ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

২৭ জুলাই ঢাকা দখলে রাখতে চায় আ. লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
২৭ জুলাই ঢাকা দখলে রাখতে চায় আ. লীগ

ঢাকা: দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক জমায়েত নিয়ে আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীসহ এর আশপাশে অবস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একই দিন ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ রয়েছে।

এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলটি রাজধানীতে সন্ত্রাস, সহিংসতার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে বলে শঙ্কা আওয়ামী লীগের। সেই শঙ্কা থেকেই এ ধরনের প্রস্তুতি।

বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুব লীগ ঢাকায় শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। যুবলীগের সঙ্গে যৌথভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগও অবস্থান নেবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগসহ দলের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও মাঠে রাখার প্রস্তুতি চলছে।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে এদিন লক্ষাধিক নেতাকর্মী-সমর্থক মাঠে রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক মতবিনিময় সভায় ডাকা হয়েছে। এই সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ২৭ জুলাই আমরাও মাঠে থাকব। কেউ যাতে কোনো সমস্যা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) বসে আমরা সব ঠিকঠাক করে দেবো। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংসগঠনগুলোর যে মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে, সেই সভায় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, শেখ হাসিনার সরকার হটানো এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করাই বিএনপির মূল উদ্দেশ্যে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সে লক্ষ্যে যেতে পারবে না। কারণ তারা যে এক দফা দাবি দিয়েছে, এতে জনগণের কোনো সমর্থন নেই। এ জন্য দলটি বিশৃঙ্খলার তৈরির সুযোগ খুঁজছে। আগামী ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তারা (বিএনপি) যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

এ ছাড়া সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিতে পারে বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। তাদের মতে, বিএনপির লক্ষ্যই এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। তারা সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা রাস্তায় অথবা ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান নিতে পারে। এসব আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগও ঢাকাসহ ঢাকার আশপাশে সতর্ক অবস্থান নেবে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীদেরও সতর্ক অবস্থান নিয়ে মাঠে রাখা হবে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি কর্মসূচি দিয়েই মাঠে নেমে বিএনপি হামলা করছে। ওই দিন মিরপুরে হামলা করেছে, বগুড়ায় করেছে, চট্টগ্রামে করেছে। তারা ইচ্ছা করে সংঘর্ষ ঘটাচ্ছে, সহিংসতা সৃষ্টি করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন বানচাল করা, গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা। তারেক রহমানের নির্দেশে বিদেশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই বিএনপি এসব করছে। আমরা শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে চাই। যুবলীগ তারুণ্যের সমাবেশ ডেকেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্র লীগসহ অন্য সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে।  

এদিকে তারুণ্যের জয়যাত্রা নাম দিয়ে যুবলীগ এদিন যে সমাবেশ করতে যাচ্ছে, তাতে ব্যাপক যুব সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। এই দিনের সমাবেশে যুবলীগ তাদের জমায়েতের সক্ষমতা ও সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে বলে সংগঠনের নেতারা বলছেন। যুবলীগের সমাবেশটি সোমবার (২৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই নেওয়া হয়েছে। আর এর উদ্দেশ্য বিএনপির যেকোনো নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা প্রতিহত করা বলে যুবলীগ নেতারা জানান।  

ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে অংশ নেবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বাংলানিউজকে বলেন, সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা আগামী ২৭ জুলাই শান্তির সমাবেশ করবো। তাদের যেকোনো নৈরাজ্যের চেষ্টা প্রতিহত করতেই আমাদের এ সমাবেশ।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগও ওই দিন ব্যাপক জমায়েত দিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগঠন দুটিও ব্যাপক জমায়েত নিয়ে যুবলীগের সঙ্গে যৌথ সমাবেশ করবে। সোমবার যুব লীগের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান লিখিল এ কথা জানান।

আওয়ামী লীগের অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবেন বলে জানা গেছে। রাজধানীকে দলের নেতাকর্মীদের দখলে রাখতে এই সংগঠনগুলোকে ব্যাপক জমায়েত নিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় এসব সংগঠনের করণীয় বিষয়ে যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে, নেতাকর্মীরা সেভাবেই সতর্ক অবস্থান নেবেন বলে সংগঠনগুলোর সূত্র থেকে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
এসকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।