এ পর্যন্ত আন্দালীবের ৪টি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। বইগুলো হলো- ফ্রস্টেড গ্লাসের ওইপাশে, টোটেম সঙ্গীত, বৃশ্চিকসূর্যের নিচে ও অপুষ্পক।
সম্পাদনা করেছেন শিল্পসাহিত্যের ছোটকাগজ- জোনাক রোড।
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য আন্দালীবের একগুচ্ছ কবিতা পত্রস্থ করা হলো।
বন্দিশ
১.
পাপড়ি সরিয়ে দেখি
এ কী
তুমিও নাজুক এত
যেন গোলাপের মতো
আভা ছড়িয়েছো যে কী
২.
নিহিলতা ভেঙে উঠে আসবার মতো
জলযানটির গুঞ্জন ধরে রাখি
পার হয়ে এসে ঝঞ্ঝা-মুখর নদী
তোমার কাছেই আঁকতে দিয়েছি ক্ষত
সে ক্ষত এমন বর্ধনশীল ভাবে
ছড়িয়ে পড়েছে শরীর কিম্বা মনে
দূরে ঠেলে দিয়ে নদীটির কথকতা
বাষ্পরুদ্ধ জলযানখানি কাঁপে
যদি কম্পন ভুলেই ভেবেছ তারে
দূরপাল্লার ভ্রমণের ফাঁকে-ফাঁকে
ট্যুর প্ল্যান লিখে লাভ হবেনা-তো আর
পাওয়া যাবে তারে ভাবনার বিস্তারে
ভাবতে-ভাবতে যে দিন গিয়েছে চলে
নিষ্কাম ভাবে কামনায় গনগনে
চুল্লীর আঁচে সেঁকে নেয়া গেল প্রেম
মানবিক বোধ পারমাণবিক ছলে
পরমাণু জানে ভেঙে যাওয়া কত ভালো
ভেঙে যাওয়া জানে বিষণ্ণতার দিন
দু’টি পথ যেন দুই দিকে গেছে বেঁকে
পথের প্রান্তে বিস্ফোরণের আলো
সেই আলোতেই ছড়িয়েছি মধুরেণ
জলযানটির পেটের ভেতরে বসে
নৌপথে ঘোরা নাবিকের মতো করে
আমাকেও লোকে ভুলতে বসেছে যেন
৩.
শ্রুতির অধিক বধিরতা নাকি ভালো
গভীর বনের নির্জনতার কাছে
আমাদের কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে
সে’ কথা ভেবেই জ্বালতে চেয়েছি আলো
এত আলো তবু দেখার বাইরে যদি
থেকে যায় কোন দৃশ্যের বিস্তার
সুরের ভেতর ডুবে গেলে দু’টি পার
ক্রম-হ্রাসমান হয় বাতাসের গতি
গতিময় যদি না হলো বাতাস আর
তেপান্তরের জনশূন্যতা ঠেলে
বিরানভূমির ঠিক মাঝখানে গেলে
মনে জেগে ওঠে পরিমিত হাহাকার
পরিমাণ যদি হিসাব করতে যাই
বিস্তর হাসি কান্নার পরে এতো
তারই আশ্রয়ে আজ ফিরে যাওয়া যেতো
আলোতে যে নাই অন্ধকারেও নাই
৪.
গানের ভেতরে জ্বলে অপরূপ অপরূপ বাণী
সে-সব অমল কথা বলতে চেয়েছে কারা জানি
যদিও ভুলেছি কিছু বাকিটাও মনে নেই পুরো
গানের ভেতর দিয়ে ছুঁয়ে আসা যাক সেই চূড়ো
তারপর ঢালুতায় গড়াতে-গড়াতে আসি যেই
দেখি এত সান্দ্রতা উত্তুঙ্গতা আর নেই
শিখরটা ছুঁয়ে দিলে তারপর শুধুই পতন
গানের ভেতরে শুনি সেইসব গান সারাক্ষণ
গান যত থেকে গেছে আমাদের শ্রুতির ভেতর
গড়ে ওঠে নড়ে ওঠে সারা রাত সারা দিনভর
ধরে রাখে বাণী আর ধরে রাখে তাজ্জব সুর
গানের ভেতর দিয়ে কাছে আসে এমন সুদূর
দূরতম মেঘ জানে দূরে যাওয়া বিরহ কেমন
পৃথিবীর নাম ধরে ডেকে আনে যখন-তখন
ঝরে যেতে ভালো লাগে বলে তারা ঝরে যেতে চায়
গানের ভেতর দিয়ে প্রাণ তাকে আবার সাজায়
পিপুল
পিপুল গাছের ডালে উঠে গেছে চাঁদ
মেঘ নেই কাছে ত্রস্ত হরিণ আছে
মসের বাগানে রাখা ক্যানোপির ফাঁদ
যেন বুবি-ট্র্যাপ মুদে গেছে খুব কাছে
রুকস্যাক ফেলে পাহাড়ের দিকে গেলে
চেনা যাবে ছায়া এই সংগত ট্যুর
পিপুলের ডাল ধরে সুবাতাস খেলে
কস্তুরী ঘ্রাণ আনে দূর বহু দূর
যেন আগুয়ান মেঘ বস্তুত তুলো
হয়ে ভাসে এই বিদীর্ণ অবকাশে
থিতিয়ে আসার পর কার দিকে ধুলো
ওড়ে পিপুলের উপশাখাদের পাশে
তবু চাঁদ তার ডালে লুকিয়েছে আলো
আজ সব থেকে ভালো ট্রাভেলার জানে
ব্যাহত বাতাস হায় কতোটা পৌঁছালো
উপনিবেশিক যত শব্দের মানে
যন্তর-মন্তর
চলো করি তবে গুরুচণ্ডালী সবে
পাণিনির কিরে কেটে ব্যাকরণ চিরে
দিলে তবেইতো সিদ্ধহস্ত হবে
ভাষার গড়নে সুফল আসবে ধীরে
নতুবা এ’সবই ইথারে-ইথারে রবে
চক্কর খাবে মসজিদে মন্দিরে
বিধাতার ভাষা হায় বুঝেছে কে কবে
মেনে নিয়ে তারে এত চিহ্নের ভীড়ে
ফলত এ’ ভাষা মিশনারি মক্তবে
গুমরে-গুমরে মরে সাগরের তীরে
যাওয়া হয়নিকো তার- কখনো কি হবে
আজ এই কথা ভাবে গুরু নতশিরে
আর চণ্ডাল বসে ভাবে প্রমিতের
কিছু ভজকট করে দেয়া যাক আজ
নয়ত গোছানো আর হবে না আখের
শুরু হয়ে গেলে কাল ভাষার স্বরাজ
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এইচজে
কবিতা
আন্দালীবের একগুচ্ছ কবিতা
কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
কবি আন্দালীব। ১৯৭৮ সালের ১ অক্টোবর জন্ম এ কবির। কবিতা ছাড়াও গদ্য লেখেন তিনি।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।