মাঝরাতে বারান্দায় দরবারি কানাড়ায় আলাপ: আমার চোখে জল। জানালায় চাঁদের কান্নারা মুখ মুছে বাগানের গাছে গাছে জরির পাতায় ম্লান।
দু’ একটা পাখি ডানার মৌনতা নিজের বিস্মিত-ক্লান্ত-ঠোটে মাখিয়ে লজ্জায় হতবাক। বাবা থামেন প্রত্যুষে বিয়োগান্ত বেহাগে। তিনি মূখ্যত পড়তি জমিদার-বংশের ছেলে। অবশেষ সিল্কের পাঞ্জাবি। সোনার বোতাম। আঙুলে হিরের আংটি। ঘাড়-পর্যন্ত লম্বিত চুল। খাড়া নাক। একদা ফরসা পরম পুরুষ। হালে বুকের ভূগোলে বেহালা ধরে পতনের সংগতরত। যাতনা ঢাকতে মা টেবিলে বসে চেষ্টা করছেন কবিতা লিখতে। মা খুব সুন্দরী। আলিবাবার মর্জিনা। মেহফিলে ভালোই নাচতে পারতেন। সংসার সমরাঙ্গ এখন তাঁকেই সর্বাঙ্গে নাচাচ্ছে! আমাদের মৃত-মঞ্চে একমাত্র চলিষ্ণু ধূসর চলচ্ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে জমাট-স্তব্ধতা। বহুদিনব্যাপী তালাবদ্ধ রান্নাঘর আগলে হতাশ বিড়ালের ছায়া। প্রলম্বিত মায়ারা হৃদয়ে বেদনার বিন্দু বিন্দু শিশিরের জলে নির্বাক-বিম্বিত। আমার নিশুতি-জাগা অভুক্ত-দুর্বল চোখে ভাসে স্মৃতিস্বপ্নের সুনীল সরোবর; সুরের অনিন্দ্য সুরলোক; বেনোজলের ভাসানে কিন্নরদের সান্নিধ্য; সজ্জিত দেয়াল; গন্ধময় চারপাশ; কসমস ফুল; মরক্কোর ফুলদানি; ময়রার দোকানের রসের ভিয়েন; বিনম্র বসন্ত; উৎসব আমেজ। আর এখন? উপোস। পলেস্তারা-খসা ডল-পুতুল আমরা। অস্তিত্বের বর্তমান চৌকাঠে পতন। গুপ্ত-ঘুণপোকা। পশ্চাতে অতীত। ভবিষ্যত? স্থির অন্ধকারে দৃষ্টির বিভ্রম; সেখানে আলোও থাকলে থাকতে পারে; কাছে এলে তবে দেখা সম্ভব ‘গন্ধবের অভিশাপ’: কুহক-কুয়াশাময় অস্পষ্টতা; রহস্যের মাদকীয়-বাতাস যাপিত-জীবনে-অলিন্দে; অধরা-কৌশলে যবনিকাপাতহীন; শুধু কলামগ্নপৃথিবী দোসর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৫
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।