ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কবিতা

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | ডাল্টন সৌভাত হীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | ডাল্টন সৌভাত হীরা

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি ডাল্টন সৌভাত হীরার নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প। 

কবি ও গদ্যকার ডাল্টন সৌভাত হীরা পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে। বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি ডাল্টন সৌভাত হীরার নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।

 


প্রিয় পাঁচ কবিতা

গোপালগঞ্জ
ওখানে আমার আড়ে কেউ নাই।
যারা ছিল, চলে গেছে গোরে, কাতরানিতে।

আমাদের ঝুল বারান্দায়ালা ঘর।
সেইখানে তড়পানো কই মাছের মতো আমি।

আমি, আমি, আমি; মধুমতির ঢেউয়ের পরে
ছোটখাল, আর কচ্চপের ডিমের মতো সাদা, সাদা
ছোট, ছোট আমি।

বাশের কা’লিতে ঢোড়া ধাঙ্গর সর্দার!
বেতনির ঢালে তবু অজস্র পাওনা।
সেইসব পাওনা পেয়ে পোষা, পোষা, গেরস্ত মতন
আমি।

আমি এখন বাচাড়ির সর্দার।
কালো ধবল আন্ধারে হ্যাচাক হাতে
করে আসে আয়েতালি দারোগা।
কিংবা মধুমতি গাঙে পোষা জলের ডাকাত।

ব্যাধী
এই বনভূমে অধিকার তোমার;
নৈধরা ও ব্যাধ, ও ব্যাধ!

বদলি বেদনার চৌফাঁটা, চোরাকাঁটা; পায়ে
পায়ে, মনে মনে
ফুটে আমাকে বানিয়েছে বনভূম! সেইখানে তোমারে
অধিকার দিলাম।

নিকেশ মনে শিকার কর, শিকার কর এইবার।
চৌকস আলোর মতো আহলাদি হয়ে মেরে ফেল, মেরে
ফেল হরিদ্রা হরিণী শাবক।

নিধার ও ব্যাধ! ও ব্যাধ! এই
বনভূমে তব অধিকার।

আমিতো মুনিই বটে! সন্তের মতো সান্ত্বনা খুঁজে খুঁজে
হয়রান। আমাকে নিজহাতে বাঁধ বনভূমে। তারপর বিঁধে মার ত্রিফলা চতক।

আমিওতো চাতকীনি, তীরে বেঁধা সেই।

বাড়ি
মানুষ বাড়ি খোঁজে; আমি বাড়ি ছেড়ে পালাই। মনে
হয় কার্সড প্রাচীন ইহুদীর মতো ঘুরঘুর করতে হবে
পৃথিবীর বিভিন্ন পাড়া। কিন্তু নিঃশ্বাসের সহবাসে আমি বাড়ি ফিরতে চাই। আমাদের শহরের
য়্যংলো পাড়ার এক বুড়ো সারাজীবন রয়ে গেলো
বাড়িতে। বলত, ‘দ্যাটস জেসাস হোম’; তখন সমস্ত
নমঃশুদ্র কালো কালো চাষা দেশ ছাড়ে। কেন ছাড়ে?
তাহদের কি যীশু নাই?

সাহেব বলেন, ‘দৌড়ান। আয়্যাম কার্সড। জেসাস! ইজন্ট দ্যাট মাই হোম?
আমি দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁফাই। বলি, ‘বাড়ি
ফিরতে চাই। বাড়ি চিনতে চাই। ’

সুখলেখা দাস
কেউতো ভাঙেনি রোজা, এখনো এখনো
কিন্তু তার আগে ভেঙে গেছে এক নদী।

ঘাসের চিকন ফুল,কালো জল মেখে
চলে গেছে এক নারী,আযানের মতো
করুণ,আরো করুণ সুর হয়ে নায়ে।

দুরের সে গঞ্জ থেকে আসে সদাগর
কেনে হাঁসের নোলক,ও পুঁথির শোলক।
নগদ মুল্যেই কেনে দরুদ বাতাস।

কেনে

অচেনা রোজার দিনে, সুখলেখা দাস।

তোমাদের জন্য অভিশাপ
আমার কান্নাকে যারা বোঝেনি, ভেবেছে
এ ভীষণ অট্টহাস্য; বিউগল য্যানো
মাংস খুবলে-খাওয়া পচিত কুষ্ঠ রোগ....

তাদের জন্যই করুণা করি,প্রিয়তম

বলি তাদের হাতে ও পায়ে কুষ্ঠ হোক
শিরা ও স্নায়ু ফেটে কান্না আসুক
রোম, ও আয়তন নিচ‍ু-গ্রামে কাঁদুক

কাঁদতে কাঁদতে অগ্রিম ভাঁড়ের মতো
তোমাদের লোক হাসানোর অভিশাপ
দিলাম...তোমরা অট্টহাস্যে ক্রন্দনা হও।

আমি বিউগল বাজাবো ও কান্না শুনব

তোমাদের জন্য অভিশাপ! প্রিয়তম।


কবিতার গল্প
আমার প্রিয় পাঁচটি কবিতা। এর চারটি ‘ডাল্টন মরে যাও’ পাণ্ডুলিপির। বাকিটা ‘লবণ’ পাণ্ডুলিপি থেকে। ডাল্টন মরে যাও’র কোনো গল্প নেই। লবণের গল্প আছে, লবণ আমার প্রেমিকার স্মৃতি। (ব্রহ্মচর্য সত্ত্বেও আমার একটি প্রেম এসছিল। ) তিনি কিছুটা রাক্ষুসী, বলা বাহুল্য বোকা রাক্ষুসী স্বভাবের ছিলেন/আছেন। সঙ্গত কারণে আমার কবিতায় তিনি অভিশাপিত হয়েছেন। তোমাকে অভিশাপ প্রিয়তম!

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