ঢাকা: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, বর্তমান সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। দেশে যে গণতন্ত্র নেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের দাওয়াত না পাওয়াই তার প্রমাণ।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের গাড়ি বহরে গুলি বর্ষণ ও হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন।
তিনি বলেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র সম্মেলন হয়েছে। সেই সম্মেলনে এই উপমহাদেশের পাকিস্তান, নেপালও দাওয়াত পেয়েছে। একমাত্র বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি। গত বছরও পায়নি, তার আগের বছরও পায়নি। এতেই প্রমাণ হয় দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রবিহীন একটি রাষ্ট্র চলছে।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, সংবিধান বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, দুদকের চেয়ারম্যান এবং কমিশনাররা অবসর নেওয়ার পর সরকারের লাভজনক পদে নিয়োগ পেতে পারেন কিনা? দুদকের ৯ নম্বর আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, তারা সরকারের কোনো লাভজনক পদে যেতে পারেন না। তারপরও আওয়ামী লীগ দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানকে রাষ্ট্রপতি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই কী কারণে সাহাবুদ্দিন সাহেবকে রাষ্ট্রপতি করা হলো? একটিই কাজ উনি সফলতার সঙ্গে করেছেন। একটি মিথ্যা মামলা তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দিয়েছেন। যে মামলার কোনো ক্লু নেই, যেই মামলায় ওনার (খালেদা জিয়া) সাজা হতে পারে না। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাহেব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দুদকের মামলাটি পরিচালনা করে খালেদা জিয়ার সাজার ব্যবস্থা করেছেন। এই কারণেই আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতারা থাকতেও ৭৫ বছরের দলটি একজন নেতা খুঁজে পেলেন না যাকে রাষ্ট্রপতি করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি করছে, যাকে ঘিরে হাজার প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি আজকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে? আওয়ামী লীগ বলে তারা নাকি রাজপথ থেকে উঠে এসেছে। তাদের এত নেতা থাকতে কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারলেন না। রাষ্ট্রপতি হলেন দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুদক থেকে বিদায় নেওয়ার পর আবার ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর ৩০ দিনে ৩০ হাজার কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংকে থেকে উধাও হয়েছে। সেই ব্যক্তি আবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন। একজন পরিচ্ছন্ন, সৎ রাজনীতিবিদ যদি রাষ্ট্রপতি হতেন, তাহলে আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে সেটি নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকতো। কিন্তু আজকে সেই আলাপ-আলোচনার দরজাটিও শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০ দফা থেকে আমাদের এক দফায় নেমে আসতে হবে। সেই এক দফায় শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এই লক্ষ্যে আজকে দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আদানি গ্রুপকে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা দিয়ে সরকার বিদ্যুৎ কিনেছে। বিদ্যুৎ এলেও তাকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে, না এলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। যে বিদ্যুৎ অন্য জায়গা থেকে কিনলে দাম পড়ত ৫ টাকা, সেই বিদ্যুৎ আদানি থেকে কেনা হয়েছে ১৭ টাকা করে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কীভাবে এই চুক্তি করলো? দেশের মানুষের টাকা এভাবে লুট হয়ে যাবে?
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ওনারা (আ. লীগ) বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জোবাইদা রহমানের দুর্নীতির কথা বলেন। চরিত্র হরণ করার জন্য তারা এটি করে। দূরবীণ দিয়ে খুঁজেও তো তাদের দুর্নীতি পাবেন না।
স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ও তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছারুল হক, কৃষক দলের সহ-সভাপতি ভিপি ইব্রাহীম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির ব্যাপারী, মৎসজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টাা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড