ঢাকা: ৫৪ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল উদ্দিন ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়ন চাচ্ছেন।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাসানটেক থানার ১৫, ১৮, ১৯, ২০ ও ৯৫ নং ওয়ার্ড এবং ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন।
এটি দেশের ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত। এখানে কূটনৈতিক এলাকা এবং সেনানিবাসের অবস্থান হওয়ায় আসনটি রাজনীতিবিদদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। দীর্ঘ সময় থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংগঠিত করে রেখেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. ওয়াকিল উদ্দিন।
এ আসনের সংসদ সদস্য চিত্র নায়ক ফারুকের ইন্তেকালের পর আসনটি শূন্য হয়। আর শূন্য এ আসনের নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করছেন ওয়াকিল উদ্দিন।
তিনি জানান, এলাকার জনসাধারণসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঢাকা-১৭ আসনে তাকেই এবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছেন। সাধারণ ভোটারদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন।
এক নজরে ওয়াকিল উদ্দিনের রাজনৈতিক জীবনঃ
ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ওয়াকিল উদ্দিনের। ১৯৬৯ সালে এস.এস.সি পাশ করার পর তেজগাঁও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় গুলশান থেকে বিশাল লাঠি মিছিলসহ জনসভায় যোগদান করেন ওয়াকিল উদ্দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নির্দেশে এবং পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং সম্পন্ন করে সশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে খণ্ডকালীন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ বৃহত্তর গুলশান থানার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে আওয়ামী লীগ করার অপরাধে তার বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়, না পেয়ে তার বাড়ি-ঘরও ভাঙচুর করে বিপথগামীরা।
১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকারের অধীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ৯৩-৯৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রোষানলে পড়ে প্রায় ২৫টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হন। ৯৩-০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসাবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩-৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে ফের রাজপথে সক্রিয় হন। ২০০৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১২-২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাত জোট দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগ চালালে সে সময় ঢাকা-১৭ আসনাধীন এলাকায় তার নেতৃত্বে বিএনপি- জামায়াতের সব রাজনৈতিক অপতৎপরতা প্রতিহত করেন বলে জানান তিনি।
২০১৭ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
রাজনীতির পাশাপাশি ওয়াকিল আহমেদ ব্যবসায়িক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এছাড়াও সমাজসেবী হিসেবেও তার নাম রয়েছে এলাকাজুড়ে। ওয়াকিল আহমেদ স্বদেশ প্রপার্টিস লিমিটেড ও স্বদেশ গ্লোবাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বারিধারা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক।
সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদানঃ
সামাজিক কর্মকাণ্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল আহমেদের অবদান অসামান্য। ঢাকা-১৭ (গুলশান, বনানী, ভাষানটেক ও ক্যান্টনমেন্ট) নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় অবকাঠামো উন্নয়ন, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা প্রতিষ্ঠাসহ গরিব-দুঃখীদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা ও কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা করে উক্ত এলাকার জনগণের আস্থা ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে তার সুনাম রয়েছে।
১৯৮৩-৮৮ সাল পর্যন্ত সাবেক ঢাকা মিউনিসিপাল করপোরেশনের ৭৫ নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় খিলক্ষেত থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত এলাকার মানুষের সুবিধার্থে পানি ও পয়ঃনিষ্কাষন ব্যবস্থা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগসহ ১৫টি পানির পাম্প স্থাপন করেন, যার ফল এলাকার জনগণ এখনও ভোগ করছে। একজন সফলতম কমিশনার হিসাবে জনগণের দেওয়া দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন।
কথা হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল আহমেদ জানান, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের প্রতি শতভাগ আনুগত্য থেকে, ত্যাগ স্বীকার করে এখন পর্যন্ত দলের হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আর এ কারণে তিনি দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন এবার দল তাকে নিরাশ করবে না। তারপরও দলের হাইকমান্ড যার প্রতি আস্থা রাখবে তার হয়েই তিনি কাজ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
এমকে/জেডএ