শনিবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে ইমেইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সভায় বক্তব্য রাখেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, সিপিবি নেতা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আকবর খান, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, শহিদুল ইসলাম সবুজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ।
সভার প্রস্তাবে বাম নেতারা জানান, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মহা সংকট মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে এ সংকটকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে দেশের সবার অংশগ্রহণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সর্বদলীয় সভা আহবান করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সভা থেকে আরও জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা, প্রত্যেক জেলায় করোনা পরীক্ষা ল্যাব স্থাপন করে ব্যাপক জনগণের করোনা পরীক্ষা করা, অন্য সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বেসকরারি হাসপাতালের ল্যাবসমূহ যেগুলো করোনা পরীক্ষার উপযোগী সেগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য দেশের তারকা হোটেল ও জেলা সদরের ভালো হোটেলসমূহ ছয় মাসের জন্য অধিগ্রহণ করা, করোনা সনাক্তদের চিকিৎসা অন্য সাধারণ হাসপাতালে না করে বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং এজন্য ব্রাজিল, চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামসহ সব জেলা-উপজেলা সদরের স্টেডিয়ামসমূহে অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা জরুরি। অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপতালের সরঞ্জাম ও অভিজ্ঞতার ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাশাপাশি করোনার এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত তহবিল গঠন করা, প্রয়োজনে বাজেটের পুনর্বিন্যাস করে অপ্রয়োজনীয়খাতের বরাদ্দ বাতিল এবং প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে এ তহবিলে বরাদ্দ করার আহ্বান জানান তারা।
নেতারা বলেন, বস্তিবাসী, হকার, রিকশা-ভ্যান-অটো রিকশা-সিএনজি চালক, পরিবহন শ্রমিক, ফুটপাতের ছিন্নমূল মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী, গ্রামের দিনমজুর, ভূমিহীন নিন্মবিত্ত মানুষসহ হতদরিদ্র সবার আগামী ৬ মাসের খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। শুধু আমলা প্রশাসন ও সরকার দলীয় লোক দিয়ে নয় সর্বদলীয় জাতীয় কমিটির মাধ্যমে করোনা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা যেন সবার ত্রাণ প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। ফুটপাতের ছিন্নমূল মানুষদের আপদকালীন সময়ের জন্য বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা করে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দিতে হবে।
সভায় উপরোক্ত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সর্বদলীয় সভা করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে বলা হয়, যদি সরকার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সর্বদলীয় সভা আহবান না করে, তাহলে বাম গণতান্ত্রিক জোট দেশের সব গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত বৈঠকের উদ্যোগ নেবে এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০
আরকেআর/এবি