অরাজনৈতিক
আমি অপরাধী, নগরকর্তা, সিংহদরজা খুলে বের করে দিন
এই নগরের বাইরে কোথাও, নয় কারাগারে রাখুন অন্তরীণ।
এতোটা সাহস হয়েছে কীভাবে— হুজুরের নামে করি বিরুদ্ধাচার
নজিরবিহীন সাজা দেয়া হোক, আমার মাথা আপনার তলোয়ার
নগররক্ষী ধর্ষণ করে, নিয়মিতই তো নগরে এমন হয়
এটাতে এমন বলার কী আছে? ধর্ষিতা আমার চেনাপরিচিত নয়!
আপনার দেশ, নগর-রাষ্ট্র— খাচ্ছি পরছি, ভালোই-তো আছি প্রভু
সৈন্যরা করে করুক না লুট, তাদের তালুক, বেয়াদবি করি তবু
জিভ নড়ে ওঠে ঘুমের ভিতরে, সুখে থাকি তবু ভূতেরা কিলায় যেন
কথা বলে উঠি— বিরুদ্ধাচার! হুজুর আমার এতো এলার্জি কেন?
এই জিভ ধরে টেনে ছিড়ে নিন, কুচি কুচি করে কাক শকুনকে দিন
আমি অপরাধী, নগর ছাড়ান, নয় কারাগারে রাখুন অন্তরীণ
হুজুর আমার জন্মই বৃথা, অবাধ্য হই আপনার, ধিক! ছিঃ!
যা খুশি করুন শেরের উপরে ওহে সোয়া-শের প্রস্তুত রয়েছি...
সময়
ইঁদুরের গর্তে ফেলে আসা আমার পুরানা দাঁত
শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে নতুন একটা দাঁতে;
কে যেন খুন হয়
ছিটকিনি দেয়া ঘরের ভিতর,
মরার আগে তার এতো এতো অভিজ্ঞতা, স্মৃতি
ওগুলি কোথাও নাই-
ওয়ারড্রবে কোনো কাপড়ের ভাঁজে রাখা ন্যাপথলিনের মতো
সূর্যটা ডোবার আগে আরেকটু উজ্জ্বল থাকতে পারতো
এমন সন্ধ্যায় আমাকে ভাবনা পেয়ে বসে
অন্ধকারে, আমার ঘরে, বিছানায় শুয়ে থাকা আমার প্রেমিকা
তার মথিত স্তন;
বারান্দায় বসে থাকা আমি,
খুঁজছি বাইরে যাবার পথ, স্মৃতিবাহিত হয়ে—
বাঁশের খুঁটি কেটে পয়সা জমানো শৈশবের ভিতরে
তবু সেই শৈশবে মাছের কানকো ফেটে
রক্ত ছড়িয়ে পড়ছে যেন
ফুলকা উছলে যাচ্ছে রক্তে রক্তে,
আমার বিছানা ছাড়িয়ে
মেঝেতে গড়াতে গড়াতে
আমার প্রেমিকার রক্তস্রোত
পায়ের পাতায় এসে আটকে গেছে
ওগুলি শুকিয়ে জমাট বাঁধা পর্যন্ত
আমি এখানে, এই বারান্দায় বসে সময় কাটাতে চাই
ফায়ার
সারাদিন মেঘ,
বৃষ্টি ধীরে ধীরে আমাদের শহর ছেয়ে ফেলে
কোথাও কেউ নাই
বৃষ্টিও আজ হরতালের মতন;
অজস্র গেরিলা-মেঘের এমন প্রকাশ্য আক্রমণ
বৃষ্টির অবিরাম ফায়ার ফায়ার
শহর অন্ধকার—
চারপাশ দেখে মনে হয় এই-তো মধ্যযুগ;
মধ্যযুগ এমনই
দানাবাঁধা অন্ধকারের মতন গেঁথে আছে আমাদের মনে
এতো এতো বৃষ্টির বুলেটে বিদ্ধ
এতো এতো শীতল কান্না হয়ে
শহরে ক্রমাগত আরও গভীর, গভীরতর
মধ্যযুগ নেমে আসছে
বৃষ্টি পতনের সাথে সাথে
নেমে আসছে আমাদের এ-যাবৎ সঞ্চিত
মধ্যযুগ বিষয়ক ধারণা
পরবাস
সবুজ ঘাসে, সবুজ ফলের তৈলাক্ত ত্বক
পেতে রাখা ঘাসের মাদুরে তারা লুটোপুটি খেলে
ভাঙা ব্রিজ, নদীতে ডোবা
তার পাশে শিবের জটার মতন উঠে পড়া মন্দিরের চূড়া
যাবো না সজনী আর বিদেশে যাবো না
ফিরে আসি তোমার সবুজ ঘাসে
তৈলাক্ত ত্বক, আমাদের বাচ্চা মেয়ে
তোমাদের ডাকে
খেলতে থাকুক মেয়ে
উঠান পেরিয়ে শরিফাদের উঠানে গিয়ে
উঠানে কয়েকটা মুরগি আর হাঁস
বাড়িতে একলা তুমি
আর আমি
সূর্য ডোবার সময় দরজা লাগানো মাটির ঘরের ভিতর
খোলা জানলার ধারে
ঘাম গন্ধ নাকে নিয়ে
তোমার খোলা, ফুলে ওঠা বুকে সূর্যের লাল লাল আভা
কালো চামড়ায় মিশাতে মিশাতে
আমি ঘেমে যাবো
যাবো না সজনী আর বিদেশে যাবো না
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
এসএনএস