কীভাবে ফিরি বলো-
সমুদ্রের রূপালি নীল আরশি
ছায়া ফেলে মেঘের আরশ,
বসে থাকি ছাতাতলে.. ছুঁয়ে যায় বাউরি বিভাস
সৈকতে ঝিনুক খোঁজে পরিযায়ী সারস,
জলের গৌরবে হাসে স্নানের বালিয়াড়ি নিবাস-
হরেক অন্তর্জালে আহত আত্মা যে পথ হারালো;
তারপর দেখো ভেবে-
মেহগিনির স্মৃতিমেঘে গড়ে ওঠছে
আমার বিনম্র ইমারত,
চন্দন কাঠের কুরসিতে মেধা ও মেহনতের দাসখত,
আঙিনায় নিসিন্দা বৃক্ষের সজীব তরবারী-
দালানের দ্বিতলের কাজ এখনো হয়নি সম্পন্ন,
ছাদে টাঙ্গায়ে কুয়াশার কুহক মশারি
পারস্য ফরাস আর মর্মরের মোখতসর অন্ন;
কীভাবে ফিরি বলো-
দোলাচলের আখ নিংড়ে
সংসারের শর্করা সরনীতে সন্ধ্যা যে হলো;
সাপের খোলসের মতো অতঃপর খুলে ফেলে
গৃহে ফেরার মসলিন খোয়াব,
অবগাহনে মাতি.. অন্তরে আফ্রিকার অতলান্ত আঁব
তুলটে তিতমধুর নওল আখর-আঁকি সময়ের স্মৃতিরঙ্গ,
মননের মেহরাবে দাঁড়িয়ে শুনি
বাজায় মোসাফির.. .. মৃদু স্বরে মৃদঙ্গ।
মরম জোসনা
কাঠের সিঁড়িতে শুনি তোমার পায়ের মৃদু আওয়াজ
আমার ভদ্রাসনে নেই কোনো বাদ্যযন্ত্র
কিন্তু কে যেন বাজায় আমার মরম প্রপাতে অলীক এস্রাজ,
স্টাডিতে আসো তুমি- সন্ধ্যা হলে খানিক আনমনা
আছো পরবাসে বহুদূরে তুষার ঝরা বনানীর শহরে
মূর্ত হয়ে পরম শিশিরে বহুকালের বিমূর্ত আরাধনা।
বই ঘাঁটো, বসে বসে তুমি পৃষ্টা উল্টাও নিরিবিলি
নিবিড় চোখে দেখো ভ্যানগগের সূর্যমায়াময় তসবির,
মোমদানে বাতি জ্বালো, নিমিষে ম্রিয়মান হয় আমার অন্তর্গত তিমির।
উঠে দাড়াও, ধ্বনি হয় রেশমে নিক্কনে
স্টিরিওতে বাজাও হংসধ্বনি রাগে ব্যাকুল বন্দিশ,
এসেছো, ভালোই হয়েছে, তোমার কথাই তো ভাবছি অহর্নিশ।
অশরীরি উপস্থিতির অবাস্তব মীড়ে বাজছে যে মূর্চ্চনা
জানি আমি আদতে তা ইল্যুশন,
কতো জনম সূর্যদুপুর.. নিশিরাতের রজনীগন্ধায় করি সহজিয়া তর্পণ।
তোমাকে পাবো স্পর্শ শিহরে এতোটা করি না প্রত্যাশা আর,
তুমি যে আছো মরম জোছনায়- এইতো যথেষ্ট আমার।
সাভানা থেকে সান্তা ফে
ঔক গাছে চিরসবুজ পত্রালি শোভিত সাভানা
বিষুব রেখা থেকে খানিক দূরের এ শহরে বসবাস মন্দ কিছু না,
তারপরও সময় হলো ডেরা গোটানোর
চলে যাবো-
সনোরা ডেজার্টের কাছাকাছি- সান্তা ফে’তে বাঁধবো ঘর;
ভাবছি- উড়ে যাবো আজ ওদিকে দূর পশ্চিমে
সাভানার আর্দ্র আবহে চাষ করেছি কিছু কাল অনিকেত তরুর
স্প্যানিস মস জড়িয়েছে ডালপালা ধরেনি প্রসূণ তিতকুটে নিমে।
রাতবিরাতে হেঁটেছি এখানে হ্রেসা ছড়ানো জুড়ি গাড়ির পেছনে
খুঁটিয়ে দেখেছি ক্লাসিক স্থাপথ্যকলার বেলে পাথরে গড়া আমখাস,
জ্যাজ বাদনে হৃদয় হয়েছে ময়ূর প্রবণ
মেতেছি পার্টিপরবের খোশগল্পে- পাইনি নন্দিত নিভৃতির তালাশ।
চার্চের আঙিনায় দেখেছি
গৃহহীন মানুষ প্রার্থনায় ফুটিয়েছে মোমজ¦লা প্রহর,
নদীতীরে বিভোর হয়েছি প্রমেনাদে
টাগবোট কায়ক্লেশে টেনেছে জলমগ্ন বোটের বহর।
বাতব্যধিগ্রস্ত শরীরের অক্ষমতায় কুটেছি মাথা
স্বাতী নক্ষত্রের অশ্রুময় আইসকিউব মিশিয়ে
পান করেছি ঝাঁঝালো জ্যাক ডানিয়েল,
কখনো এক্রোব্যাটদের কেরদানি দেখতে গিয়ে
ধূসর স্মোকপরা হিস্পানিক সেক্সওয়ার্কারকে ছুঁয়ে
মনে হয়েছে সকলই গরল ভেল।
