ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কবিতা

একগুচ্ছ কবিতা | আকেল হায়দার

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
একগুচ্ছ কবিতা | আকেল হায়দার ...

মুখে মুখে কত কিছুই বলি! কিন্তু চাইলেই পারিনা সবখানে যেতে। পায়ে সংসার নামক হাতকড়া সাঁটা। তবুও কল্পনায় কখনো কখনো চলে যাই একেবারেই তোমার কাছে। যেতে যেতে আবার সন্ধ্যায় ফিরি আপনার বৃত্তে। শেষ অব্দি কিছুতেই পারিনা পৌঁছাতে তোমার কাছাকাছি...

জ্যোৎস্নাগ্রহ

জ্যোৎস্নাগ্রহে একাকী
কেউ আসবে বলেছিল!
সন্ধ্যাতারা মুচকি হাসে
কি জানি বলতে চায়,
অতশত বুঝিনা আমি
জোনাকিফুলে হারিয়ে যাই।
ছাইরঙা মেঘের ভাঁজে
তার মুখ সুবাসে ভাসে
নক্ষত্রের কঙ্কণে নৃত্য
বসন্ত পরাগে সুহাসিনী রাত।


হেসে উঠে নদী, ধানখেত, মাঠ
রাত্রির হাতে হাত অপেক্ষমান, 
একজন শুধু বলেছিল
জ্যোৎস্না ঋতুমতী হলে
দেখা হবে আমাদের!


জোয়ারভাটা

মনের বিবৃতিতে তোমার উপযোগ-
আশ্চর্য! নিকটস্থ হলে আছড়ে পড়ে শরীর।
বালিয়াড়ি জুড়ে
গুচ্ছ গুচ্ছ জল
তাতে নুনের কৃষিকাজ,
বৃত্তাকার ঘিরে দুটি হাত
দুটি ঠোঁট, দুটি চোখ, দুটি পা
মূর্তমান প্রতীমা পূজায় মত্ত।
সোনালী আকাশ
একজোড়া চাঁদ
কোমল দূর্বাঘাস
স্বচ্ছ অথৈ নদী
বড্ড ভালো লাগে, ছোট্ট পৃথিবী তোমার।
কাবাডি, কানামাছি, গোল্লাছুট
আরো কতোকি খেলি ইচ্ছেমতো!
ডুবসাঁতারে ছুঁই মৎসশিশু
ইজেলে ভাসে মেঘরোদ্দুর
কিভাবে যে মুহূর্তগুলো কাটে
সেসবের টের পাই খুব কম!
তুমি কাছে এলে বোবা হয় ঘড়ি-
প্রমত্ত বাসনা জলে মাংশাসীতরী।


জলনীলিকা

সময় ভাসে ভাটির নৌকায় 
দিদৃক্ষা প্রহরে মৃত পারিজাত 
বিষে কাতর চিরহরিৎ রাত- 
যোজন দূরে শ্বেতদ্রাঘিমা!

টেরাকোটা গড়া শিল্পকলায়    
ফ্রেমবন্দী সুখে যাদুশহর 
নিমীল চোখ ধূসরতা নিয়ে      
পথ হাঁটছ নিথর বুকে।

লাবণ্য কনিকা মেখে ত্বকে     
ভেসে যাও পরিযায়ী মেঘে, 
রোদে পুড়িয়ে অনুযোগবৃন্দ      
ভাঙাও বরফ গাছের ঘুম!

রাত্রিফুলে পুস্পিত সরোবরে   
ফিরে যাও জোনাকি ভেলায়
স্পর্শভূক আহ্বানের মিছিলে          
হোক তুমিময় পূর্ণিমা তিথি।  


অভিসন্তাপ

নাব্যতাহীন নদী গল্পের শেষ নয়! 

বসন্তে ঝরাপাতার আহাজারি যেমন  
অর্থবহ করেনা বৃক্ষের অপমৃত্যু-  
দুর্বিষহ গ্রীষ্ম তেমনি দেয়না জানান 
অপুষ্পকবর্ষা; বৃষ্টিহীন গার্হস্থ্য!

চকচকে অতিথি বৃষ্টির মোহে 
রাতকানা পাখি হয়ে উড়লে 
বিদ্যুৎ বজ্রপাতের আকাশে-    
কিভাবে পাবে রঙধনু নাগালে  
উগ্ররোদে জলপরী বাহুডোর।  


একদিন অরণ্যে...

একদিন সময় করে হারিয়ে যাবো প্রকৃতিরাজ্যে তোমার সাথে। সারাদিন শঙ্খশাদা ফর্সা হাতের আঙ্গুল ছুঁয়ে পাহাড়ের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াবো। সবুজের ডানায় ভাসবো এ পাহাড় ও পাহাড়। লতা-গুল্ম-বৃক্ষের ফাঁকে ফাঁকে খরস্রোতা নদীর বাঁকে বাঁকে। বুনো ফুলের মাতাল গন্ধে ডুব দিয়ে তোমার জোছনাবুকে ঘুমাবো অনেকক্ষণ। পৌষী রোদফুল মালা পরিয়ে দেবো তোমার চোখে। দুষ্ট মেঘেরা হেসে হেসে লুকোচুরি খেলবে তোমার চুলে। বাহারি ঝরা পাতাগুলো আমাদের হৃদয়জ অভ্যর্থনা দেবে। পথের ভাঁজে ভাঁজে প্রজাপতির মতো আমি হারিয়ে খুঁজবো তোমাকে।

মুখে মুখে কত কিছুই বলি! কিন্তু চাইলেই পারিনা সবখানে যেতে। পায়ে সংসার নামক হাতকড়া সাঁটা। তবুও কল্পনায় কখনো কখনো চলে যাই একেবারেই তোমার কাছে। যেতে যেতে আবার সন্ধ্যায় ফিরি আপনার বৃত্তে। শেষ অব্দি কিছুতেই পারিনা পৌঁছাতে তোমার কাছাকাছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