ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচন ও আন্দোলন মোকাবিলায় দলের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আ.লীগের

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩
নির্বাচন ও আন্দোলন মোকাবিলায় দলের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আ.লীগের

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন এবং বিরোধী দলের আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ কারণে দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।

 

এরই অংশ হিসেবে রোববার (৬ আগস্ট) অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা। এই সভায় দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয় আ.লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করেছে। তারা নির্বাচনে আসবে, কি আসবে না এ বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও বিএনপি অংশ নেবে এটা ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আ.লীগ।  

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা ওই নির্বাচন বানচাল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। ইতোমধ্যে সে ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। এ ক্ষেত্রে আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। আর এই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে দলের রাজনৈতিক শক্তিকেই সব থেকে বেশী গুরত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন।  

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে এই রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এ সব বিষয়ে দলের বর্ধিত সভায় আ.লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের গুরত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন বলে ওই নীতিনির্ধারকরা জানান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সামনে নির্বাচন, এ ব্যাপারে আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিক নির্দেশনা দেবেন। বিএনপি এক দফা নিয়ে মাঠে নেমেছে এ ব্যাপারেও তিনি সতর্ক থাকতে বলবে। ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব দেবেন বলে মনে করি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কারো কারো মধ্যে দল ও সংগঠনের প্রতি গা ছাড়া ভাব রয়েছে। আবার ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিজের প্রভাব খাটাতে গিয়ে কেউ কেউ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নেতা, মন্ত্রী, এমপিদের কেউ কেউ এই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। আভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি করেছে। বিগত সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে এই বিরোধ আরও জোরালো হয়েছে।  

দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া ও দলের নির্দেশ অমান্য করে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অনেকে অবস্থান নিয়েছে। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সেটা দেখা গেছে। আবার দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দুই গ্রুপের প্রকাশ্য সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে যেমন রয়েছে পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন একটি আরেকটির বিরুদ্ধে আবার একই সংগঠনের ভেতরে গ্রুপিং দ্বন্দ্ব রয়েছে। গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশ শেষে ফেরার পথে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়।  

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মধ্য রাতে ঝালকাঠিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১৫ জনের মতো আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যেই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আভ্যন্তরীণ এ সংকট নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত। ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এই আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সমস্যা তৈরি করবে বলে তারা মনে করছেন। এ কারণে বিদ্যমান সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলার ওপর তারা জোর দিয়েছেন। এ বিষয়কে সামনে রেখেই দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  

এই সভায় আ.লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নেবেন।

এ বিষয়ে কাজী জাফরউল্লাহ আরও বলেন, দলের সভাপতি তৃণমূলের সব নেতাদের, জেলা, উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের ডেকেছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার নির্দেশ দেবেন তিনি। আমরা দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। আসলে এক এক জাগায় ১০ জন, ২০ জন করে প্রার্থী আছে। এ কারণে  সমস্যাগুলো তৈরি হয়। তবে দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যাতে না থাকে সে বিষয়ে দলীয় সভাপতি শক্ত নির্দেশনা দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩
এসকে/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।