ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কবিতা

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | জব্বার আল নাঈম 

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | জব্বার আল নাঈম  প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প

কবি জব্বার আল নাঈমের পেশা ফ্রিল্যান্স লেখালেখি, নেশা অবশ্যই কবিতা। এর পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ‘দাগ সাহিত্য সম্মাননা’ (২০১৬)।

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি জব্বার আল নাঈমের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।  

    
প্রিয় পাঁচ কবিতা

বৈষম্য 
তিনবন্ধু চিড়িয়াখানার ঝোপঝাড়ের সামনে আড্ডা- আলাপে মগ্ন।

হঠাৎ একজন চিৎকার করে বলল, পাঁচ হাজার টাকাসহ আমার ম্যানিব্যাগ হারিয়েছি। চিৎকার শুনে চিড়িয়াখানার টোকাইদল খোঁজাখুঁজিতে নামল। প্রথমজন টোকাইদলের উদ্দেশ্যে, যে ম্যানিব্যাগ খুঁজে পাবে তাকে ৫০০ টাকা বখশিশ দেবো!
দ্বিতীয় বন্ধু আড়চোখে তাকিয়ে বলল, যে হারানো ম্যানিব্যাগ খুঁজে পাবে তাকে ১০০০ টাকা বখশিশ দেবো।
তৃতীয় বন্ধু নির্বিকার ভঙ্গিমায়; যে ম্যানিব্যাগ খুঁজে পাবে তাকে সব টাকাই দিয়ে দেয়া হবে!
এরপর থেকে আলাদা হতে থাকল জাত, ধর্ম ও বর্ণ! বাড়তে থাকল মানুষে মানুষে বিদ্বেষ!
        
সংকটকাল
আহা! কি নৈঃশব্দ্য নগরের ভেতর বাহির!
কান পাতলে শোনায়  বেদনার আর্তনাদ!
যেন কালের ঘুঘু ডাকে কর্পোরেট খাচায়
আহত সঙ্গীর খোঁজ পাড়া মহল্লায়।

টেবিলে টেবিলে মুহূর্তগুলো হেরে;
হোচট খায়। জৈবিক সমীকরণ বদলায় 
মহাকালের যাতনায় মহারণন; ক্ষুব্ধÑ
বেদনায় মুখস্ত কেয়ামত মাঠের হাবসী-
সুর সঙ্গীত ইয়া নাফ্সি ইয়া নাফ্সি...

এভাবেই বাড়ে যান্ত্রিক জীবনের অবিশ্বাস
পকেটে রক্তগঙ্গা খুনের ছুতো
আমরা প্রতিদিন মরে যাই ঘা খেয়ে খেয়ে
সংকটাপন্ন হাত পেয়ে না পেয়ে!

আয়না
স্বচ্ছ নদীর গোপনাঙ্গ নেই- আফ্রিকার সুখ সাদামেঘ
কালো মানুষ- বিপ্ল¬বী প্রেমিক
ঝড়ের ব্যবধান— কচ্ছপ-পৃথিবী।
নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি পূর্ণিমার কালো শিশু
সুরসুখে কালোমুখ সাদা দাঁত সন্ধ্যা সঙ্গীত আয়োজন করে
                                          এশিয়ার উঠোনে।
আমাকে আয়না ভাবছো! ভাবো!
আমি আয়না ঢাকা কালো পর্দার আফ্রিকা।

ছুরি
সব হারিয়েও যদি একবার দাঁড়াতে স্রোতের বিপক্ষে
কামারশালা গ্রামের কাছে
যারা ধরে এনে আগুনে পুড়িয়ে
নীল জলে ডুবিয়ে
মস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ছুরি;
জীবাত্মা থেকে দূরে বহুদূরে; আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছে রমণী।
সেদিন ক্ষতের অতলে ডুবে গেছে জলের সমস্ত আয়োজন;
স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্যাওলা লতা-পাতা জড়িয়ে
বিলকুল হলো না স্থির;
অথচ, পাড়ার বখাটে তোমাকে ঢেলে ধুয়ে নেয় রক্তমাখা ছুরির শরীর।
    
