বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বেলা ১১ থেকে ১২টা পর্যন্ত নগরের সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি দ্রুত সময়ে দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি জানায় তারা।
কর্মসূচির শুরুতে বাসদের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়েন। এতে করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ বাসদ নেতাকর্মীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাসদের নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডাও হয়।
অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমন বলেন, বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে করোনা চিকিৎসার দিক থেকে বরিশাল বিভাগের অবস্থান সর্বনিম্নে। করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব ঢাকায় ৩৮টি, চট্টগ্রামে ৯টি। কিছুদিন আগের ঘোষিত বিভাগ রংপুর, ময়মনসিংহেও এই ল্যাব ২টি করে। কিন্তু বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার জন্য পিসিআর ল্যাব মাত্র ১টি। সেই একটি মাত্র ল্যাবে দক্ষ টেকনোলজিস্ট না থাকায় পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীরা চরম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।
‘সোমবার (২৩ জুন) এক রোগী নমুনা দিতে গিয়েছিলেন, তাকে আগামী ১৫ জুলাই পরীক্ষা করানোর সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে, এটি প্রহসনের নামান্তর। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার দিক থেকেও বরিশাল সর্বনিম্নে। আইসিই্উ বেড ১৮টি হলেও আইসিইউ বিশেষজ্ঞ মাত্র ১ জন। ’
বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বরিশালের মানুষের করোনা চিকিৎসার জন্য ৮ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, এক দিকে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসাক্ষেত্রে অপ্রতুলতা, আরেকদিকে প্রশাসন-সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে আছে নজিরবিহীন সমন্বয়হীনতা। এখন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে বয়স্ক, অসুস্থ রোগীদের জন্য করোনার নমুনা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই। বরিশালে স্বাস্থ্য বিভাগ বা সিটি করপোরেশন কেউই এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য কোনো বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করতে পারেনি। বরিশালের ২৭টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হলেও সেটি নিয়ে ন্যুনতম সচেতনতামূলক উদ্যোগও সিটি করপোরেশন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিতে দেখা যায়নি। বরং ২টি ওয়ার্ডে নামে মাত্র লকডাউন করা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতা ও নজিরবিহীন সমন্বয়হীনতা উন্মোচিত হয়েছে।
মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, একদিকে করোনা মহামারির চিকিৎসায় এই বিশৃঙ্খল অবস্থা, আরেকদিকে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে হাজির হচ্ছে একের পর এক সংকট। সাম্প্রতিক সময়ে ব্র্যাক, আশা’র মতো এনজিওগুলি তাদের কিস্তি আদায়ের জন্য হানা দিচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের দ্বারে দ্বারে। এক দিকে বেসরকারি এনজিওদের উৎপাত, আরেক দিকে সরকারি বিদ্যুৎ অফিস থেকে মিটার রিডিং-এর দ্বিগুণ-তিনগুণ ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল পৌঁছে যাচ্ছে বাসায় বাসায়। সরকরিভাবে যখন নাগরিকদের বিল মওকুফ করা দরকার তখন এই বাড়তি বিল মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি। দাবিগুলো হলো- করোনা টেস্টে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি বন্ধ করা; বরিশালে পিসিআর ল্যাব বাড়ানো, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০০ টেস্ট নিশ্চিত করা; প্রতি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা; বরিশালে করোনা রোগীদের জন্য ১০০০ শয্যা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং ১০০ আইসিইউ বেড নিশ্চিত করা; অবিলম্বে করোনা রোগী পরিবহনে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা; বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা; সব করোনা আক্রান্ত রোগীর সুচিকিৎসা এবং নিয়মিত কাউন্সিলিং নিশ্চিত করা; সব লকডাউন করা বাসায় খাবার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা; চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত সবার ঝুঁকি ভাতা, উন্নত নিরাপত্তা পোশাক নিশ্চিত করা; করোনাকালীন সময়ে সব এনজিওর কিস্তি, বাড়ি ভাড়া-মেস ভাড়া মওকুফে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া; ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করা; পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ কররা; করোনাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা; শ্রমজীবী মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ নিশ্চিত করা; সব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা; শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২০
এমএস/এইচজে