ঢাকা: বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য বিএনপি নিজ দলের নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও মোর্শেদ খানের কাছে মোটা অংকের টাকা চেয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, টাকা দিতে না পারায় বিএনপির ওই নেতারা মনোনয়ন পাননি।
তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসে এ কথা জানিয়েছিলেন বলেও শেখ হাসিনা জানান।
মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশটাকে এমন অবস্থা বানিয়েছিল যেন জরুরি অবস্থা (ইমারজেন্সি) ঘোষণা হয়। আর সেই ইমারজেন্সিতেও যারা এসেছিল প্রেসিডেন্ট ছিলো বিএনপির, প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন, মাইনুদ্দিন সবই বিএনপির সৃষ্টি। ক্ষমতা দখল করে তারা কিন্তু গ্রেফতার করলো আমাকে, খালেদা জিয়াকে না। এটাই হচ্ছে আশ্চর্যের বিষয়। কারণ আমি তাদের কিছু কাজের প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি সত্য কথা বলতে কখনও ভয় পাই না। তাদের হাতেই মামলা সেই মামলায় এরা সাজা পেয়েছে। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা বিদেশ থেকে এসেছিলো। একটি টাকাও এতিমখানায় যায়নি, সব টাকাই নিজে রেখে দিয়েছিলেন। এ কারণেই সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী বিএনপির সঙ্গে হাত মেলায়, অনেক তত্ত্ব কথা শোনায়, গণতন্ত্রের ছবক দেয়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। এরা নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে। বুদ্ধিজীবী না বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নেতা মেনে; যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে, মানিলন্ডারিং করেছে, অর্থ পাচার করেছে তাদের সঙ্গে জড়ো হয়ে সরকার উৎখাতের জন্য। হ্যাঁ, খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি, এরশাদকে উৎখাত করেছি। জিয়াকেও উৎখাত আমরা করতে পারতাম, পড়ে গেল। আন্দোলনটা গড়ে তোলার আগেই অক্কা পেল, নিজের লোকদের হাতেই মারা গেল। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই সমস্ত কাজ যারা করেছে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা কেন। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কি?
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল জনগণের রুদ্ররোষে। এটা বিএনপির জানা দরকার, মনে রাখা দরকার। জনগণের ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। জনগণও জানে কিভাবে সেই সরকার উৎখাত করতে হয়। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন? জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। আর বিএনপি জিতবে কিভাবে, ২০১৮ সালের নির্বাচন এক সিটে যদি তিন জন করে মনোনয়ন দেয়। এখানে ফখরুল একজনকে মনোনয়ন দেয়, রিজভী একজনকে দেয় আর লন্ডন থেকে তারেক দেয় আরেক জনকে। যে যত টাকা পায় সে ততটা মনোনয়ন দেয়, সেখানে হলো টাকার খেলা। তারপরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে আমাদের নির্বাচন করতে দিলো না। বিএনপির নেতা অন্তত দুই জন আমার কাছে এসে নালিশ করে গেছে। সিলেটের ইনাম আহমেদ চৌধুরী এসে বললেন, দেখো আমার কাছে টাকা চেয়েছে তারেক জিয়া, আমি দিতে পারিনি। তাই আমার মনোনয়ন বাতিল করে যার কাছ থেকে টাকা পেয়েছে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। মোর্শেদ খান তিনি নিজে এসে বলেছেন, তার কাছে মোটা অংকের টাকা চেয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি এ টাকা দিতে পারবো না। এর জন্য মনোনয়ন ক্যান্সেল (বাতিল)। এই হলো তাদের ২০১৮ এর নির্বাচন। এটা আমাদের দেশের যারা বুদ্ধিজীবী অনেকে ভুলেই গেছে এ কথাগুলি লিখবে। ওইভাবে নির্বাচন করে নির্বাচনে জেতা যায় না, এটা হলো বাস্তবতা। সকালে এক জনের নাম দেয়, দুপুরে আরেকটা নাম দেয়, বিকেলে আরেকটা নাম যায়। এইভাবেই হলো তাদের ইলেকশন যে ঢালো কড়ি, মাখো তেল। যে টাকা দেবে পেয়ে যাবে। যে দলের এই অবস্থা তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্মই হয়নি গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে। জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। হ্যাঁ, সেই দল কিছু রাজনীতি শিখেছে আমাদের কাছে যৌথ আন্দোলন করে। কারণ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যখন আমরা করি ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিছু শিখেছে। এটা হলো বস্তব কথা।
>>আরও পড়ুন: ব্যাংকে টাকা আছে, সমস্যা নাই: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
এসকে/এসএ