নারায়ণগঞ্জ: ‘তোরা ভাত খাইতে পাস না, আবার দামি মোবাইল পাইলি কেমনে?’ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর এ মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাইরাল। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে নাসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আন্দোলন শুরু করলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইভীর এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন, আইভীর ‘ভাত খাইতে ভাত পাস না’ মন্তব্য দেশের বর্তমান দুরবস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি যেভাবেই হোক এ সত্য তুলে ধরেছেন।
বুধবার (১৫ মার্চ) আইভীকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার করা তার মন্তব্য ভাইরাল হয়। তিনি শুধু মন্তব্য করেই ক্ষান্ত থাকেননি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ দায়িত্বরতদের চাকরি থাকবে না বলেও হুমকি দেন। এ সময়কার একটি ভিডিও ভাইরালও হয়।
মেয়র আইভীর বিপক্ষে সর্বশেষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এ সরকারের আমলে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, হোটেল রেস্তোরাঁয় যেভাবে দাম বেড়েছে সেখানে ভাত না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। পেট ভরে ভাত খাওয়া তো পরের কথা, তিন বেলা ভাত খাওয়া নিয়েই দুশ্চিন্তায় এদেশের সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ। সাধারণ মানুষ যে ভাত খেতে ভাত পায় না- এটা আইভীর মন্তব্যে পরিষ্কার। এখন সুখে আছে তারা, যারা সরকারের ছত্রছায়ায় লুটপাট করতে পারছে, তারা পেট ভরে ভাতও খেতে পারে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের এমন খারাপ অবস্থা হয়েছে, এখন জনগণ সংসার চালাতে হিমশিম খায়। নায্যমূল্যের চাল কিনতে অনেক মধ্যবিত্তও সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে থাকে। মানুষের আয় বাড়েনি; কিন্তু দ্রব্যমূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎ গ্যাসের দামও চরমভাবে বেড়েছে। এ কারণে কেউ এক বেলা, কেউ না খেয়ে চলছে; নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা দুর্দশার কথা লজ্জায় বলতেও পারে না। মেয়রের এমন মন্তব্যে দেশের দুর্ভিক্ষের অবস্থা প্রমাণিত হয়। আর এ সত্য মন্তব্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আইভীর এ বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। তিনি সত্য কথা বলেছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এ আন্দোলন আমাদের ১০ দফা আন্দোলনের সাথে মিলে যায়। কারণ, দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে হাহাকার পরিস্থিতি চলছে। আইভী এ কথা বলে প্রমাণ করেছেন তারা অভাবে আছেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগরভবনের সামনে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বেলা ১১টা থেকে প্রায় ৫ শতাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নগর ভবন ঘেরাও করে। তারা বাড়িঘরের ময়লা-আবর্জনা নগর ভবনের বাইরের উঠানে ফেলে রাখেন। এছাড়া নগর ভবনে রাখা নাসিকের কর্মকর্তাদের গাড়িতেও ময়লা নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা।
ঘটনার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে মেয়র আইভী নগর ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। এ সময় তিনি আন্দোলনরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে বলেন, তোরা ভাত খাইতে পাস না, আবার দামি মোবাইল পাইলি কেমনে? তোমরা অস্থায়ী, বাংলাদেশ সরকার তোমাদের চাকরি স্থায়ী করে নাই। আমার মন চাইলে তোমাদের রাখতে পারি, মন না চাইলে রাখমু না। তোমাদের এখানে ময়লা ফেলার দুঃসাহস কে দিল?
এমন পরিস্থিতিতে নগর ভবনে গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে সেখানেও ক্ষুব্ধ হয়ে যান মেয়র আইভী। সাংবাদিকদের তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে এমন কী হয়েছে যে আসতে হবে?
জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল দাস ও সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন আইভী। পরে পরিস্থিতি আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে সেখান থেকে দৌড়ে কার্যালয়ে অভ্যন্তরে পালিয়ে রক্ষা পান কনজারভেন্সি সুপারভাইজার শ্যামল চন্দ্র পাল ও মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এমআরপি/এমজে