ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শেখ হাসিনা মিডিয়াবান্ধব না বিদ্বেষী

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২১
শেখ হাসিনা মিডিয়াবান্ধব না বিদ্বেষী নঈম নিজাম

বাজায় কে

মেঘের মাদল

ভাঙ্গালে ঘুম
ছিটিয়ে জল

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ইতিহাসের অনেক হিসাব-নিকাশ থাকে। সব হিসাব-নিকাশ সবার জন্য সমানভাবে মেলে না।

সেদিন একজন প্রশ্ন করলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিডিয়াবান্ধব না মিডিয়াবিদ্বেষী? এই প্রশ্ন কেন করলেন পাল্টা জানতে চাইলাম। জবাবে সেই বন্ধু বললেন, বর্তমান সময়ের কিছু ঘটনার কারণে এ প্রশ্ন উদয় হয়েছে। আজকাল অনেকের কাছে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ঘিরে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। টানা ক্ষমতায় থাকার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। সব বিষয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আসবে। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবে ক্ষমতায় থাকার কোনো নজির নেই। স্বাধীনতার পর নানামুখী ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত মোকাবিলা করতে করতেই সময় চলে গিয়েছিল। ’৯৬ সালের ক্ষমতার মেয়াদ আর এখনকার বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানকে মেলানো যাবে না। আর সরকারি দল ও বিরোধী দলের হিসাবও এক হয় না। একটি দল টানা ক্ষমতায় থাকলে ভালো-মন্দের মিশ্রণে চলতে হয়। ফুলে ভ্রমর আর মধুতে মৌমাছি বসবেই। মধুর লোভে সরকারি দলের ঘাটে ঘাটে তৈরি হয় সুবিধাভোগী। অনেক সময় সুবিধাভোগীদের তৎপরতায় হারিয়ে যায় ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। এটা শুধু আওয়ামী লীগের বেলায় তা নয়। আমাদের মতো দেশে যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের ওপর আগাছা-পরগাছা ভর করে। ছোটবেলায় ফুলের বাগান করতাম। গোলাপ, গন্ধরাজ, জবা, টগরের সঙ্গে থাকত বাহারি পাতার গাছ। সেই গাছ দেখতে সুন্দর, কিন্তু ফুল হতো না। থাকত বাগানের শোভা হয়ে। মন দিয়ে পাতাবাহারও লাগাতাম। সরকারও তেমনই। কিছু মানুষ দক্ষতা নিয়ে কাজ করে। আবার কেউ বঞ্চনা নিয়ে পাতাবাহারের শোভা হয়ে থাকে। অনেকটা ফুল বাগানের মতো। বাগানের যত্ন না নিলে আগাছার দাপট বাড়ে। তখনই সমস্যা তৈরি হয়। ফুলের গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়। পাতাবাহারও টিকতে পারে না। আগাছাকে ঘিরে ফুল বাগানে আসে সাপ। খেয়াল না করলে সেই সাপের কামড়ে মরতে হয় মালি বা বাগান মালিককে। প্রকৃতির এ এক নিষ্ঠুর খেলা।

রাজনৈতিক দলে আগাছা জমে ক্ষমতাকালে। বিরোধী দলে নিরুনির কারণে আগাছা হয় না। বিএনপির রাজনীতির দিকে তাকালেই কঠিন বাস্তবতা বোঝা যায়। দুঃসময়ের বিএনপি খুঁজে পাচ্ছে না সুসময়ের অতিথি পাখিদের। বসন্তের কোকিলরা কেটে পড়েছে। কোকিল বাদ দিন সেই সময়ের দাপুটে নেতা হারিছ চৌধুরী কোথায়? জবাবে কেউ কিছু বলতে পারে না। কেউ জানে না হারিছ কেন লাপাত্তা। অথচ এক সময়ে তিনি যা খুশি তা করতেন। অহংকারে মাটিতে পা পড়ত না। এখন তিনি নিখোঁজ। কোনো পাত্তা নেই। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপি কেউ তাকে পাচ্ছে না। মারা গেছেন এমন খবরও নেই। তাহলে হারিছ চৌধুরী গেলেন কোথায়? কেনই বা তিনি অন্তর্ধান হলেন? কী এমন গোপনীয়তা ছিল যা প্রকাশের ভয়ে পালিয়েছেন ওয়ান-ইলেভেনে। ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির অনেক বিতর্কিত কান্ডের জবাব একমাত্র হারিছ দিতে পারেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ইলিয়াস আলী বলতেন, হারিছ সর্বনাশ করছে। ইলিয়াস স্পষ্ট কথা বলতেন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করতেন না। তাই তখনই হারিছকে নিয়ে দলকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন। এখন বের হচ্ছে হারিছের অন্তর্ধানে জড়িয়ে রয়েছে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের উত্থান, চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধার, শাহ কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ অনেক ঘটনার আড়ালের রহস্য। ক্ষমতাসীন দলগুলোর ভিতরে-বাইরে অনেক রহস্য থাকে। সব সময় সব রহস্য বের হয়ে আসে না।

