ঢাকা: রাজধানীসহ সারাদেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) যুগপৎভাবে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট।
সুত্র জানায়, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
একই সময়ে দেশের অন্য ৯টি সাংগঠনিক বিভাগে চলবে এই কর্মসূচি। বিএনপির সঙ্গে একই দিনে, একই সময়ে পৃথক পৃথক গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে সমমনা দল ও জোটগুলো। আজকের কর্মসূচি থেকে ঘোষণা হবে যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি। ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে রূপ দিতে চায় দল ও জোটগুলো।
সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও অন্যান্য রাজবন্দিদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত গণমিছিল থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের মতো এই কর্মসূচিও জোরালোভাবে করতে চায় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। কর্মসূচিতে বড় জমায়েত নিশ্চিত করতে দলগুলোর পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বুধবারের গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। নতুন এ কর্মসূচি চিন্তার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদ করা। দুই দিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এছাড়া ২৫ জানুয়ারি বিএনপি দলীয়ভাবে একটি কর্মসূচি দিতে পারে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে সেই দিনটিতে অতীতের মতো এবারও বিএনপি কর্মসূচি দিতে পারে।
প্রেসক্লাব, বিজয়নগর, এফডিসি মোড়, আরামবাগ এলাকায় গণ-অবস্থান করবে অন্য দলগুলো: বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী অন্তত চারটি জোট রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, বিজয়নগর ও পুরানা পল্টন এলাকায় গণ-অবস্থান করবে। এর মধ্যে সাতদলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট কাছাকাছি জায়গায় গণ-অবস্থান করবে। ১২-দলীয় জোট বিজয়নগরে পানির ট্যাংকের পাশে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়-সংলগ্ন এলাকায়, অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এফসিডি-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম আরামবাগে ইডেন কমপ্লেক্স-সংলগ্ন সড়কে পৃথক গণ-অবস্থান করবে বলে জানিয়েছে।
তবে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ‘গণমিছিল’ এক জোটে করলেও আজকের গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে নেই জামায়াতে ইসলামী। দলটি এবার ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে দলীয়ভাবে আলোচনা সভা করবে।
এদিকে বুধবারের ঘোষিত গণ-অবস্থান কর্মসূচির প্রাক্কালে ময়মনসিংহ ও মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গণআন্দোলনের জোয়ারে ভীত হয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনকে অপব্যবহার করে আন্দোলনের সংগঠকদের গ্রেপ্তার, হয়রানি করে আন্দোলন দমন করতে পুরনো এবং ভোতা কৌশল অবলম্বন করছে। এসব করে আন্দোলন দমন করা যায় না এবং আন্দোলনের জন-জোয়ারও আটকানো যায় না। বিএনপির বিভাগীয় গণ-সমাবেশের প্রাক্কালেও হাজার হাজার নেতা-কর্মীসহ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতাদেরকে গ্রেফতার করেও গণ-সমাবেশগুলোয় জনজোয়ার ঠেকাতে পারেনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণ-অবস্থান কর্মসূচির প্রাক্কালে সারাদেশে গ্রেফতার, হয়রানি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও লৌহজং উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোক্তার হোসেন খানসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করতে নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশির নামে পরিবার পরিজনের সঙ্গে অসদাচরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এমএইচ/এসএ