ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কবিতা

একঝাঁক কবিতা (১ম পর্ব)

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
একঝাঁক কবিতা (১ম পর্ব) একঝাঁক কবিতা

কাকতাড়ুয়া চোখ
আলিফ আহমেদ ইউসুফ খাঁন

এইসব আর্দ্র আবহাওয়ায় ভিজে যায় সব
 
ভিজে ওঠে পুরনো প্রেম
পুরনো আবেগ
প্রিয়ার কাকতাড়ুয়া চোখ
এবং আমার স্বার্থান্ধ মন
 
অষ্টাদশীর সামনে আমি দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি
 
ঘুমের মাঝে আমার অসুখ বাঁধে,
ভীষণ অসুখ
 
নিজেকে শাসাতে হয় না
তার চুলের গন্ধ আমার অতন্ত নোনতা লাগে, তেঁতো লাগে, বিষ লাগে
 
চোখ স্থির হয়, আমি ভেতরে ভেতরে গৌতমের অস্তিত্ব টের পাই
 
 
টানাপোড়ন
রফিকুল ইসলাম ইমু 
 

অসামাজিকতা পেয়ে বসেছে আষ্টেপৃষ্ঠে
ক্রমশ বাড়ছে চর্মের পুরুত্ব
সুফিয়া লরেনের চাবুক কিংবা
পিকাসো'র ক্রোধেও বোধের আকাল!  
 
কত মানুষ অকারণে মরে যায়
প্রতিনিয়ত নিখোঁজ সংবাদ
হৃদয় সংকোচিত হয় ইচ্ছের সর্বনাশে
চাওয়া পাওয়ার বোঝাপড়ায় টানাপড়েন
 
জীবনানন্দে জীবন পাই না
সিলভিয়া প্লাথে আশা
রবিঠাকুরে রবিরশ্মি নেই
সুকান্তে নেই সেই ডাক!
 
পথের প্রস্থ বাড়ে অবিরত
ওভারব্রিজে পারাপার
ফুটপাত যত বেদখলে
উপায় নেই দাঁড়াবার।
 
কিছু জিজ্ঞাসা খুঁড়ে খেয়ে যায়
নিজের থেকে দূরে কোথাও আসলে কি যাওয়া যায়?
চাপ, তাপ, ঘাম, কাম এমনতর অজস্র অথর্বে
কেন ভরা জীবন বড্ড বিতৃষ্ণায়?
 
গভীর হয় রাত আশাও বাড়ে আবার
শাণিত শপথ আসে নতুন পাড়ায়
জীবন সুন্দর! ভয়ানক সুন্দর!
এ এক জীবনে পোষাবে না প্রভু
সুযোগ বুঝে আরেকটিবার খুঁজে নিও
যদি পারো পুনর্জম্মের সুযোগ দিও।


 
 
পাঁজরতলের স্মৃতি
মৌমিতা ঘোষ
 

ওদের আমি ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি 
বুকের বা পাশের পাঁজরতলে।  
বহুবার ওরা জাগতে চেয়েছে,
ক্ষতবিক্ষত করতে চেয়েছে পাঁজরের দেয়াল।  
আমি বুকে পাথর চাপা দিয়েছি, 
অনেক কষ্টে, বহু বেদনায় জমে থাকা আগুনকে
ছাইচাপা দিয়েছি আমি।
মেঝেয় পড়ে থাকা নিথর দেহ আমায় ঘুমাতে দেয়নি, 
বিলীন হয়ে যাওয়া মুখশ্রী আমায় স্বস্তি দেয়নি!
আমি কত রাত চোখ পরিষ্কারের খেলায় মেতেছি।  
কতগুলো স্বপ্নের মৃত্যুলীলা দেখেছি আমি, 
কতগুলো আশার পতন দেখেছি, 
ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেখেছি, 
মিথ্যার জয়জয়কার শুনেছি
শুনেছি প্রবঞ্চকের বক্র হাসি।  
অশুভ আত্মারা আজও বেঁচে আছে, 
আজও তারা কথা কয়, হাসে, গায়!
শুভ্র স্বপ্নরা মৃত হয়ে আজও আমায়
ফিসফিসিয়ে বলে, 
'আমরা বেঁচে আছি ওই পাঁজরের তলায়, 
স্মৃতি করে যারে রেখেছ হেলায়'।
 