ক্ষমতার নৌকা চলে পাহাড় দিয়ে। বিরোধী দলের ভালো নৌকা নদীতে চলতে চায় না। উজানের স্রোতে হোঁচট খেয়ে ডুবো ডুবো হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একদা বিরোধী দলে ছিল। ১৯৮১ সালে কঠিন পরিস্থিতিতে এই দলের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। উজানে বৈঠা হাতে নৌকার মাঝির দায়িত্ব নিয়েই নামেন কঠিন সংগ্রামে। দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সিনিয়রদের বাড়াবাড়ি, আওয়ামী বিরোধী মিডিয়ার দাপট, রাষ্ট্রযন্ত্রের নানামুখী ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, বারবার দলে ভাঙন, চ্যালেঞ্জ, পাল্টা চ্যালেঞ্জ সবকিছু হজম করতে হয়েছে তাঁকে। মিডিয়াতে তখন চীনাপন্থি আর মস্কোপন্থি সাংবাদিকদের একচেটিয়া অবস্থান। শিল্প সংস্কৃতির জগৎও ছিল তাই। সবকিছুতেই মুষ্টিমেয় কিছু সমর্থক নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া দলকে গোছাতে থাকেন। দল ভেঙে বাকশাল গঠন, ’৮৬ সালের নির্বাচন ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জের। ১৫-দলীয় জোটের বৈঠক হয় বাকশাল চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের ধানমন্ডির বাড়িতে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীও সেই বৈঠকে যোগ দেন। কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ তখন দাপুটে নেতা। সবাই মিলেই ভোটের সিদ্ধান্ত নিলেন। শেখ হাসিনা প্রথমে ভোটের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের চাপে সিদ্ধান্ত বদলান। বৈঠকে একজন নেতা জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাতদলীয় জোটও ভোটে যাবে। সবাই মিলে ভোটে পরাস্ত করবেন এরশাদকে। পরে খালেদা জিয়া ভোটে যাননি। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ইনু ভোট বর্জন করে ভাঙল ১৫ দল। এই বাম দলগুলো গঠন করল পাঁচদলীয় জোট। ভোটে গেলেন শেখ হাসিনা। সংসদে গিয়ে তিনি এরশাদ সরকারের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন সংসদের ভিতরে-বাইরে। সেই সময়ে শেখ হাসিনার চেয়ে বড় মিডিয়াবান্ধব আর কে ছিলেন? মিডিয়াকে তিনি আপন করে তোলেন।

এরশাদকে হটাতে সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও উদ্যোগ নেন শেখ হাসিনা। তিনি বর্জন করেন সংসদ। প্রস্তুতি নেন পদত্যাগের। এরশাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট গেল, মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এমপিদের বড় অংশই সংসদে অনাস্থা দেবেন। রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করবে। কাজী জাফর আহমেদও একই কথা জানালেন এরশাদকে। ব্যস সংসদ ভেঙে দিলেন এরশাদ। মিজান চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিলেন। আওয়ামী ঘরানার আরও অনেককে বাদ দেন ক্ষমতা থেকে। সেই সময়ে মিজান চৌধুরীর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেই সাক্ষাৎকারের কথা আরেক দিন লিখব। শেখ হাসিনা গুজবকে পাত্তা দিলেন না। তিনি রাজপথে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করেন। ’৮৭ সালে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে তিন জোটের নেতৃত্বে। দুই নেত্রীর মাঝে অঘোষিত ঐক্য হয় আন্দোলন ইস্যুতে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ’৯০ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এরশাদের পতন হয়। মৃত্যুর দুই বছর আগে এরশাদ অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছেন, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নূরউদ্দিন তাঁর সঙ্গে বিট্রে করাতে তিনি ক্ষমতা ছেড়েছেন। আতিককে তিনি আর এক বছর রাখলে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হতো না।

