডিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে গণমাধ্যম । টকশো কিংবা আলোচনার টেবিলে করোনা কিংবা জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিশষজ্ঞ মতামত তুলে ধরতেও গণমাধ্যমকর্মীগণ সচেতন ছিলেন।  

বর্তমানে ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমের অনেকেই ইতোমধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্তও হয়েছেন।  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গৃহবন্দী অবস্থায় মানুষ গণমাধ্যমের সমান্তরালে ঝুঁকেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। যুব সমাজের একটা বড় অংশের কাছে সোশ্যাল মিডিয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যতম বিচরণক্ষেত্র। সোশ্যাল মিডিয়া গণমাধ্যমের বিকল্প কি না তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে করোনাকালে প্রতীয়মান হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত ফেসবুক গণমাধ্যমের বিকল্প হতে গিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের পাশিপাশি গুজব সৃষ্টিতে ব্যবহারকারীরা এ সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার বানিয়েছে। এর ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কোনটি সঠিক তথ্য তা যাচাই করতে বিভ্রান্ত পাঠককে/ ব্যবহারকারীকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দারস্থ হতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকার ফলে মানসিক চাপের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণকারী রাজনৈতিক নেতা কিংবা সমাজকর্মীর মৃত্যু সংবাদ প্রচার এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকৃত উল্লাস গবেষণার ফলকে সমর্থন করছে কি না সচেতন পাঠক ভেবে দেখতে পারেন।

বিশ্বের সবেচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক। ফেসবুক বলছে, তার সাইট ব্যবহার করে আপনি- (১) কাউকে গালি দেবেন না, ভয় দেখাবেন না, কিংবা হয়রানি করবেন না; (২) এমন কিছু পোস্ট করবেন না যা বিদ্বেষ, হুমকি সৃষ্টি করে কিংবা পর্নো ঘরানার; যা সহিংসতা উস্কে দেয় কিংবা অশ্লীল; (৩) বেআইনি, বিপথগামী করে এমন কিছু কিংবা কাউকে ব্যথিত, আহত করে বা মানসিক চাপে ফেলে বা বৈষম্য সৃষ্টি করে এমন কিছু ফেসবুক ব্যবহার করে করবেন না; (৪) এমন কিছু পোস্ট করবেন না বা এমন কোনো কাজ ফেইসবুকে করবেন না যা অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করে কিংবা অন্য কোনোভাবে আইন ভঙ্গ করে।

আমরা এইসব নির্দেশনা পড়ে দেখি না, দেখলেও মেনে চলার চেষ্টা করি না। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নিদর্শনা জারি করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সহ অন্যদের জন্য রয়েছে আরও কিছু নীতিমালা। সেটা সম্পের্ক বেশিরভাগ ব্যবহারকারী সচেতন নন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিক পরিসরে আমাদের আচরণ অন্যের জন্য হানিকর হতে পারে; হতে পারে আমার নিজের জন্যও আইনি দিক দিয়ে বিপজ্জনক। সেটা ব্যবহারকারীগণ যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবেন ততই মঙ্গল।

সুস্থ সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন থাকতে হবে, তেমনি সে স্বাধীনতা যেন অন্যের স্বাধীনতা কিংবা অধিকারে অযাচিত হস্তক্ষেপ না হয় সেদিকেও গণমাধ্যমকর্মীদের লক্ষ্য রাখতে হবে।  

বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশের বিকাশ তথা টেকসই উন্নয়ন তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া সম্ভব নয়।  

বস্তুগত উন্নয়ন ও ভৌত উন্নয়নের পাশাপাশি মেধা ও মননে বিকশিত, স্বাধীনতার আদর্শে উজ্জ্বীবিত একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার গঠনমূলক চর্চা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, জাতীয় সংসদ সচিবালয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।