ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ব‌রিশাল সি‌টি নির্বাচন বর্জ‌নের ঘোষণা ডা. মনীষার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
ব‌রিশাল সি‌টি নির্বাচন বর্জ‌নের ঘোষণা ডা. মনীষার

বরিশাল: আগামী ১২ জুন অনু‌ষ্ঠেয় ব‌রিশাল সি‌টি কর‌পো‌রেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ব‌রিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি রোডের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, নিয়ম রক্ষার জন্য আবারও বরিশালসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তি‌নি ব‌লেন, নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ রাজনৈতিক বক্তব্য ও ব্যক্তি দুটোই যাচাই করে এবং ভোট দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা এবং সংস্কৃতি-মূল্যবোধ না থাকলে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ে পড়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর জনগণের ওপর দুঃশাসন চালাবার আইনি অনুমোদন নেওয়া মাত্র। গত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও তার পরে কথিত নির্বাচিত ব্যক্তির ভূমিকা দেখে এটা বিশ্বাস করতে কারো পক্ষেই কষ্টকর হবে না।  

তি‌নি আরও ব‌লেন, আমাদের দল বাসদের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল ও আমি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই জনগণের অধিকার নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করার কারণে বরিশালবাসীর স্নেহ, ভালোবাসা ও আস্থার প্রার্থী হিসেবেও বিবেচিত হয়েছিলাম। নির্বাচন এলে টাকা ছড়িয়ে দরিদ্র মানুষদের ভোটের কর্মী বানানো  এবং ভোট কেনাবেচার যে জঘন্য কার্যকলাপ চলে আমরা তার বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার ছিলাম, তেমনি এর বিপরীতে জনগণের অর্থে জনগণের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের শুদ্ধ রেওয়াজ বা প্রথা চালু করার সংগ্রাম করেছিলাম। এর অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি মাটির ব্যাংক সরবরাহ করে সেই ব্যাংকে জমানো টাকা সংগ্রহ করে আমরা নির্বাচনের প্রাথমিক তহবিল সৃষ্টি করেছিলাম। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতার আবেদন করেছিলাম এবং স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা পেয়েছিলাম। ফলে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া তৈরি করেছিল। কিন্তু আপনারা দেখেছিলেন গত নির্বাচনের দিন সকাল থেকে সমস্ত কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল। সাধারণ মানুষ যখন এ দৃশ্য দেখে হতবাক ও হতাশ তখন এ জঘন্য ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে কেন্দ্রে  আমরাই রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। আমিসহ আমাদের কর্মী ও এজেন্টরা ক্ষমতাসীন দলের হামলার শিকার হয়েছিলাম। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া হাতেনাতে ধরেছিলাম। নির্বাচনের সার্বিক অনিয়মের চেহারা দেখে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার প্রয়াত মাহবুব তালুকদার নির্বাচন বন্ধের সুপারিশ করেছিলেন এবং নির্বাচন বন্ধ না হওয়ায় তিনি নির্বাচন শেষ না করেই ঢাকা চলে গিয়েছিলেন। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী দেখেছে- সকাল ৯টার মধ্যে ভোট ডাকাতির নির্বাচন উন্মোচন হওয়া, মেয়রপ্রার্থী হিসেবে হামলার শিকার হওয়া এবং দুপুরের মধ্যে আওয়ামী লীগ ব্যতিত সব প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও নির্বাচন বন্ধ হয়নি এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট ডাকাতিতে যুক্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ন্যুনতম কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি নিকৃষ্ট নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। নির্বাচনের পর আমাকে নানাভাবে হয়রানি, আমাদের দলের ওপর নানা ধরনের হামলা, আমাদের পার্টি অফিস নিয়ে হয়রানি করা, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা, আমাদের শ্রমিক সংগঠনের ওপর উপর্যুপরি নিপীড়নের ঘটনাও আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন।  

তি‌নি ব‌লেন, শুধু সিটি করপোরেশন নির্বাচনই নয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনেও দেশবাসীসহ আমরা প্রহসন ও প্রতারণা দেখেছি।

মনীষা ব‌লেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসবের ফলাফল জনমনে হয়েছে নেতিবাচক। জনগণ ক্রমাগত নির্বাচনগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যা বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের উপনির্বাচনগুলোতেও বেশিরভাগ জায়গায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৩০ শতাংশের কম, এমনকি ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ ও ১৪ শংতাশ যা এ নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের অনাস্থারই পরিচায়ক। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, কোনো প্রতিষ্ঠানই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, ফলে নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করবে সে আশা দুরাশা ছাড়া কিছুই না।  

তিনি ব‌লেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নিলেও আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিচল থাকবো। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জিতি বা হারি জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী হবে জনগণের সেই প্রত্যশাকে আমরা ধারণ করে জাতীয় ও স্থানীয় সব পর্যায়ে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি নিয়ে লড়াই করে যাব, এ প্রতিশ্রুতি আমরা বরিশালবাসীকে দিচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।