 
অনাগত শিশুর জন্য শোকবার্তা
কাউছার হামিদ জীবন 

 
অনিয়ন্ত্রিত নিউরনগুলো জন্ম দেয়
এক নিরাশাবাদী অতৃপ্ত চিন্তক।  
খুব বেশি ভাবিয়ে তোলে—
এইতো আর হাতেগোনা ক`টাদিন 
ছোট্ট শিশু মাটি ভেদ হয়ে আসা 
অপত্য উদ্ভিদ দেখতে চাইবে 
কিন্তু দিনের পর দিন চলে যাবে
তার লাগানো বীজ আলোতে আসবে না।
সে ভাববে কী হলো? 
মাটি খুঁড়েই বরং দেখি—
দেখবে একটি জংধরা বুলেটের নিচে 
থেমে গেছে বন্ধুর জন্ম।  
 
শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে 
যে উদ্ভিদ অবনত মস্তকে 
শুধুমাত্র বন্ধুত্বের টানে উঠে এসেছিল।  
সেও বিদ্রোহ করা শিখবে।  
মাটির নিচেই যে পঙ্গু 
সে কি নিঃশ্বাস নিতে দাঁড়াবে 
প্রতিহিংসার এই জগতে? 
 
এক অপ্রস্তুত পৃথিবী কী করে রেখে যাবে
তোমার অনাগত সন্তানের জন্যে!
যেখানে নিসর্গের মাঝে 
হঠাৎ ঝলসে ওঠে বারুদ আগুন।  
যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের মুখে 
দৌড়ে বেড়ায় তোমার স্বপ্নযাত্রা।  
মাটিতে রক্তের দাগ যেখানে 
চিহ্ন আঁকে লোভ আর ক্ষমতার।  
স্বার্থান্বেষী পুঁজিবাদ যেখানে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে প্রতিনিয়ত, 
উস্কে দিচ্ছে চরম হানাহানির।
 
যেখানে বাতাস ভারী হয়েছে যুদ্ধদূষণে
বাতাসে বাতাসে যেখানে হুঁশিয়ারি শোনায় 
অপেক্ষমাণ করুণ মৃত্যুর।  
যেখানে বিস্ফোরিত গ্রেনেডের স্প্লিন্টার
অট্টহাসিতে নেচে ওঠে 
যেখানে মুহূর্তেই ঝলসানো কাবাবে পরিণত হয়  
সদা হাস্যপ্রোজ্জ্বল নিষ্পাপ শিশু।  
সেখানে তুমি কীভাবে স্বপ্নের চাষ করবে?
 
অপত্য শিশু জন্মাক আর না জন্মাক 
প্রতিহিংসা টিকে থাক 
দাবানল ছড়িয়েছে মানুষ 
মানবতার চামড়া ঝলসে যাক।  
 
তারচেয়ে বরং নষ্ট পৃথিবীর ধ্বংস হোক
সীমান্তে সীমান্তে কাটাতাঁর টিকে থাকুক।  
সভ্যতার শরীর ঝলসে 
আবার নতুন সভ্যতা আসবে,
কিন্তু প্রতিহিংসার জমাটবাঁধা সুপ্ত আগ্নেয়গিরিরা 
জন্ম নেবে বারংবার।  
 
আমি মস্তিষ্ক-বিকৃত দিয়ে যাচ্ছি
অনাগত শিশুর জন্য শোকবার্তা।
 
 

পারিজাতের অভিশাপ
জাকিয়া মৌ 

 
তেত্রিশ কোটি বছর তাকে
অভিশাপ দেওয়ার পর
হুট করে মনে পড়ে যে
আমি স্বর্গের পারিজাত ছিলাম।
মর্তের শিউলি হতে চাইনি বলেই
হয়তো জীবনের মধুতে আজ বড় নোনা
দেবতা, কিসের জন্য সব এতো বিষাদ?
কেন তবে ভালোবাসার কবিতারা নির্বাসনে?
নিদ্রাদেবতা শুনে হাসে, সুমিষ্ট গন্ধে নাকি
আমার মাঝে সবাই মাদকতা খোঁজে,
নির্বাক আমিও ঠায় হয়ে রই
জানি না এই পরিনামের শেষ কই!
জীবনের সুধা আজ বড় বেশি বেমানান
বড় বেশি তিক্ত লাগে তা
অভিসারের যন্ত্রণা অভিশাপ হয়ে তাই
বেসুরে বাজে বারতা।
নান্দনিক জীবন খুঁজি আমি
কীভাবে পাবো জানি না
স্বর্গের ফুল হারিয়ে গেছি বলে
মর্তে আমার নেই বাসনা।
অভিশাপ দেই বার বার
অভিশাপ দেই দেবতা
জীবনের মধুতে আজ এতো নোনা কেন?
কেন তবে ভালোবাসার কবিতারা নির্বাসনে?
 
