মুর্হুমুহু স্লোগানে জয়ধ্বনির তুমুল করতালিতে
পা রাখলেন তিনি মাতৃভূমির প্রিয় মাটিতে।
আবেগাপ্লুত ভালবাসায় শপথের মালা পরে
বঙ্গকন্যা হাত নাড়ালেন আকাশপানে তুলে…
কী আশ্চর্য!
ধীরে ধীরে জগদ্দল পাথর হয়ে
আকাশ বুকে চেপে থাকা
অশুভ মেঘেরা যাচ্ছিল সরে!
আর একপশলা বৃষ্টি হয়ে
দলবেঁধে সাদা মেঘেরা
পড়ল আনন্দে ঝরে
কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের চোখে-মুখে
ঘামার্ত বৈদেশিক মুদ্রায়
ধুলি-জমা সবুজ প্রান্তরে।
ঝরে পড়ল ইতিহাসের পাতায়
শিল্পির গানে, কবির কবিতায়
ফসলের মাঠে, নৌকার পালে
চিত্রকরের রঙ-তুলিতে।
এক লহমায় সতেজ হয়ে গেল
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল;
সমৃদ্ধির আলো উঠল জ্বলে
শূন্য হয়ে থাকা অর্থনীতির ঝুলিতে।
.....................................................
অদ্ভূত আঁধার নেমেছে পৃথিবীতে
অনিন্দ্য টিটো
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে’—
যদি মরণ ডেকে নেয় কোন এক প্রভাতে
যদি যাই চলে, গোরস্তানের নহরে
যদি আর না ফিরি কাঁচের শহরে
চলতে চলতে একটু থামিও
রেখো মনে ছিলাম আমিও
হেঁটেছিলাম আলোর পথে তোমাদের সাথে;
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে!’
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে’—
যেখানে সোনা ধান দোলে কৃষকের গানে
দলবেঁধে পুকুর-জলে হাঁসেরা ভাসে
ফড়িংয়ের দল নাচে কচি দুর্বাঘাসে
নিভু আলোয় নেমে আসা সন্ধ্যার আঁধারে
বাড়ির পাশে লুকোচুরি খেলার ঝোপ-ঝাড়ে
অদ্ভূত আঁধার নেমেছে ঝিমধরা সাঝেতে;
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে!’
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে’—
গাঁয়ের বধুরা কলসী কাঁখে হেঁটেছে যে পথে
উড়েতো ঘুড়ি আকাশে, দুর্বা খেলে মাঠের পরেতে
খুকীরা খেলত পুতুল খেলার ঘরেতে
নদীর কাদাজলে রোদ যেখানে করে চিকচিক
আমের মুকুল-ঘ্রাণ বাতাসে উড়ে দিকবিদিক
বৈশাখী প্রান্তরে পথিক জিরানোর বটের ছায়াতে;
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে!’
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে’—
পথ চেয়ে থাকা মায়ের আঁচল মায়াতে
বেতগাছে ধরে থাকা রসালো বেতফলে
বিলে ঝিলে ফুটে থাকা রক্ত কমলে
অশ্বত্থ ডালে বসে অন্ধপেঁচা করছে প্রতিবাদ
প্রিয়ার বুকের ভরাট বৃত্তে কামনাহীন হাত
পড়েছে ঢলে প্রেমিক চাঁদ অমানিশা-রাতে
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে!’
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে’—
খেজুর রসের গন্ধ উড়া পৌষের রাতে
জীবন যেখানে গল্প লেখে সুইঁ’র ফোড়ে
বসন্ত বাতাস যেখানে কড়া নাড়ে দোরে
ফুলের ঝোপে মাখামাখি করে জোনাকির ভিড়
ক্লান্ত বাঘের মত খোয়াড়ি মানুষের নত শির
অশুভ ডানা ঝাপ্টে পেঁচা জীবনের ছবিতে
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে!’
