মানুষ হয়ে যাও
আমি বলছি না, তোমাকে এ প্লাস পেতেই হবে।
তোমার ২.৫ এ-ই সততা বেঁচে থাক,
সমাজ না, অন্তত নিজের সাথে চোখ মিলাতে পারলেই হলো।
এই আমার প্রার্থনা।
তুমি গোল্ডেন না পেলে তোমার জাত যাবে না।
শুধু তোমার মাঝের মানুষটা জাত না হারাক,
মাইডাসের ছোঁয়া-লাগা স্বর্ণের নিথর মূর্তি না হোক।
এই আমার অনুরোধ।
আমি মানি না, ডাক্তার না হলে তুমি মানুষের সেবা করতে পারবে না!
তুমি মানুষ হবে না!
অ্যাকসিডেন্ট দেখে তুমি দ্রুত নিয়ে গেলে আহত দেহটাকে।
আর ৫ মিনিট দেরি হলেই ‘ব্রট-ডেড’।
বাচ্চা দুটা এতিম হতো।
মুমূর্ষুর ডাকটার সাড়া দিতেই
তোমার হাতে মানবতার ডেলিভারি।
বলছি না, স্থপতি না হলে বাড়ি হবে না তোমার।
ওরা বাড়ি বানাক।
তুমি শুধু ওটাকে ঘর করে রেখ।
ওই ঘরের দেয়াল থেকে যেন চাপা কান্না না আসে।
কিম্বা প্লাস্টার চিরে রক্তের দাগ
আর রুম ভর্তি পচা লাশের গন্ধ না আসে।
শুধু খুব বাতাস হলে জানালার কাছে উইন্ড চাইমের টুংটাং
পাশের বাসার দুষ্ট বাচ্চাটার পিকাসো হবার প্রমাণ থাকুক দেয়াল জুড়ে!
আর বৃষ্টি উপলক্ষে মুড়ি ভর্তায় সরিষা তেলের ঝাঁঝালো গন্ধ! ইশশ!
তাহলেই হবে।
আমি মোটেও বলছি না, তোমার ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে উপায় নেই।
সেতুর পর সেতু করে এপার ওপারের যোগাযোগ রক্ষা করছ,
অথচ বৃদ্ধাশ্রমে ওই টেলিফোনটার কাছে বসে আছে তোমার মা কিম্বা বাবা।
তোমাকে কবুতর, কোকিলের লোকমা তুলে দিতে দিতে মা বুঝিয়েছিলেন,
মানুষে মানুষে যোগাযোগের মাহাত্ম!
কোলে বসিয়ে দেশপ্রেমিক বোকা বাবাটা বলেছিলেন
দেশের উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব।
তুমি যোগাযোগ বাড়াতে থাকলে।
সেতুর পর সেতু, রাস্তার পর রাস্তা, ঘাটের পর ঘাট।
ওই টেলিফোন আর বেজে ওঠে না।
যোগে যোগে বিয়োগফলের খবরটুকু পেলে না।
‘বেড নম্বর ৪’ এর সন্তানকে ফোন করে জানান হোক
তার মায়ের নতুন নাম ‘বডি’।
মিটিংমুডে রাখা ফোন, এইটুকু যোগাযোগও হতে দিল না।
শুধু বলছি, পাতের মাছটার কাঁটা বেছে দাও।
শুক্রবারটা শুধু পেপারটা পড়ে শোনাও।
পুরনো কোনো বন্ধু-আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়িয়ে আনো।
আত্মায় আত্মায় যোগাযোগের মাহাত্ম অনেক।
ভালোবাসাটা বাড়ানোর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক।
এইটুকুই হোক।
এই আমার প্রার্থনা।
ব্যাংকের বিশাল অফিসার হয়ে যাও দিব্যি।
উহুম, এটাও না।
হিসেব করতে খুব ভালো পারো।
দিন শেষে বাবার কাছে হিসেব চেয়ে বসলে।
এই হিসেবের গড়মিলটা বুঝতে পারো।
এই আমার প্রার্থনা।
বলছি না ল’ইয়ার মানেই লায়ার।
তোমার দলিলেই মুক্তি পাক নিষ্পাপ মানুষটা।
অন্যের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তুমি হও পথপ্রদর্শক
মানুষ তোমাকে ভয় না, শ্রদ্ধা করুক।
ভালোবাসুক, বিশ্বাস করুক।
নির্যাতিত সত্য জানুক যখন কেউ লড়বে না,
তুমি আছ।
এই আমার প্রার্থনা।
আমি বলছি না তুমি এই কবিতার দোহাই দিয়ে
পড়াশোনা লাটে তুলে শুধু ফেইল হতেই থাকো।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, ব্যাংকার, ল’ইয়ার
কিম্বা আমার মতোই শব্দ নিয়ে খেলো।
সাহিত্য নিয়ে ভাবো।
সমাজ তোমাকে যা হতে বলে হও।
যা ইচ্ছা তা।
শুধু অমানুষ হয়ে যেও না।
এই আমার প্রার্থনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
এমজেএফ/