এরশাদের পতনের পর নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন শেখ হাসিনা। সবার ধারণা ছিল তিনি ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু নানামুখী চক্রান্তের কবলে পড়ে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারলেন না। ক্ষমতায় এলো বিএনপি। সেই সময়ে নাঈমুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে প্রকাশিত আজকের কাগজে কাজ শুরু করি আমরা একদল তারুণ্য উদ্দীপ্ত যুবক। আমার বিট পড়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়। সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর তালিকায় আমিও যুক্ত হই। ’৯১ সালের ভোটের আগে পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে বের হতাম খুব ভোরে। সকালে আলু ভর্তা, ডিম, ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে নেত্রীর গাড়ি বহরে যুক্ত হতাম। তিনি নিজেও অনেক সময় নাশতার টেবিলে যোগ দিতেন। আবার কখনো তৈরি হয়ে হাসতে হাসতে গাড়িতে ওঠার সময় বলতেন, আমার সাংঘাতিকরা এসে গেছে, এবার যাত্রা শুরু করা যায়। তখন এত সাংবাদিক ও পত্রপত্রিকা ছিল না। এত নিরাপত্তার ব্যাপারও ছিল না। বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন ছিল না। তিন-চারটি পত্রিকা ও ইউএনবির সাংবাদিকরা সফরসঙ্গী হতেন। বেশির ভাগ সময় ফটোসাংবাদিক থাকতেন একজন। গাড়ি থাকত দুটি। নেতারা যোগ হলে বাড়ত। নেত্রীর গাড়ি থাকত সামনে। পেছনের জিপে মৃণাল কান্তি দাসের নেতৃত্বে সাংবাদিকরা। সফরে নজীব আহমেদ আর মৃণাল কান্তি দা সবাইকে প্রাণবন্ত রাখতেন। শেখ হাসিনা ’৯১ সালের ভোটে পরাজয়ের পর সবাই ভেবেছিলেন তিনি দমে যাবেন। থমকে যাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলের ভিতরে ড. কামাল হোসেন, আবদুল মান্নান, মেজর জেনারেল (অব.) খলিলুর রহমানসহ অনেকে নেত্রীর বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে ছিলেন। শেখ হাসিনা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করলেন না। সবকিছু মোকাবিলা করেই ’৯১ সালের সংসদ গঠনের পর তিনি নতুন করে সারা দেশ সফর শুরু করেন। দলকে সুসংগঠিত করতে থাকেন। কয়েকজন সাংবাদিক সফরসঙ্গী হিসেবে সারা দেশ সফর ও তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাই। তিনি সবাইকে আপন করে নেন।  

