ঢাকা: বর্তমান সরকার দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে অভিযোগ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার দেশ ও স্বাধীনতা নিয়ে তামশা করছে।
শনিবার (১ এপ্রিল) সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন।
প্রতিবাদ সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমানে এমন একটি সরকার ক্ষমতায় আছে, যারা ক্ষমতায় থাকার জন্য, দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব সবকিছু ব্যবহার করার জন্য সমস্ত তৎপরতাকে নিয়োজিত করেছে। একটি সরকার কতটা নির্লজ্জ হলে, তার পায়ের তলার মাটি সরে গেলে, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে জনগণের উপর আইন দিয়ে, রাষ্ট্র শক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে? এদের লজ্জা, হয়া বলে কোনো কিছু নেই। পুরো রাষ্ট্র ও আইন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করে তারা এটাকে পরিচালনা করছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল, এই রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। তার মানে এই রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি করবে৷ অর্থনৈতিক ও আদালতের দিক থেকে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। ধনী, গরীব, বাঙালি, অবাঙালি, হিন্দু, মুসলিম, নারী, পুরুষ সবার জন্য সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে৷
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ যখন খেতে পারে না, তখন তার কাছে স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে, পেট ভরে খেতে পারা৷ যখন এই দেশে মানুষ বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারে না, তখন তাকে আওয়ামী লীগের লোকেরা শোনাচ্ছেন পাকিস্তানে নিত্যপণ্যের কত দাম, আর বাংলাদেশে কত দাম। পাকিস্তানে বেশি দাম হলে আমার পেটে কি ভাত জুটে যায়? পাকিস্তানের থেকে আমরা ভালো আছি, কাজেই আমাদের পেটে যে ভাত নেই, বাজারে গিয়ে যে ৯০ ভাগ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে এই কথা বলা যাবে না৷
গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেদের আমরা বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম। কিন্তু তারা এখন যেভাবে কথাবার্তা বলেন, বাজার পরিস্থিতির খারাপ অবস্থা যুক্তিযুক্ত করার জন্য যেভাবে পাকিস্তানের উদাহরণ দেন, তাতে আমরা বিস্মিত। দেশের মানুষের জীবনের সংকট আছে, আয় অনুযায়ী সংকট আছে, জনগণ বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থার এই সংকটের পেছনে সিন্ডিকেট দায়ী, দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার দায়ী। সরকার এগুলো নিয়ে চিন্তা না করে মানুষ ও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে চায়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ মানেই সংবাদ মাধ্যমের গলা টিপে ধরা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই সরকারের তথ্যমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলে সব কিছু জায়েজ করতে চায়। তারা বলে এটা নাকি স্বাধীনতার ভিত্তিতে আঘাত। এতো সহজেই স্বাধীনতার হুমকিতে পড়ে? বরং সরকারই ভয় ভীতি দেখিয়ে স্বাধীনতা হুমকিতে ফেলছেন। যেই সরকার জনগনকে সমস্যায় রাখে তারা স্বাধীনতার সরকার হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ভোটবিহীন সরকার তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নানা সময়ে নানা কথা বলে। তারা এখন নির্বাচনে হারবে বিধায় সব ধরনের নির্বাচন ভয় পায়। তারা বলে তারা নাকি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এগুলো মিথ্যা কথা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে চায়। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে দিয়ে বাকি সবাইকে শিক্ষা দিতে চায়। আসুন সবাই মিলে তাদের ভয় ভেঙে ফেলি, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই।
এ সময় তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সরকারকে গলায় গামছা বেঁধে নামানোর আন্দোলন শুরু হয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গনসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, পপি রানী সরকার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৩
এসসি/এসএ