ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সিলেট বিএনপি সম্মেলন

‘চাপের মুখে’ সরে দাঁড়ালেন সেলিমসহ ৪ প্রার্থী

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
‘চাপের মুখে’ সরে দাঁড়ালেন সেলিমসহ ৪ প্রার্থী

সিলেট মহানগর বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন বদরুজ্জামান সেলিম। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতার পক্ষে তৃণমূলের শক্তিশালী নেতৃত্ব পক্ষ নেয়।

কিন্তু প্রার্থী হবেন না জানিয়ে সড়ে দাঁড়ালেন তিনি।

মহানগর বিএনপির কাউন্সিল সভাপতি পদে বদরুজ্জামান সেলিম ছাড়াও ৫ প্রার্থীর আরও দুইজন সরে দাঁড়িয়েছেন।  

তারা হলেন-মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব। মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ দিনে তারাও মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আকতার রশীদ চৌধুরী মনোনয়ন পত্র জমা দেননি।

চাপ সৃষ্টি করে সভাপতি পদে কাউন্সিলে নির্বাচন করা থেকে বদরুজ্জামান সেলিমকে বিরত রাখার অভিযোগ ওঠে।  

বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বদরুজ্জামান সেলিমকে সরাতে নানা তৎপরতা শুরু হয়। স্থানীয় পর্যায়ে তো বটেই, এই পক্ষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা চালান।  

জানা গেছে, গত সোমবার রাতে বদরুজ্জামান সেলিমের বাসায় যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, নগর বিএনপির আসন্ন কাউন্সিলে সভাপতি পদপ্রার্থী নাসিম হোসাইন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল গনি আরেফিন জিল্লুর, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব কাদির শাহী।

ওই সময় সেলিমের বাসায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেন বদরুজ্জামান সেলিমকে। সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়াতে তারা তাকে অনুরোধ জানান। এরপর সম্মেলনে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়ে দেন সেলিম।

দলীয় সূত্র বলছে, মুক্তাদির বলয়ের অনুগত ও পছন্দের প্রার্থী নাসিম হোসাইন হবেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি। তাই বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বদরুজ্জামান সেলিমকে।

অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার বলয়ে মিফতাহ সিদ্দকীকে সভাপতি পদে প্রার্থী করেছেন।  

এ দুই কারণেই মূলত প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন বদরুজ্জামান সেলিম।

বিষয়টি নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকের অভিমত, পছন্দের নেতৃত্বকে আনতে যা কিছু করা প্রয়োজন, তার সবই করা হচ্ছে। তাতে দল শক্তিশালী হলো কিনা, যায় আসে না। বলয় শক্তিশালী হবে, এটাই বড় কথা।

কারণ, মুক্তাদির বলয়ের নাসিম হোসাইনকে নিয়ে নেতাকর্মীর অভিযোগ রয়েছে।

তাদের ভাষ্য, ১/১১’র ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের সময় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নাসিম হোসাইনের দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল। এছাড়া বিএনপির কোনো আন্দোলন সংগ্রামেও মামলার ঘানি টানতে হয়নি তাকে। এ কারণে বদরুজ্জামান সেলিমকেই সভাপতি প্রার্থী হিসেবে পছন্দ ছিল তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

বলা হচ্ছে, শুরুতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও সভাপতি প্রার্থী হিসেবে বদরুজ্জামান সেলিমের পক্ষে ছিলেন। পরে তিনি ইউটার্ন নেন।

তবে এ বক্তব্য অস্বীকার করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, আমি কাউকে দাঁড় করিনি। প্রতিশ্রুতিও দিইনি। মিফতা সিদ্দিকীকেও সভাপতি পদে প্রার্থী করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এদিকে শোনা যাচ্ছে, সভাপতি পদে তৎপর থাকা বদরুজ্জামান সেলিমকে কৌশলে বলি দেওয়ায় ফের রাজনীতির মাঠ থেকে স্বেচ্ছায় সড়ে চিরতরে যুক্তরাজ্য যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

কারণ, ২০১৮ সালে বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান সেলিম সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন। ওই সময়ও নানামুখী চাপে মেয়র পদে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান সেলিম। এরপর যুক্তরাজ্য চলে যান।  

সম্প্রতি দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিএনপির সভা, সমাবেশ, মিছিলে অংশ নেন। মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। মহানগর বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে তার এই সক্রিয় হয়ে ওঠা। সম্মেলনকে সামনে রেখে গত ২১ জানুয়ারি রাতে নগরীর একটি হোটেলে নগর ২৭টি ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে সভাপতি পদে প্রার্থিতার ঘোষণা করেন তিনি।

কিন্তু ফের ২০১৮ সালের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো।

এসব বিষয়ে বিএনপি নেতা কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমের বক্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।  

তবে তার সতীর্থ সহকর্মীরা জানিয়েছেন, চাপের মুখে সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোয় তিনি বিমর্ষ। তার সঙ্গে কথা বলাও যাচ্ছে না। অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় তিনি ফের যুক্তরাজ্য ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই চারজন ছাড়া অন্য প্রার্থীরা মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মহানগর বিএনপির কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশনের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম ফয়েজ উদ্দিন এর কাছে সভাপতি পদে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ শফি সায়ীদ সাহেদ, বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল ফরহাদ, মহানগর বিএনপির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দ সাফেক মাহবুব মনোনয়ন পত্র জমা দেন।

এবারের নির্বাচনে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ৭১জন করে কমিটির প্রত্যেককে ভোটার রাখা হয়েছে। কাউন্সিল ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম ফয়েজ উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এনইউ/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।