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে’—
নগরসভা পেয়ালায় চুমুক দেয় পানশালাতে
বুভুক্ষ মানুষের ভিড় হাত পাতে
গেরামে নগরে অলিগলি রাজপথে
রোদ ছুটছে চাঁদের দেশেতে দূর, কতদূর
কুঁড়েঘরে দিতে অমলিন একমুঠো রোদ্দুর!
ফাগুন রোদে কি মরণ শুকাবে মূক মাটিতে?
‘অদ্ভূত এক আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীতে!’
.....................................................
নোনাজলের কোলাহল
অনিন্দ্য টিটো
মানুষ —
এবার নেমে এসো মাটিতে
চরণ ফেল আঁতুরঘরেতে!
ভুলে গেছ মানুষ তুমি
এই মাটিতেই জীবন আছে মিশে
শ্যামল শীতল ছায়ার শেকড়ে;
এই মাটিই যে মিশে আছে
তোমার ওই দেহের রক্ত মাংস হাড়ে।
ভুলে গেছ, নিঃশ্বাস নিতে আকাশতলে সবুজে
ভুলে গেছ যেতে পাহাড়ে ঝর্ণায়, বনে জঙ্গলে
রেখেছ পা মহাকাশের মহাশূন্যে
মহাকাশচারী হয়ে চাঁদে মঙ্গলে।
রেখেছ পা রকেট, বোয়িং কিংবা যুদ্ধ-বিমানে
ইট-পাথরে গড়া, কাঁচে ঘেরা সুরম্য দালানে।
ভুলে গেছো শোষিত নিপীড়িত গণমানুষের
অসংখ্য বিপ্লব, ঝরে যাওয়া অসংখ্য প্রাণ
অন্ধকারে নেমে আসা নোনাজলের কোলাহল
দুপুর-আকাশ পাড়ে নূয়ে পড়া নিস্প্রাণ অঘ্রাণ।
ভুলে গেছ পাল তোলা নৌকায় মাঝিদের গান
ঢেউ’র তালে ভেসে যাওয়া নাইওরির সাম্পান;
ভুলে গেছে প্রেম, প্রিয়ার মুখের লাজুক হাসি
মিষ্টি হাসির টোল পরা গাল, দুল পরা কান।
অঘ্রানের প্রান্তরে থৈ থৈ করে সোনা ধানক্ষেত
মাটি-ঘামে খড়কুটো লেগে থাকা মায়ের আঁচল
কোমড়ে বাধা বাবার গামছা, রোদে পোড়া মুখ
লালফিতে বাধা বোনের বিণুনি, লজ্জ্বার কাজল।
পা রেখেছ তুমি অস্ত্র-গুলি মেশিনগানে
লঞ্চ-স্টিমারে,জাহাজ আর সাবমেরিনে!
উঠেছ মেতে হত্যা খুনে হাতে হাত বদলে
রেখেছ পা বর্বর ধর্মান্ধতায়, ক্ষমতা দখলে
যেখানে নারীত্ব নিয়ে খেলা করে উলঙ্গ আদিমতা
প্রেমকে টেনে এনে করেছ সমাহিত ভুলে শালীনতা
এগিয়ে গেছ সমুদ্রের দিকে সাগরের প্রয়াণে
অবুঝ পতঙ্গ হয়ে ঝাপ দিয়েছ শ্মশানের উনুনে।
অনেক অশ্রুজল শুকিয়ে গেছে কবে
অনেক নদীর জল গেছে উবে
জীবনের আঁধার পাড়ে দেখো দাঁড়িয়ে
মৃত্যুর অদ্ভূত সূর্য উঠছে পুবে।
ফিরে এসো শেকড়ে খালি চরণ রাখ মাটিতে
এলিয়ে দাও দেহখানি প্রকৃতির সবুজ কোলেতে।
ফিরে এসো শান্তির নীড়ে ভালবাসার ঠিকানায়
যেখানে ফুল ফোটে, পাখিরা গান গায়।
যেখানে জোড়া ঘুঘু প্রেমের সাঁঝে
চুম্বন এঁকে দেয় একে অপরের ঠোঁটে
মরীচিকা জয় করে নাড়ির টানে এসো ছুটে
প্রেম ও প্রকৃতি-বীক্ষণের মাঝে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২০