 
কালজ্ঞ সুখ
নওশাদ আহমেদ

 
তোদের মৃত্যুতে আমি আর কষ্ট পাই না
তোদের আর্তনাদ কানে পৌঁছায় না
তোদের মরা-পচা লাশের গন্ধ ভালোই লাগে
এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।  
 
তোদের জানাজা দেখলে আমার আনন্দ হয়
মনে হয় বরযাত্রী যাচ্ছে, চার ঘোড়ার পিঠে নতুন বর!
তোরা সব মরে যা...
তোদের মরে যাওয়া উচিৎ...
আমার, আমার আরও আনন্দ দরকার।  
 
তোরা কেউ মাটি চাপায় মরে যা, কেউ ঘর পোড়ায়
কয়েকজনকে গুম করা হোক, আর কিছু খুন
নদীতে ভেসে উঠুক তোদের বস্তাবন্দি লাশ
রেললাইনে পড়ে থাক মাথাকাটা শরীর 
চিৎকার চেঁচামেচি করুক তোদের স্বজনেরা
আমার ভালোই লাগে শুনতে, আনন্দ হয়! 
 
লোকালয়ে পড়ে থাক ধর্ষিতার নিথর-উলঙ্গ দেহ
অনলাইনে বাজুক বালিকার আত্মচিৎকারের ধ্বনি 
জাতি খুঁজে নিক রাতের পৈশাচিক আনন্দের খোরাক 
চলুক বিচারের নামে আবার ব্যভিচার 
লজ্জা, অপারগতায় আত্মহত্যা করুক আরও দুজন
আমার আরও রক্ত চাই, আরও মৃত্যু।  
 
ঘরে-ঘরে জ্বালানো হোক নববধূর শরীর
মাতালের অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে থাক চার দেয়াল
নারীর হাতেই ধ্বংস হোক আরেক নারীর অস্তিত্ব
মা হারা মেয়ের ক্রন্দন ধ্বনিতে ভারী হয়ে উঠুক রাতের বাতাস
আরও গান শুনতে চাই আমি, অশ্রুগান।
 
ভ্যাট বসানো হোক তোদের দৃষ্টির ওপর
কালো পর্দা দেওয়া হোক চোখে চোখে
তোরা সব অন্ধ হয়ে যা...
তখন আমি অন্ধকারের রাজ্য গড়বো
আমার আরও চাই, আরও ক্ষমতা।
 
কোটায়-কোটায় ঝুলুক তোদের স্বপ্ন
ভারী হয়ে উঠুক কাগজের ফাইল
ঘুরতে-ঘুরতে ফুটো হয়ে যাক চটিটা
হতাশা, গ্লানিতে তোরা সব আত্মহত্যা কর
তোদের ঝুলন্ত লাশে আমি দোল খাবো...
হা! হা! হা!
 
 
চোখেরা সব অন্ধ হোক
নীল রফিক

 
তোমার ছলনার হাত-পাগুলো গজিয়েছে মাত্র
আমি বুঝে গিয়েছি, তাই প্রস্তুত!
 
ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাবে? মেনে নেব।
নতুনত্বের টানে চলে যাবে? যেতে দেব।
প্রেমহীন আবেগে ভাসাবে? ভাসবো।
অভিনয়ে মুগ্ধ করে মাতাল করবে? মাতাল হবো।
ভালবাসার স্বপনে ঘুম জমাবে? জেগে রাত কাটাব।
আমি তোমার জন্য সব খুঁজে আনতে পারি, তোমাকে খুঁজব না।
তুমি স্বাধীন, ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করব না।
 
ধ্বংস হবো তবুও মাথা নত করে বলব না, ‘ভালোবাসায় একা করো না’।
হাঁটু-গেড়ে ভিখ মাঙ্গার দলে আমি না;
আমি তোমাকে ভালোবাসি, সাধারণ না।
 
 
পতঙ্গ জীবন কিংবা অন্ধত্বের সাধ
রোকেয়া সুলতানা আশা

 

এমনকি পতঙ্গেরাও কেমন রোদ্দুরের স্পর্শ পেলে
ঝলমলিয়ে ওঠে—
ডানা জুড়ে তীব্র আলোর ঝলকানি জাগায়।
জোনাকির মতো নয়—
অমন হলদে সোডিয়াম লাইটের আভা রাত্তিরেই জ্বলে কেবল
দিনের এই আকাশ বেয়ে নামা অসীম আলোর স্রোতে ফ্লোরোসেন্ট বাতির মতন রুপোলি তীব্রতা;
উফফ্! 
কী দারুণ আলোর অপচয়!
জলে সূর্যের ছায়া দেখে আশ মেটে না—
অথচ চাইলেও আমি সূর্যের দিকে চাইতে পারি না;
জ্বলে যায়—
চোখ জ্বলে যায় আমার।
ঈশ্বর! 
তারচে না হয় আমায় অন্ধই করে দাও।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