নতুন পথ
তোমাকে পাওয়ার পর ইস্রাফিলের সিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে পূর্ব পুরুষের ঘুম ভাঙাব! বেঁচে উঠুক মৃত সবাত্মা! একসাথে সকলের তামাশা সকলে দেখবে; সামনে পেছনে, আলো জ্বালিয়ে কিংবা পাখির গানে। পূর্বপর ভুল শুধরে।  

...এরপর জন্ম- মৃত্যু ও ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে ঘটবে জলসাপর্ব! দেখব আমার দাদার দাদার দাদা প্রিয়তমাকে হারিয়ে খুঁজে পেয়েছেন! 
শুরু হবে মানুষের পারস্পারিক অনন্ত জীবন...


কবিতার পেছনের গল্প
এই প্রথম কবিতা লেখার পেছনের গল্প বলা খুবই বিব্রতকর! আমার কাছে ব্যপারটা একদম সহজ না। আমি যেভাবে বলি অন্য কেউ হয়ত কবিতাটি পাঠ করে সেভাবে নাও ভাবতে পারেন। অথবা অন্যকোনো অর্থ দাঁড় করাতে পারেন। আর কবিতা তো এমনই হওয়া উচিত, ভিন্ন ভাবনা ভাববে সবাই। এজন্য এখানে আমার সমর্থন কম। তবে, হ্যাঁ অনেক পাঠক আছেন কবির মুখ থেকে গল্পটি শুনতে আগ্রহী। তারা জানতে চান কেন এমনটা হলো, বা কোন ভাবনা থেকে এমন ভাবনা কাজ করল। এই কারণে হলেও অন্তত বলা যেতে পারে।  

বৈষম্য কবিতাটি মূলত লিখেছিলাম আমার তিন বন্ধুর বাস্তব একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তারা তিনজনেই একটি ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসা শুরু করার কিছুদিন পর সফলতাও আসে। তবে, সেখানে তাদের অনেক পরিশ্রম ও মেধা নিহিত ছিলো। কিন্তু, কিছুদিন পর কোনো একটা কারণে তিনজনের মধ্যে ফাটল ধরে। সেই সঙ্গে ব্যবসাটিও নষ্ট হতে থাকে।  

সংকটকাল কবিতাটি বর্তমান সময়কে ধারণ করে। আমরা এই সময়টি খুবই অস্থিরতার ভিতর দিয়ে অতিবাহিত করছি তা সত্যি। আর তা সত্ত্বেও সবাই যেনো দায় থেকে মুক্তি নিয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।  

আয়না আফ্রিকার কালো মানুষদের অধিকার নিয়ে লেখা কবিতা। আমার ভালোলাগা কয়েকটি কবিতার মধ্যে এটি একটি। সেইসঙ্গে এটিও চাইবো, আফ্রিকা তথা সারা বিশে^র কালো ও নিপিড়িত মানুষের মুক্তি আসুক।

ছুরি প্রিয়তমাকে উদ্দেশ্য করেই কবিতাটি লেখা হয়েছিল। আমার সবকিছু হারানোর পরেও সে আমার জন্য অপেক্ষা করে না। অথচ, একটা সময় দূরে সরে গিয়ে সেও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ‘অথচ, পাড়ার বখাটে তোমাকে ঢেলে ধুয়ে নেয় রক্তমাখা ছুরির শরীর। ’ পরবর্তীতে সে ফিরে আসে। আর আমরা পেয়ে যাই স্বাধীন বাংলাদেশ।  

নতুন পথের ক্ষেত্রে আমার মনে হলো, কেয়ামতের দরকার নেই। আমি সিঙ্গায় ফুঁ দেবো। সব কিছু ধ্বংসের শেষে আবার সবাই জাগবে। মোলাকাত হবে। আনন্দ হবে। সেই আনন্দে শামিল হবে পরিচিত স্বজনরা। খুঁজে পাব, দাদার দাদাদের। অথবা তাদের প্রিয়তমদেরও। এইভাবেই চলতে থাকবে আমাদের পৃথিবী। এই ভাবনা থেকে কবিতাটি লেখা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