হে অনন্ত বর্ষা
মেঘদূত-প্রহর থেকেই ঝুলছি
কালিদাসের ছায়ায় ছায়ায় মায়ার বৃত্তে
ঝুলে আছি লেপ্টে আছি নিয়তির অমোঘ নির্দেশে
পূর্বদেশের পুঞ্জিত মেঘের সাম্পানে;
আচানক পীরিতির প্লাবনে ঝরেছি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে
আকাশ-মাটির সীমান্তে রোপিত
একটি প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ে
প্রত্নময় জাতিস্মর অস্তিত্বের প্রবল প্রক্ষেপে—
কালান্তরের অনন্ত বর্ষা
জলমগ্ন অস্তিত্বে আমায় ভাসায় ওড়ায় নামায়
মিথিলায়, উজ্জয়নী, গুরগাও, বারোদা, ঢাকায়
অসীমান্তিক মায়ামেদুর বুকের নিভৃত উঠোন কোণে;
জল নেমে গেলে আল্পনায় আঁকা
রমণীয় নিসর্গ সবুজে আমাদের যৌথ-পদচিহ্ণ
অরণ্যের অন্ধকারে
অজন্তার জলছবি, ইলোরার টান, খাজুরাহের মদির মিথুন—
হে বর্ষা, অনন্ত বর্ষা
বৃষ্টির মাতাল দোতারায়
স্মৃতির সরণী বেয়ে হৃদজানলায়
টোকা দেয় চুপিচুপি পুরনো আঙুলে;
নখের আচড়ে শরীরের দরজার আবলুস কাঠে আঁকে
অনাদী মুখের আদল
হৃদয়ের সরোবর পূর্ণ করে বেহুলার সজল ভাসানে;
আমার অশেষ বিন্দুতে বিন্দুতে
ছলকায় প্রেম মোহ মায়া
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বৃষ্টির ছায়ায় ছায়ায়
বর্ষা হে, তুমিই শুধু মুছো নাই
প্রেমের আকুতি।
হে অনন্ত বর্ষা
যার খোঁজে তোমার গহীনে
অন্তর্গত হই অশেষপ্রণয়ে
বাদলের জলে জলে
সুরমা-রাঙানো আকাশের ভিড়ে
বৃষ্টির আড়ালে
অতল পৃথিবীব্যাপী কল্লোলের তোড়ে
ভেসে ভেসে অবশেষে
তার বুকের গহীনে এসে
তিল হয়ে থেকে যাই
অমরত্বের প্রত্যাশাহীন জলমগ্ন কবির অস্তিত্বে;
নিথর নিরবে রয়ে যাই মেঘের চাদরে
তারই প্রযত্নে
তার নাম অনেক সুরেলা, ছন্দময়
তবু আমি তাকে ডাকি ‘তুমি’।
‘তুমি’ মেঘমেদুর আকাশ দেখে বুঝবে বৃষ্টির কাল
বৃষ্টির ফোটায় পাবে আমার প্রলেপ
এবং লুকোবে নিত্য আমাকেই:
আমি তোমার বুকে তিল।
যা তুমি ঢাকছো মায়াবী আঁচলে
রাখছো চোখের তারায় বেদনার জলে
মোহে কামে প্রেমে
অভীপ্সার গোপন নয়নে
আঁকছ কবির ছবি বর্ষার কাজলে
তুমি আর বর্ষা এলে আমি আসি চাতকের ছলে...
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৬
এমজেএফ/