জাতীয় সংসদে বাজেট পেশের প্রায় এক সপ্তাহ পর শুক্রবার (১৯জুন) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজেট প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
তারা বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম, বাজেটের এক তৃতীয়াংশ ঘাটতি, যা জিডিপির ৬ শতাংশ ।
ইতোমধ্যেই অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু এখন জন্মের সময়ই মাথার ওপরে প্রায় ৬০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর শেষে আমাদের নবজাত শিশুর ওপর ঋণের বোঝা চাপবে প্রায় এক লাখ টাকা। এরপরে বাজেট সম্বন্ধে সম্ভবত আর কিছু বলার প্রয়োজন হয় না।
ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, বিশ্ব মহামারি করোনার কারণে পশ্চিমা অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। সেখানে কেবলমাত্র গার্মেন্টস খাত দিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার চিন্তা খুব একটা ঝুঁকিমুক্ত হবে না। যাদের কাছে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির চিন্তা করছি, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হলে ওই পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে যাবে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে একটামাত্র খাতের ওপর ভরসা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিফাইড করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্স খাতেও একই চিত্র। আগামীতে রেমিটেন্সের ওপর যে ধ্বসের আশংকা দেখা দিয়েছে তাতে করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের কথা বাদ দিলেও প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনধারার ওপর নগদ অর্থের অভাবে যে আঘাত আসবে তা সামাল দেয়া সত্যি কঠিন হবে। তার ওপরে কুয়েতের সাম্প্রতিক ঘটনা বিদেশে মানবসম্পদ রফতানির ক্ষেত্রে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।
তারা আরও বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখছি নামমাত্র কর দিয়ে অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির কী উত্তরণ হয়েছে তা এখন পর্যন্ত কারো কাছে বোধগম্য নয়। এখন সময় এসেছে এধরনের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এই বিপদের সময়ে দেশের করোনা আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ করা।
ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, এবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতের চেয়ে স্বাস্থ্যখাতে বড় একটা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন সেখানে নয়। বিগত একদশকে আমরা দেখছি হাজার হাজার কোটি টাকার মেডিক্যাল ইকুপমেন্ট কেনা হয়েছে। তার সুফল করোনার প্রয়োজনে দেশের মানুষ পেল না। কাজেই মূল জিনিসটি হচ্ছে বরাদ্দের পরিমাণ নয়, বরাদ্দের সদ্ব্যবহার।
তারা বলেন, প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষিখাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমরা মনে করি এই বরাদ্দ এবং ভর্তুকি প্রয়োজনের তুলনায় সম্পূর্ণ অপ্রতুল।
সরকারের কর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বর্ণ আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার মানে, স্বর্ণের দাম কমবে। স্বর্ণ ব্যবহার করেন কারা? সাধারণত ধনিক শ্রেণি। সেখানে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশেষ করে এই লকডাউনের সময়ে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য যে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট, তার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এ বাজেটে কাদের সুবিধার কথা চিন্তা করা হয়েছে।
সরকার করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল করার কথা বলছে অথচ আজকের দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচলের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে পরিবহন সেক্টর। যার গতি নির্ধারণ করে একটি মাত্র আইটেম যার নাম হলো জ্বালানি তেল। আগামীতে দেশে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে হলে সরকারকে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্যে আমূল পরিবর্তন আনা। গত পাঁচ বছর যাবৎ সরকার আন্তর্জাতিক জ্বালানি মূল্যের দ্বিগুণ মূল্যে দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানি তেল বাজারজাত করছে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সেক্টরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং সরকারের পকেটে তোলা হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছে তার কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, যারা বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা হলেন জাতীয় ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, ড. আবদুল মঈন খান, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী,
তিনি বলেন, বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন এই কোভিডকালের কঠিন সময়ে বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষরে জন্য একটি বাজটে উপস্থাপন করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এমএইচ/এমএইচএম