প্রায় সাড়ে চার বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন। এই সম্মেলন থেকেই নির্বাচিত হবে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব।
এদিকে ছাত্রলীগের নতুন দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই চার পদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন এক ডজন প্রার্থী।
উল্লেখ, আজ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগেরও কমিটি দেওয়া হবে।
এদিকে সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় জানিয়েছে, ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ শেখ হাসিনাই পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবেন।
সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের আবেদনপত্র নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নতুন কমিটি হবে। ’
কারা আসতে পারেন নেতৃত্বে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ চার পদের জন্য নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের তালিকা তৈরি করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতারা। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে কাদের অবস্থান সবচেয়ে ভালো, সেটি জানতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জরিপও চালাচ্ছে।
বিগত বছরগুলো দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব (কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ।
এবারের সম্মেলনে এসব অঞ্চলের যেসব ছাত্রলীগ নেতা আলোচনায় রয়েছেন-
উত্তরবঙ্গ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু ও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মন।
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল (নরসিংদী জেলার বাসিন্দা)।
চট্টগ্রাম বিভাগ
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন ও সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-সমাজ সেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
বরিশাল বিভাগ
এ বিভাগ থেকে আলোচনায় আছেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।
খুলনা বিভাগ
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ থেকে আলোচনায় আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ও সহ-সম্পাদক এসএম রাকিব সিরাজী।
ফরিদপুর
ছাত্রলীগের সবচেয়ে বেশি নেতা এসেছে ফরিদপুর থেকে। এই জেলা থেকে আলোচনায় আছেন আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত (বর্তমান কমিটির), কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মোহাম্মদ (বর্তমান কমিটির), উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান ও সুজন শেখ (বর্তমান কমিটির)।
নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা বাড়ার সম্ভাবনা
এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতাদের বয়সসীমা এক বছর বাড়তে পারে। সে হিসাবে ২৮ বছর ৩৬৪ দিন থেকে বয়সসীমা এক বছর বেড়ে ২৯ বছর ৩৬৪ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, মৌলবাদবিরোধী অবস্থান যাদের আছে, যারা জনপ্রিয়- তারা কমিটিতে গুরুত্ব পাবেন।
সম্মেলন হতে দেরি হওয়ায় বয়সসীমা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্মেলনের মাঠেই বয়সসীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানী দায়িত্ব পান। তারা পদ হারালে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি পদে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক পদে লেখক ভট্টাচার্য আসেন। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ‘ভারমুক্ত’ হন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
এনবি/এমএইচএস