ঢাকার বাইরে সফরের সময় খেয়াল করতাম শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ পড়ে দিন শুরু করতেন। নাশতা সেরেই বেরিয়ে পড়তেন। সারা দিন ঘুরতেন। সভা-সমাবেশ করতেন টানা। পথসভা থাকত যেখানে সেখানে। দলের মাঠের নেতাদের বাড়িতে চলে যেতেন। ভরদুপুরে অনেক সময় খাওয়ারও সুযোগ পেতেন না। আমরা হঠাৎ করে দেখতাম গাড়িতে রুটি, কলা, মুড়ি। মৃণালদা বা নজীব ভাই অথবা অন্য কেউ এসে বলতেন আপা আপনাদের জন্য পাঠিয়েছেন। খেতে বসলে শেখ হাসিনা প্রথম প্রশ্ন করতেন, তার সফরসঙ্গী ড্রাইভার, সাংবাদিক আর নিরাপত্তারক্ষীরা খেয়েছেন কি না। তারপর তিনি খেতে বসতেন। একবার বগুড়াতে ঝামেলা বেধে যায়। সময়টা মনে হয় ’৯২ সালের। বগুড়া সার্কিট হাউসে পৌঁছে আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ঢাকায় সংবাদ পাঠানো নিয়ে। খাওয়ার সময় ছিল না। সেই সময়ে সংবাদ পাঠানো সহজ ছিল না। ফোনে সংবাদ পাঠানো হতো। ফ্যাক্সও পাওয়া যেত না অনেক শহরে। টেলিফোনও সহজলভ্য ছিল না। অনেক সময় সার্কিট হাউসে নেত্রী তাঁর রুমে বসে আছেন। আমরা দল বেঁধে সংবাদ পাঠাচ্ছি ওনার রুম থেকে। তিনি বিরক্ত হতেন না। বিশ্রামের সময় পেতেন না। বগুড়াতে সংবাদ পাঠিয়ে এসে দেখি আমাদের জন্য রাখা খাবার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা খেয়ে শেষ। খাবার না পেয়ে আমরা আশপাশে রেস্টুরেন্টের সন্ধানে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। নেত্রীর সফরসঙ্গী ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের একজন ছুটে এলেন। বললেন, আপা আপনাদের ডাকছেন। গিয়ে দেখলাম, তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বগুড়ার নেতাদের বকছেন। খেতে বসে তিনি শুনলেন, সফরসঙ্গী সাংবাদিকরা খাবার পাননি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়েন। তিনি নিজেও খাননি। বগুড়ায় রাতে থাকার কথা ছিল। তিনি বললেন, বগুড়া থাকব না। রংপুর গিয়ে থাকব। আমাদের একজন সিনিয়রের হাতে ২ হাজার টাকা দিলেন। বললেন, তুমি ওদের নিয়ে খাইয়ে রংপুর আস। গাড়ি বগুড়া ছেড়ে রংপুরের পথে যাত্রা শুরু করে।  আমরাও নেত্রীর গাড়ির পেছনেই ছুটতে থাকি।

বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের হাজারো স্মৃতি। তিনি সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতেন। বিপদে-আপদে অবস্থান নিতেন। সময়ে-অসময়ে আস্থাভাজনদের ডেকেও নিতেন। আমাকে বিভিন্ন সময়ে অনেকবার ডেকে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারি আমিনুল হক বাদশা আমাকে একবার বলেছেন, শেখ হাসিনা গুণটি পেয়েছেন বাবার কাছ থেকে। নির্মল সেনের লেখাতে পড়েছি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লিখে বঙ্গবন্ধুর সামনে যেতেন তারা। দল বেঁধে গিয়ে ছাড়িয়ে আনেন এনায়েতুল্লাহ খান মিন্টুকে। আরও অনেক গল্প আছে। শেখ হাসিনা কি তার বাইরে? আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লিখে অনেকবারই তাঁর সামনে হাজির হলে তিনি প্রথমে গম্ভীর থাকতেন। তারপর কথা বলতেন। স্বাভাবিক হতেন ধীরে ধীরে। শুধু বিরোধী দল নয়, ’৯৬ সালের সরকারি দলেও তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে আলাদা হননি। আমরা তখন বড় সাংবাদিক ছিলাম না। কিন্তু আমাদের ডেকে নিয়েও কথা বলতেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালেও একাধিকবার ডেকে নিয়েছিলেন। সেই সময়ে আমার কাগজটি ছিল কট্টরভাবে সরকারের সমালোচক। সাংবাদিকরা ঝামেলায় পড়লে এই শেখ হাসিনা সবার আগে পাশে দাঁড়াতেন।  শত শত উদাহরণ আছে। অনেকে প্রশ্ন করেন, সেই শেখ হাসিনা কি বদলে গেছেন? ভাবছি বিস্তারিত লিখে যাব। আমাদেরও বয়স বাড়ছে।  করোনাকালে জীবন-মৃত্যুর কোনো হিসাব নেই।

লেখক: সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।