শুনেছি সান্তা ফে’র আকাশে মেঘের মোহন মীড়ে
আঁকা হয় হামেশা- গোধূলির চারুকেশী রুশনাই,
সনোরা ডেজার্টে খুঁজবো আপাচি যোদ্ধার তীরের অগ্রভাগ
শুনবো-পরিযায়ী হরিণের খুরে বাজা প্রান্তর ছেড়ে যাওয়ার সানাই।
দ্বিধা জাগে-
যদিবা নিজ দেহ জড়াতে না পারি আপাচি বস্ত্রের বর্ণাঢ্য ফাগে,
যদিবা আসমান ছেয়ে যায় সাইমুম প্রলয়ে
বাঁধতে না পারি লগ কেবিনের মতো ছোট্ট এক আদনা ঘর,
যাওয়ার সুযোগ হবে কী ভিন্ন এক অজানা লোকালয়ে
খোলা থাকবে কী রানওয়েতে গাইডলাইট জ¦লা বিমান বন্দর।
স্পাইমেয়ে
প্রতীক্ষায় থাকো- শোনো মনযোগ দিয়ে আমি যা বলছি
এ শহরে একদিন তা ঘটবে,
এখন যা ফিসফিসানি কানাঘুষা ঋতুমতি হওয়ার উদ্বেগ
গুপ্ত ইসতেহারের প্রতিটি ছত্র পত্রিকায় সংবাদ হয়ে রটবে।
সন্ধ্য হওয়ার আগেই ডাকপিওন বিলি করবে গ্রিটিংস কার্ড
হাশিয়ায় নক্সিকাঁথার পাড় তোলা গোটা গোটা হরফের চিঠি,
ব্লুগ্রাস গাইতে গাইতে পানশালা ছেড়ে বেরিয়ে জাহাজী মদ্যপ
রঙতুলি দিয়ে কটেজের দেয়ালে আঁকবে কবিতার গ্রাফিটি।
রেস্তোরাঁয় বসে জেব্রার ডোরাকাটা জ্যাকেট পরা খালাসি পুরুষ
সুশি-সামুদ্রিক গুল্মের স্যুপ প্রিয় মানবীর জন্য অর্ডার করে
সাকের পানপাত্রে হবে দিলখোলা,
গৃহহীনের শীতার্থ তাঁবুতে জ্বালাবে সে দিব্য ফায়ার প্লেস
দেন মোহরের উদ্বেগের মতো গনগনে আঁচ ছড়াবে তপ্ত চুলা।
ভোজবাজিতে আচানক রেস্তোরাঁটি হবে জাভার মস মোড়া মন্দির
দেয়ালগাত্রে পোড়ামাটির কিন্নরীরা গ্যামেলিওন বাদনে হবে অধীর।
রেস্তোরাঁয় যার সাথে সাকে পানে খালাসি পুরুষ হবে মশগুল
পারস্যের পারফিউমে খুঁজবে সে আজ মননের সুরভিত পথ্য,
নৃত্যের আরতিতে স্পাইমেয়ে মাতাহারির মতো মুদ্রায় নির্ভূল
তার অবচেতন থেকে আতশি কাচে তুলে নেবে স্মৃতিময় তথ্য।
চার্লস রিভার ও মার্থস ভিনিয়ার্ড দ্বীপ
জল সহজে ফেরে না তার উৎসে
নদী হয়- খোঁজে সমুদ্র
পাহাড় পাড়ি দিয়ে সজোরে ঝরে পড়ে প্রপাত,
ছুঁয়ে যায় দ্বীপ- সয়লাবে জড়ায় বৃষ্টিবন
শ্বাসমূলের শরীরে রাখে তার নোনা হাত।
জলের স্বভাব বিছারি আমি
চার্লস রিভারের পাড় ধরে হাঁটি আনমনা,
তিমিমাছের ঝংকার নিয়ে ভাবিÑখুঁজি জলপথ
নাবিকের কম্পাসি বিষয়-আশয় থেকে গেলো আজানা।
পালতোলা বোটের নিচে শ্যাওলা মাখা মাছ
ঊর্মিময় ফেনার বহতা কনসার্টে নদীটি বাজায়
শোঁপার প্রাগে ফেরার নস্টালজিক সিম্পনি,
বস্টন সমুদ্র বন্দরের কাছাকাছি
বোটহাউসের সিঁড়িতে বসে আমার শ্রবণে ঝরে
নদীজলের আকাশকল্যান ধ্বনি।
ওড়ে সিগাল-পাল তুলে ভাসে ত্রিমারান বোট
চলমান চার্লস কেবলই ছড়ায়
তার জলজ দেহের রূপালি লাবণ্য,
জ্যাজ ব্যান্ড বাজায় বেফানা হয়ে
সুরছন্দের অভ্রচূর্ণ চারদিকে ঝড় তুলে বন্য।
ওয়াটারফ্রন্টের রেস্তোরাঁয় সামুদ্রিক খাবারের সুগন্ধ
হারবারের পানশালায় বারলেক্স নৃত্যে
গেলরাতে মেতেছিলো গুজরাতের যে নারী,
তার এপার্টমেন্টের জানালা আজ বন্ধ,
তবে ফিরে আসে সে মনে
নক্ষত্রচূর্ণ ঝলসায় তার বিবাগি টিপে,
জলে ভাসা স্মৃতিময় ড্রিফ্টউড ছুঁয়ে ভাবি
ত্রিমারান বোট চেপে আজ চলে যাই
মার্থাস ভিনিয়ার্ড দ্বীপে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
এসএনএস