ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শোকের মাস ঘিরে গজিয়ে ওঠে ষড়যন্ত্রের ডালপালা

তপন চক্রবর্তী  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২১
শোকের মাস ঘিরে গজিয়ে ওঠে ষড়যন্ত্রের ডালপালা তপন চক্রবর্তী

আগস্ট মাস এলেই মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের প্রেতাত্মার বিচরণ থামেনি এখনও।

আছে ঘরের শত্রু বিভীষণও। সেদিন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে ঘিরে একের পর এক গজিয়ে ওঠে ষড়যন্ত্রের ডালপালা এবং সেটাও এই শোকের মাস ঘিরে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল, যার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল এ দেশীয় একটি গোষ্ঠী। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের বিচার হয়েছে এবং একাংশের শাস্তি কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু ৪৫ বছর পরও পঁচাত্তরের ষড়যন্ত্রকারী এবং ওই হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগীরা একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে রক্ষা পেলেও কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন, আহত হয়েছিলেন শত শত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

২০১৮ সালে ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুরে পুলিশের ওপর হামলা এবং পরদিন ঝিগাতলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় আক্রমণের চেষ্টা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামায়াত একের পর এক গুজব ছড়িয়ে সারা দেশ থেকে শিবির ক্যাডারদের ঢাকায় এনেছিল এই শোকের মাসেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করে শিশু-কিশোরদের আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেছিল জামায়াত-বিএনপি। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।

জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের জড়িত থাকার কথা এখন প্রকাশ্য হয়েছে। এরপর ক্ষমতায় আসা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের হাত ধরে যে রাজনৈতিক শক্তির পুনরুত্থান ঘটেছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও দর্শনবিরোধী ভাবধারায়।

আর এ সময়েই পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হয়েছে। সমসাময়িক প্রজন্মের বৃহৎ একটি অংশের মগজ ধোলাই করে ‘আমার সোনার বাংলা’র পরিবর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে—‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’। পুরো সময়জুড়ে ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তন, উগ্রমৌলবাদী ও জঙ্গিবাদের উত্থান এবং বিস্তারের ইতিহাস। তারা দেশ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। ফলে ক্ষমতার বাইরে থেকেও লক্ষ্য অর্জনে লড়াইটা অব্যাহত রাখতে পারছে।

করোনাকালে মাঠে নামার পরিবর্তে ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশনের (আইপি টিভি) মাধ্যমে অপপ্রচারে তৎপর স্বাধীনতাবিরোধীরা। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে মিথ্যা রটনা, গার্মেন্টস ঘিরে অসন্তোষ সৃষ্টিসহ নানানভাবে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন—‘শেখ মুজিব, পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন প্রশাসন দিয়ে তুমি বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবে না, চালাতেও পারবে না। কাপুরুষেরা বীরদের সাফল্যে সবসময় হীনমন্যতা, ঈর্ষাপরায়ণতা ও পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। ফলে বীরোচিত অর্জনের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না, বরং সেই অর্জনকে শেষ করতে পারলেই তারা পুলকিত হয়, যুগে যুগে দেশকাল পাত্রভেদে এটাই দেখা গেছে। ’

আগস্ট শোকের মাস। জনক হারানোর শোক, মা হারানোর শোক, ভাই হারানোর শোক, বোন হারানোর শোক, সন্তান হারানোর শোক। শোক থেকে শক্তি। এই শক্তি বুদ্ধির শক্তি এবং এর রূপ বহুমাত্রিক। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ করেছে বর্তমান সরকার। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র-বিরোধীদের যে কোনো অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যথায় ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ‘রূপকল্প-২০৪১’ ও ‘ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০’ ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

তপন চক্রবর্তী: ডেপুটি এডিটর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২১
টিসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।